ভারতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে হয়তো বিতর্ক চালু থাকবে,তবে এটা একেবারেই সত্যি আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তে এই আইনের কারণেই চাঞ্চল্য অভূতপূর্বভাবে বেড়ে গেছে । সাম্প্রতিক বছরগুলিতে প্রচুর বাংলাদেশি যারা আসাম ও বাংলায় এসেছেন, তারা যে কোনও মূল্যে তাদের দেশে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন । অপরদিকে গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট অনুসারে, গত এক বছরে বৈধ কাগজপত্র ও পাসপোর্ট নিয়ে ভারতে আসা প্রায় পাঁচ হাজার বাংলাদেশী নিখোঁজ রয়েছে। আইবি তাদের সম্পর্কে ইমিগ্রেশন, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এবং সীমান্তে কর্মরত অফিসারদের কাছ থেকেও তথ্য জানার চেষ্টা করে, তবে তাদের সম্পর্কেও কোনও মহলেই কোনও তথ্য নেই। ঐ পাঁচ হাজার বাংলাদেশীর খোঁজ কোনো ভাবেই যোগাড় করতে পারে নি সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা দপ্তরগুলি। তারা যেন কর্পূরের মতো হাওয়াতে মিলিয়ে গেছে ।

আসামের মুখ্য সচিব কুমার সঞ্জয় কৃষ্ণার কাছেও এ সম্পর্কে কোনও তথ্য নেই। তিনি বলেছেন, কত বাংলাদেশী ফিরে গেছে সে সম্পর্কে সরকারের কাছে কোনও তথ্য নেই। অন্যদিকে, আসামের অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা দাবি করেছেন যে ২০১৪ সালে মোদী সরকার আসার পর থেকে আসামে একটিও বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ ঘটেনি। বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (দক্ষিণ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার) আইজি ওয়াইবি খুরানিয়া এটি নিশ্চিত করেছেন এবং বলেছেন যে বিএসএফ এই জাতীয় ২৬৮ জনকে সীমান্ত পেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে দেখেছে। এ ছাড়া বনগাঁও-পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের বর্ডার গার্ড অব বিজিবিও ৬০ জনকে সীমান্ত অতিক্রম করার সময় ধরে এবং বাংলাদেশের হাতে সোপর্দ করে ।

জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের শুরুতেও বিজিবির প্রধান, মেজর জেনারেল শফিনুল ইসলাম দিল্লিতে বলেছিলেন যে, ডিসেম্বরে ৪৪৫ জন বাংলাদেশী ভারত সীমান্ত পার করে দেশে ফিরেছে। এই লোকেরা যে কোনও মূল্যে ভারত থেকে তাদের দেশে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। বিএসএফের (মেঘালয় ফ্রন্টিয়ার) আইজি কুলদীপ সায়নীও সম্প্রতি নিশ্চিত করেছেন যে আসামে এনআরসি কার্যকর হওয়ার পরে সম্প্রতি অবৈধভাবে ভারতে আসা কিছু অবৈধ বাংলাদেশী নাগরিক ফিরে গেছেন।

সায়নীর মতে , বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উন্নতির লক্ষণগুলিও প্রত্যাবর্তনের কারণ হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। অন্যদিকে বিএসএফ কর্মকর্তারা আরও বলছেন যে ভারতে আসা অবৈধ বাংলাদেশীদের প্রত্যাবর্তনের হার গত এক মাসে তীব্র হয়েছে ।

খুরানিয়া বলেছেন, একমাত্র জানুয়ারিতে এখন পর্যন্ত ২৬৮ জন বাংলাদেশীকে তাদের দেশে ফেরার চেষ্টা করতে দেখা গেছে । অন্যদিকে, আসামের বঙ্গাইগাঁও এর একটি বিএসএফ কর্মকর্তা বলেছেন যে এনআরসির ভয়ে গত পাঁচ থেকে ১২ বছর ধরে এদেশে বসবাসরত বাংলাদেশীরা ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। এর মধ্যে দু’জনের কাছ থেকে ভারতীয় আইনি কাগজপত্রও পাওয়া গেছে। বিএসএফ এই কাজে লিপ্ত তিন দালালকেও গ্রেফতার করেছে, যারা তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত দাবী করতো। প্রসঙ্গত, আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম এবং ত্রিপুরা সংলগ্ন বাংলাদেশ সীমান্তের কিছু অংশ এখনও বেড়া ছাড়াই রয়েছে এবং সেখান থেকে সর্বদা অবৈধ চলাচলের ঝুঁকি রয়েছে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.