অভিনব উদ্যোগ, নিজের লেখার পিডিএফ বিক্রি করে দশ লক্ষ টাকা ত্রাণ তহবিলে দিলেন এই লেখক

কে বলেছে নতুন প্রজন্ম বই পড়ে না? তাই যদি হত তাহলে কি মাত্র তিন মাসে লেখালিখি করে, সেই লেখার পিডিএফ বিক্রি করে দশ লক্ষ টাকা ত্রাণ তহবিলে দিতে পারতেন অভীক দত্ত? যাঁরা নেটদুনিয়ায় ঘোরাফেরা করেন আর নতুন লেখকদের বই পড়েন, তাঁদের কাছে অতি পরিচিত নাম অভীক(অর্জুন) দত্ত। সম্প্রতি এক অনন্য কীর্তি করে ফেলেছেন তিনি। শুধুমাত্র বাংলা ভাষায় লেখালিখি করে, নিজের সেই লেখার পিডিএফ বিক্রি করে করোনা চিকিৎসা ও আমফানে বিধ্বস্তদের জন্য তৈরি তহবিলে পাঠিয়েছেন দশ লক্ষের বেশি টাকা। পাশে দাঁড়িয়েছেন আমফান বিধ্বস্ত বই পাড়া কলেজ স্ট্রিটের। এমনকী, দুই নিম্নবিত্ত পরিবারের ক্যান্সার আক্রান্তকে সাহায্য করেছেন তিনি।

পেশায় কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু নেশা লেখালিখি করা। সেই নেশার টানে ফেসবুকে লেখালিখি শুরু। ফেসবুক পেজ, পেইড হোয়াটস গ্রুপ ছাড়িয়ে ছাপার অক্ষরেও রমরমিয়ে বিক্রি হয় তাঁর ব্লু ফ্লাওয়ার (১,২,৩), অনিন্দ্য, শুভম সমগ্রর-এর মতো একাধিক বিভিন্ন স্বাদের গল্পের বই। সেখান থেকে আয়ও মন্দ নয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে সমস্তটাই বদলে গেছে। কাজহারা হয়েছে বহু মানুষ। নিজের সাধ্যের বাইরে গিয়ে আমজনতার পাশে দাঁড়ালেন বহু মানুষ। শুরু হল কমিউনিটি কিচেন। সেই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতেই অভিনব পন্থা নিলেন অভীক। বাঙালির গল্প পড়়ার নেশাটাকে হাতিয়ার করলেন তিনি। শুরু করলেন নিত্যনতুন গল্প লিখতে। সঙ্গে পুরনো বইগুলির পিডিএফ তৈরি করলেন। আর ডিজিটাল মাধ্যমে পাঠকদের সেই লেখার নেশা ধরিয়ে ত্রানের জন্য অর্থের জোগার করতে শুরু করলেন। এই উদ্যোগ থেকে প্রথম আয় ৩২ হাজার টাকা পাঠালেন রাজ্যে সরকারের ত্রাণ তহবিলে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনীতে পাঠালেন এক লক্ষেরও বেশি টাকা। ভারত সেবাশ্রম, হার্ট ফাউন্ডেশন, লিভার ফাউন্ডেশনের মতো ১৫০টি সংগঠনের তহবিলেও পাঠানো হল মোটা টাকা। বিভিন্ন সংগঠন ছাড়াও দুই ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসায় মোট দুলক্ষ টাকা দিলেন তিনি।

হঠাৎ কেন এমন উদ্যোগ নিলেন অভিক দত্ত (Abhik Dutt)। জিজ্ঞেস করতে বললেন, “লকডাউনে বই পড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল মানুষের। একটা উপায় তো বের করতেই হত মানুষকে পড়ানোর জন্য। তারপর মনে হয়েছিল পিডিএফ বিক্রি করার কথা। লকডাউনের ফলে বহু মানুষ কর্মহীন। শ্রমজীবী মানুষদের পেটে ভাত নেই। তাদের জন্য বিভিন্ন জায়গায় কমিউনিটি কিচেন শুরু হয়েছে। সেখানে টাকা পাঠানোর কথা মাথায় এসেছিল। তারপরই এই কর্মকাণ্ড।” ফেসবুকে নিরন্তর আবেদন জানিয়েছেন মানুষকে। এমনকী, লকডাউনের মাঝে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার কথা মাথায় রেখে মাত্র ২০ টাকা মূল্যেরও পিডিএফ এনেছেন অভীক। তারপরেও তাঁকে নিয়ে সমালোচনার শেষ নেই। সে সব কথায় অবশ্য কান দিতে নারাজ অভীক। বলছেন, ‘কুছ তো লোগ কহেঙ্গে’। এখানেই থামছেন না তিনি। জানিয়েছেন চলতি বছরে লেখা থেকে যা আয় হবে, তার সবটাই যাবে ত্রাণ তহবিলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.