বিশেষ প্রতিনিধি, দত্তপুকুর, ২ জানুয়ারি
দত্তপুকুরে অশান্তির জন্য অনুপ্রবেশকারীদেরই দায়ী করল বিশ্বহিন্দু পরিষদ।
গত মঙ্গলবার একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্র ২৪ পরগনার দত্তপুকুরের পরিস্থিতি এখনও থমথমে। সূত্রের খবর, লোকনাথ মেলাস্থলে, হাটখোলায় দুষ্কৃতীদের দোকান ভাঙচুর, মারধরের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিড়ায় ১৪৪ ধারাকে উপেক্ষা করে বিজেপির মিছিল ঘিরে চাঞ্চল্য দেখা দেয়।
এদিকে এই ঘটনায় তিন জন গ্রেফতার হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এদিনও গুজব ছড়ানোর আশঙ্কায় বসিরহাট পুলিশ জেলার সীমানা পর্যন্ত ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়। এরই মধ্যে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের রাজ্য সম্পাদক ও স্থানীয় বাসিন্দা অলোক সুরের দাবি, এই অশান্তির পিছনে রয়েছে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা।
অলোকবাবু বলেন, লোকনাথ মেলা ও দত্তপুকুর হাটে হামলা করেছে নরসিংহপুর ও নতুন রাস্তার কাছে থাকা বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা। ওই এলাকায় ওদের দাপটে রাত্রি সাতটার পর কেউ ঢুকতে পারে না। তিনি আরও বলেন, এই ঘটনার পর গ্রেফতারের ভয়ে এলাকা পুরুষশূন্য হয়ে গিয়েছে। এই ঘটনায় আপাতত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে খুন, নাকি ভাঙচুর-হামলার ঘটনার অভিযোগে এই গ্রেফতার, তা জানা যায়নি।
মৃত ব্যবসায়ী আসাদুল হকের মৃত্যুর কারণ নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা। মেলায় মণিহারির দোকান দেওয়া আসাদুলের জনৈক মহিলাকে কটুক্তি করার অভিযোগ যেমন সামনে এসেছে, তেমনই এও শোনা যাচ্ছে যে, মেলার দোকানের টেন্ডার নেওয়া আসাদুলের সঙ্গে স্থানীয় ক্লাব প্রগতি সংঘের টাকা নিয়ে গন্ডগোলের কথাও। বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ উঠেছে দত্তপুকুর ২-এর উপপ্রধান এবং মেলা কমিটি ও প্রগতি সংঘ ক্লাবের সম্পাদক তৃণমূল নেতা মান্তু সাহার দলবলের বিরুদ্ধে।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের রাজ্য সম্পাদক অলোক সুরের বক্তব্য, ‘যাই হোক না কেন, তা নিয়ে লোকনাথ মন্দির, মেলা আর হাটখোলায় দোকান ভাঙচুর করে পোড়ানো হল কেন? শুধু তাইনয়, সাধারণ মানুষ, যাঁরা মেলায় এসেছিলেন এবং হাটখোলার ব্যবসায়ীদের মারধর কেন করা হল? প্রশাসন কেন সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে পারল না? দীর্ঘক্ষণ ধরে যশোর রোড অবরোধ, রেল অবরোধ চলল কী করে? এই ঘটনার আমরা তদন্ত চাই।
দত্তপুকুরের নরসিংহপুর মসজিদপাড়ার মৃত আসাদুলের স্ত্রীর নাম রৌশনারা বিবি। এক ছেলে আছে, অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। আসাদুলের ভাই মাসুদ আহমেদ জানান, “ওইদিন কী হয়েছে জানি না। শুনলাম দাদাকে মারছে। আমরা ক্লাবে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। পরে শুনলাম দাদা ক্লাবের ভিতরে মৃত অবস্থায় পড়ে আছে।
মাসুদ আরও বলেন, ‘লোকনাথ মেলায় আসাদুল ২ বছর ধরে মণিহারির দোকান দেয়। বাবা আবর আলি বেঁচে নেই। দাদার মৃত্যুতে মামলা হয়েছে কিনা জানি না। চারিদিকে যা শুনছি, তাতে ভয়ের কারণ তো থাকবে। শুনলাম দাদার মৃত্যুর পর নাকি আরও কিছু ঘটনা ঘটেছে।
বাড়ির কোনও লোক রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন বলে জানিয়ে মাসুদ বলেন, ‘আমরা চাই শান্তি। সকলে শান্তিতে থাকুক।’
এদিকে এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বারসত-১ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ইছাহক সরদার। তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই বিডিও অফিসে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের আধিকারিকরা ক্ষয়ক্ষতির হিসাব কষছেন। দত্তপুকুরে বিভিন্ন মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে এলাকায় শান্তি বজায় রাখার আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি শুক্রবার এলাকার সব দোকানপাট খুলে যাবে।
2020-01-03