এ কোন রাজনীতি, নুসরৎ প্রসঙ্গে প্রশ্ন নেত্রীদেরই


অশোক সেনগুপ্ত

নিখিল জৈনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে মুখ খুললেন নুসরত জাহান। বিবৃতি দিয়ে তিনি দাবি করেছেন, নিখিলের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কে নয়, ছিলেন লিভ-ইন রিলেশনে। ফলে বিবাহ বিচ্ছেদের প্রশ্নই ওঠে না। যদিও লোকসভায় সরকারিভাবে জানিয়েছেন তিনি বিবাহিতা। এবং স্বামীর নাম নিখিল জৈন।

এই ঘটনায় রাজনীতির সক্রিয় নেত্রীরা অনেকেই বিস্মিত। এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় যুগ্ম সম্পাদক তথায়জেএনইউ-এর নেত্রী দিপ্সিতা ধর এই প্রতিবেদককে বলেন, “আমরা তো এজিনিস ভাবতেই পারিনা। প্রত্যেকের জীবনে একটা ব্যক্তিগত পরিসর আছে। সেই অধ্যায়টাকে সম্মান দিয়েও বলছি, একজন জনপ্রতিনিধিকে তো কাজ এবং সামাজিক বিধি—এই দুটো দিকেও নজর রাখতে হবে! আমফান এবং আয়লায় বসিরহাটে এত দুর্যোগ হল, ক’দিন নুসরৎ সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছেন? আমার যন্ত্রনার জায়গাটা হল, এ রকম মূল্যবোধের সঙ্গে আমরা পরিচিত নই। শতাব্দী রায় জনসভায় বলেছিলেন, তাঁকে ভোট দিলে বিনা পয়সায় টিকিট না কেটে লোকে দেখতে পাবে। মুনমুন সেন থেকে দেবশ্রী রায়—স্টারডমকে কীভাবে রাজনীতিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে সামগ্রিকভাবে রাজনীতিতে অভিনেত্রীদের ভূমিকা সম্পর্কে একটা নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে। “

তুরস্কে বিয়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে নুসরত জাহান দাবি করেছেন, ওদেশের বিবাহ আইন অনুযায়ী ওই অনুষ্ঠানের কোনও বৈধতা নেই। নুসরতের বিষয়টা দীপা দাশমুন্সি কীভাবে দেখছেন? ২০০৬ থেক প্রথমে বিধায়ক, তার পর ’০৯ থেকে সাংসদ, প্রয়াত প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির সহধর্মিনী দীপা বলেন, “নুসরৎ কখন, কোন অবস্থায় কী বলেছেন আমি সঠিক জানিনা। তাই এ নিয়ে কোনও মন্তব্য প্রকাশ্যে করতে চাই না। তবে, লোকসভায় দাখিল করা তথ্য সঠিক হওয়া উচিত এবং জনপ্রতিনিধিদের অবশ্যই একটা স্বচ্ছতা থাকা দরকার। “

সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদক কনীনিকা দাশঘোষ এই প্রতিবেদককে বলেন, “নুসরৎ কারও সঙ্গে বিয়ে না করে লিভ ইন করবেন কিনা, সেটা তাঁর এক্কেবারে ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমাদের সমাজ অনেকে এই সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পারেননা। তবে যদি ওই পথে হাঁটেন, তাহলে কেন লোকসভায় মিথ্যে হলফনামা দিলেন? এই অসততা আমি মেনে নিতে পারি না। কারণ, এটা নিন্দনীয়।“ তৃণমূলের তরফে কী নুসরতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত? উত্তরে কনীনিকা বলেন, “এই প্রশ্ন শুনে হাসি পেল। ওঁদের তাপস পাল জনপ্রতিনিধি হিসাবে যে মন্তব্য করেছিলেন, সেটা নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছিল। বিষয়টা তো দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল?“

ভারতীয় জনতা পার্টির রাজ্য সম্পাদক তথা পরিচালিকা সংঘমিত্রা চৌধুরীর বক্তব্য, “সাংসদ নুসরাতের বিয়ে নিয়ে চারিদিকে আজ খুব শোরগোল উঠেছে। অভিনেতা অভিনেত্রীদের সামাজিক জীবনে অনেক উত্থান- পতন ঘটেই থাকে এ তো আমরা জন্মের পর থেকেই দেখে আসছি। কিন্তু সুন্দরী অভিনেত্রী যখন কোনো জনপ্রতিনিধি, হ্যাঁ আমি বসিরহাটের সাংসদের কথা বলছি, তিনি বিবাহ নামের প্রতিষ্ঠানকে হেলায় উড়িয়ে দিতে পারেন না। নিখিল জৈনের সঙ্গে তার বিবাহ তুরস্কে হয়েছে, না মঙ্গল গ্রহে সেটা কারো জানার প্রয়োজন নেই۔۔ কিন্তু যাঁকে তিনি এর আগে নিজের স্বামী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন, আজ হঠাৎ কী হল? একজন অভিনেত্রী তাঁর জীবনে যা যা করতে পারেন, একজন জনপ্রতিনিধি তা পারেন না। কারন তিনি মানুষের ভোটে সেই জায়গাটি পেয়েছেন। মানুষ তাঁদের নেতৃত্বে এমন একজনকে দেখতে চায় যাঁর জীবনটি সুন্দর, স্বাভাবিক, মূল্যবোধে ঘেরা। তাই সমাজ সংস্কারক একজন জনপ্রতিনিধির উচিত নিজের ব্যাক্তিগত জীবনেও নিয়ন্ত্রণ আনা।“

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.