প্রধানমন্ত্রী কত ভাবে বোঝাতে চাইলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হারছেন?

ভোট যতটা ব্যালটের পাটিগণিত, ততটাই কৌশল ও মনস্তাত্বিক প্রভাব বিস্তারে খেলা। মঙ্গলবার সেই বিষয়টা যেন আরও স্পষ্ট হয়ে গেল।

এদিন সবে তৃতীয় দফার ভোট গ্রহণ হয়েছে বাংলায়। আরও পাঁচ দফার ভোট বাকি রয়েছে। কিন্তু তার আগে দৃশ্যত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বারবার দাবি করলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হেরে গেছেন। নন্দীগ্রামে হেরে গেছেন। বাংলাতেও হারছেন। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে অন্তত পাঁচ রকম ভাবে প্রধানমন্ত্রী এই কথাটা যেন বাংলার ভোটারদের মনে গেঁথে দিতে চেয়েছেন।

মঙ্গলবার প্রথম কোচবিহারে সভা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে শুরুতেই তিনি বলেন, “গত দু’দফার ভোটে দিদির হার নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। আজও ভাল ভোট হচ্ছে বলে খবর পাচ্ছি। বাংলায় বিজেপির ঢেউ চলছে। এমন ঢেউ যে দিদির গুণ্ডারা কোণঠাসা হয়ে গেছে”।

এ কথা বলেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি শুনছি, দিদি ইদানীং একটা প্রশ্ন করছে, আমি কি ভগবান যে জানতে পেরে গেছি প্রথম দু’দফায় জিতছে? আরে দিদি আমি তো মামুলি একটা লোক যে ঈশ্বরের সেবায় নিয়োজিত। ভোটে কে হারছে, কে জিতছে তা জানার জন্য ভগবানকে কষ্ট দেওয়ার দরকার নেই। জনতা জনার্দনই ঈশ্বরের অবতার। এই যে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা এখানে দেখছি, সেটাই বলে দিচ্ছে দিদি হারছেন।”
এখানেই থামেননি প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “ভোটের ফলাফল কীভাবে অনুমান করা হয়? এক তো আপনার রাগ, কথায় কথায় রেগে যাচ্ছেন, আপনার অসন্তোষ, আপনার ব্যবহার, আপনার মুখের ভাষা—এ সব দেখে একটা বাচ্চাও বলে দেবে তৃণমূল হারছে। দিদি আপনি ভোটে হেরে গেছেন”।

ইদানীং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিটা সভায় গিয়ে যেমন তাঁর পায়ের চোটের কথা নিয়ম করে বলছেন। তেমনই দাবি করছেন, তিনি নন্দীগ্রামে জিতছেন। সেই প্রসঙ্গ টেনেই প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেন, “দিদি রোজ আপনাকে বলতে হচ্ছে, আপনি নন্দীগ্রামে জিতছেন। আরে দিদি! নন্দীগ্রামের বুথে যেদিন আপনি খেলা করেছেন, যে কথা বলেছেন, সেদিনই গোটা দেশ বুঝে গেছে আপনি হারছেন”।

প্রধানমন্ত্রীর দাবি, মানুষ সেদিনও বুঝে গেছে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হারছেন, যেদিন তৃণমূল ঘোষণা করল যে দিদি এবার বারাণসীতে প্রার্থী হবেন। তার মানে এই যে নন্দীগ্রামে নৌকো ডুবছে। তা ছাড়া মোদীর দাবি, এ বার সংখ্যালঘু ভোটও হাতছাড়া হচ্ছে তৃণমূলের। তাঁর কথায়, কদিন আগে দিদিকে বলতে শুনেছি, সব মুসলমান একজোট হও। বিজেপিকে আটকাতে হবে। মানে মুসলমান ভোটও তাঁর হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। আর দিদি বাঁচাও বাঁচাও করছেন।

প্রধানমন্ত্রীর কথায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হতাশা থেকেই কেন্দ্রীয় বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনকে গালমন্দ করছেন। এই কেন্দ্রীয় বাহিনী, এই নির্বাচন কমিশন এখন দিদির কাছে ভগবান ছিল। এখন তাঁদের উপরই রাগ করছেন, তাঁদের অপমান করছেন। এও সম্ভাব্য পরাজয়ের লক্ষণ।
প্রধানমন্ত্রী তথা মোদীর এই কৌশল যে তৃণমূল আঁচ করতে পারছে না তা নয়। তাই তাঁরাও এর মোকাবিলায় সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপানোর চেষ্টা করছেন। এমনকি এখন তাতে গলা মিলিয়েছেন যশবন্ত সিনহা, জয়া বচ্চনরাও। যাঁরা বলছেন, দিদির পা ভেঙেছে, কিন্তু মন ভাঙেনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.