নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের বাস্তবায়ন নির্বাচনের আগেই বিজেপির দখলে এনে দিতে পারে ২০০টি আসন

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাথাব্যথার অন্যতম প্রধান কারণ হ’ল নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ)। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন যে কোভিড -১৯ টিকা অভিযান শেষ হওয়ার সাথে সাথেই এই আইনের বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা হবে। রাজ্যের কাছে এটা অনেকটা তুরুপের তাসের মতো যেটা আগামী বিধানসভা নির্বাচনে রাজনৈতিক পালাবদলের ক্ষেত্রে অনেকটা সাহায্য করবে।

নাগরিকত্ব সংশোধন আইনটি আর পাঁচটা ভারতীয় আইনের মতো নয় বরং বেশ কিছুটা আলাদা। অতীতে অসংখ্য ভারতীয়দের উপর হওয়া অত্যাচার, অবিচারের, প্রায়শ্চিত্ত বলা যেতে পারে। আইনটির খসড়া তৈরি করার সময় আইন প্রণেতারা যে পশ্চিমবঙ্গের ভয়াবহ অতীতের কথা মাথায় রেখেছিলেন তা বলাই বাহুল্য। এক্ষেত্রে সিএএ’র পটভূমি সম্পূর্ণভাবে জানাটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।

পশ্চিমবঙ্গ ছিল অবিভক্ত বাংলায় হিন্দুদের প্রধান বাসভূমি। মূলত হিন্দু সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব রক্ষা করার জন্যই এই রাজ্যটির পত্তন করা হয়। ভারতভাগ যখন অনিবার্য হয়ে উঠল তখন পুরো অবিভক্ত বাংলাকে পাকিস্তানের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই অবস্থায় অবিভক্ত বাংলার ৪৩% হিন্দুদের অস্তিত্ব চূড়ান্ত অনিশ্চয়তার মুখে এসে পড়ে। ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ভারতের বাঙ্গালী হিন্দুদের কথা ভেবে বঙ্গভঙ্গকেও অনাবাদী বলে দাবি করেছিলেন। নেহেরু যদিও স্বইচ্ছায় কোনোরকম সাহায্য করেননি। দেশভাগের ফলে অবিভক্ত বাংলার বৃহত্তর অংশ ইসলামী পাকিস্তানের মধ্যে এবং পশ্চিমবঙ্গ হিন্দুদের জন্য ভারতের রাজ্য হিসাবে অন্তর্ভূক্ত হয়।

অনেক চেষ্টার পরেও যখন কোনোভাবেই দেশভাগ আটকানো সম্ভব হ’ল না তখন বাবসাহেব আম্বেদকর সম্পূর্ণ জনসংখ্যার বিনিময়ের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে পশ্চিম পাকিস্তান এবং ভারত এক রক্তক্ষয়ী সংগ্ৰামের মুখোমুখি হয়েছিল। যদিও নেহেরু-লিয়াকত চুক্তির জন্য রাজনৈতিকভাবে পূর্ব পাকিস্তানে এমন ঘটনা ঘটেনি। এই চুক্তি যেকোনও জনসংখ্যা বিনিময় কর্মসূচীকে ব্যহত করার জন্য যথেষ্ট ছিল।

চুক্তির আগে তাঁরা বলছিলেন যে নেহরু-লিয়াকত চুক্তির আসল উদ্দেশ্য হ’ল যাতে পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দুরা ভারতে ঢুকতে না পারে। কিন্তু কেন এমন করতে হয়েছিল? একটা সম্ভাব্য কারণ এটা হতে পারে যে তারা সংখ্যায় এতোই বেশী ছিল যা ভারতের অর্থনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতো যারফলে অর্থনৈতিক সংকট দেখা যেতে পারতো। অন্যান্য সম্ভাব্য কারণ যেগুলো ছিল তা এই নিবন্ধটির আওতায় পড়ে না। নেহরু পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলীর সাথে দিল্লি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। এই চুক্তিতে বলা হয় যে ভারত ও পাকিস্তান, এই দুই দেশ সেখানে বসবাসকারী সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। ভারতে সংখ্যালঘু কমিশন গঠন ছিল নেহেরু-লিয়াকত চুক্তির প্রত্যক্ষ ফলাফল আর দিল্লি চুক্তি ছিল ভারতীয় রাজনীতিতে সংখ্যালঘুবাদের সূচনা।

একটি চুক্তি যা লক্ষ লক্ষ জীবনকে ধ্বংস করে দিয়েছিল

রাজনৈতিক দিক থেকে নেহরু-লিয়াকত চুক্তির গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এই চুক্তি ভারতে পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দুদের হয়ে “প্রতিনিধিত্ব” করেছিল। দিল্লি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার আগে পূর্ব পাকিস্তান থেকে যেসব হিন্দুরা পশ্চিমবঙ্গে এসেছিল দেশভাগের পর তারা সবাই ভারতের বৈধ নাগরিকত্ব লাভের করেছিল। কিন্তু, দিল্লি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর দেখা গেল যে পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দুরা সুরক্ষিত রয়েছে বরং ভারতে চলে আসা হিন্দুদের কপালে জুটেছিল অবৈধ, অনুপ্রবেশকারী তকমা।

এই একটা চুক্তি হিন্দু বাঙ্গালীদের কাছ থেকে তাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নিয়ে তাদের সম্পূর্ণভাবে পাকিস্তানি বানিয়ে দিয়েছিল। যদিও রাজনৈতিকভাবে নেহেরু পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দুদের দেশভাগের পর ভারত থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন কিন্তু তিনি তাদের জীবনে সন্মান তো দূর তাদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষাটুকুও দিতে পারেননি। যদিও পাকিস্তানকে দিল্লি চুক্তির প্রতিশ্রুতিতে ভোলানো সম্ভব হয়নি।

মুসলিম রাষ্ট্র তার দেশের সংখ্যালঘুদের রক্ষা করেনি বরং তাদের উপর চালিয়েছিল নির্মম অত্যাচার। ফলস্বরূপ পূর্ব পাকিস্তানে চলতে থাকে হিন্দু বাঙালিদের মৃত্যু থেকে শুরু করে সম্পত্তি অধিগ্রহণ, ধর্ষণের মতো একের পর এক নারকীয় তাণ্ডব। অবশিষ্ট বাঙালি বাধ্য হয় পশ্চিমবঙ্গে পালিয়ে আসতে (পূর্ব পাকিস্তানে ওরফে বাংলাদেশের হিন্দুদের দুরবস্থা আলাদা করে বলার মতো একটা বিষয়)। পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দুরা ফিরে এলেও দিল্লি চুক্তির জন্য তাঁরা সরকারী স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত হ’ল। নিজেদের অজান্তেই এঁরা সবাই আইনের চোখে হয়ে উঠেছিলেন অবৈধ অনুপ্রবেশকারী। পূর্বপাকিস্তানের হিন্দুদের উপর হওয়া ভয়াবহ নির্যাতনের কথা নেহেরু কোনোভাবেই স্বীকার করেননি। যখন হিন্দুদের অস্তিত্ব সংকটে মুখে এসে পড়েছিল তখন এটাই ছিল জওহরলাল নেহেরুর রাজনৈতিক অবস্থান।
(কেন তিনি হিন্দু বাঙালির প্রতি সংবেদনশীল ছিলেন না সেটা আলাদা বিষয়)

১৯৫৩ সালে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় মারা যাওয়ার পর এই বঞ্চিত সম্প্রদায়ের হয়ে কথা বলার মতো কার্যত কেউ ছিলেন না। পশ্চিমবঙ্গে এসে তাঁরা যেন নেহেরু সরকারের দয়ায় বাস করতেন। কোনোভাবে নিজেকে এবং নিজের পরিবারেকে বাঁচিয়ে ফিরতে পারলেও নিজের দেশেই তাঁরা হয়ে উঠেছিল শরণার্থী। সরকারী খাতায় নাম উঠেছিল অনুপ্রবেশকারী হিসাবে।

সুতরাং এই বাঙালি হিন্দুদের কোনো ভবিষ্যত ছিল না। তারা ছিল নোংরা দেশভাগের ফলে বলি হওয়া সবদিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়। রাতারাতি তাদের স্থাবর অস্থাবর সব সম্পত্তি চলে গিয়েছিল, হারিয়ে গিয়েছিল ভারতীয় হিসাবে তাদের পরিচয়।

বিগত ৭০ বছর ধরে, ভারতবর্ষ অবিভক্ত ভারতের হিন্দু বাঙালির প্রতি হওয়া অবিচারের বোঝা বহন করে আসছে। এই অন্যায়ের প্রায়শ্চিত্ত হিসাবে অবশেষে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন আনা হয়েছে। সেইসমস্ত হিন্দু বাঙালি, যারা ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪ এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসেছিল, তাদেরকে স্বাভাবিকরণের মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিকত্বের একটি শংসাপত্র দেওয়া হবে।

মুসলমানরাও এসেছে – শুধু একটি পার্থক্য রয়েছে

পূর্ব পাকিস্তান ওরফে বাংলাদেশ থেকে হিন্দুরা পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করার পর মুসলমানরাও উন্নত পরিষেবা এবং সুবিধা পাওয়ার আশায় ভারতীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছিল। হিন্দুরা তাদের সবকিছু হারিয়ে, সম্পত্তি ফেলে শুধুমাত্র নিজেদের প্রান বাঁচানোর তাগিদে এখানে বাধ্য হয়ে এসেছিল, অন্যদিকে মুসলমানরা এসেছে অতিরিক্ত লাভের আশায়। পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশের পর এইসমস্ত মুসলমানরা পুরো ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। নতুন নতুন কর্মক্ষেত্রে যোগ দিয়ে রোজগারের পথ সুগম করে, ভারতীয় মেয়েদের বিয়ে করে স্থায়ীভাবে এখানে বসবাস করতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দুরা মুসলমানদের অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে, তাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য বাধ্য হয়ে এখানে এসেছিল। আর অন্যদিকে মুসলমানরা এসেছে তাদের আখের গোছানোর জন্য। এই দুই সম্প্রদায় পূর্ব পাকিস্তান ওরফে বাংলাদেশ থেকে আন্তঃসীমান্ত পেরিয়ে ভারতে এসেছে। ভারতীয় আইন অনুসারে তারা সবাই অবৈধ অভিবাসী / অনুপ্রবেশকারী। জীবনের মর্যাদা এবং অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে সমান না হওয়া সত্ত্বেও, নাগরিকত্ব সংশোধন আইন পাস না হওয়া পর্যন্ত এই দুই সম্প্রদায়কেই আইনের দৃষ্টিতে সমান হিসাবে বিবেচনা করা হবে।

২০১৯ সালে সিএএ পাস হওয়ার আগে, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতীয় পাসপোর্ট আইন এবং বিদেশি আইনে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট সংশোধনী বিল পাস হয়েছিল। এই সংশোধনীগুলির মাধ্যমে ভারতে যেসব বাংলাদেশী হিন্দু রয়েছেন, যারা ধর্মীয় অত্যাচারের ফলে বাধ্য হয়ে এখানে এসেছিল তাদের স্থায়ী শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। উপরোক্ত দু’টি আইন সংশোধন করে ২০১৫ সালের সংশোধনী বিল পাস করার পরে, কেউই পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী বাংলাদেশি হিন্দুদের জোর করে তাড়িয়ে দিতে পারবে না। তবে, মুসলমানদের ক্ষেত্রে এই একই নিয়ম চলবে না। অনুপ্রবেশকারী মুসলমানদের এখনও অনুপ্রবেশকারী বলা হয়। তবে হিন্দু প্রবেশকারীরা অন্তত স্থায়ী শরণার্থীর মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য। এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন যে বিজেপি বিভাজনের রাজনীতি করছে। হিন্দু ও মুসলিম অভিবাসীদের প্রতি ভিন্ন আইনী আচরণকে আপাতদৃষ্টিতে বিভাজনমূলক হিসাবে দেখা হলেও আসলে কিন্তু হিন্দু বাঙালিদের এটাই প্রাপ্য। তারা দীর্ঘদিন ধরে পূর্ব পাকিস্তান তথা মুসলিম রাষ্ট্র বাংলাদেশে এরচেয়েও খারাপ অবস্থার শিকার হয়েছে, তখন যদিও কোনো ধরনের প্রতিবাদের ঝড় ওঠেনি। যদিও এই অভিবাসীদের জন্য শুধুমাত্র স্থায়ী শরণার্থীর মর্যাদা যথেষ্ট নয় কারণ তারা অবিভক্ত ভারতের নাগরিক। তাই স্বদেশের নাগরিক হওয়ার যোগ্যতা তাদের রয়েছে। এতদিন ধরে তারা সবদিক থেকে বঞ্চিত হয়ে এসেছে। দেশভাগের পরে তাদের আসল পরিচয় তাদের কাছে ফেরত দেওয়ার আরও বেশি দায়িত্ব ছিল ভারতের। সিএএ এই মানুষগুলোর কাছে আরও সহজভাবে ভারতীয় নাগরিকত্বের অধিকার প্রদান করবে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোট ব্যাংকের সিএএ প্রভাব আরও বেশী করে পড়তে পারে। একবার যদি বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু বাঙালি শরণার্থী( যেমন মাতুয়ারা) ভারতের নাগরিকত্ব পেয়ে যান তাহলে আর তাদের রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের হাতের পুতুল হয়ে থাকতে হবে না। তারা সরকারী চাকরি পাওয়ার যোগ্য হবে। ২০১৯ সালে সিএএ-এর মাধ্যমে তাদের নাগরিকত্বের অধিকার বৈধ হয়েছে। তারা যদি একবার নাগরিকত্বের শংসাপত্রটি পেয়ে যায় তাহলে আর পুলিশ এবং / বা রাজনৈতিক নেতাদের ভয়ে, তাদের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করার জন্য এই শরনার্থীদের ব্যবহার করতে পারবে না। শংসাপত্র পাওয়ার পর রাজনৈতিক নেতাদের পেশীশক্তির ভয় থেকে তারা মুক্তি পাবে যা অবশ্যই ব্যানার্জির ভোট ব্যাংকে প্রভাব ফেলবে। ঠিক এই কারণেই তিনি সিএএ পছন্দ করেন না। তিনি রাজনৈতিক সুবিধা ভোগের জন্য শরণার্থীদের চিরকালই দুর্বল করে রাখতে চান।

নাগরিকত্ব সংশোধন আইন, পটপরিবর্তনের মূল হোতা

পশ্চিমবঙ্গে এমন ১০০ টি নির্দিষ্ট নির্বাচনকেন্দ্র রয়েছে যা আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের ভাগ্য পরিবর্তনে মূল ভূমিকা পালন করবে। এই ১০০ টি আসনের মধ্যে ৪৫ টি পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত। বাকী ৫৫ টিও মোটামুটিভাবে সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত।

সীমান্তের ৪৫ টি আসনের মধ্যে ২৫ টি আসন উত্তরবঙ্গে এবং ২০ টি দক্ষিণবঙ্গে রয়েছে। সীমান্তবর্তী ৫৫ টি আসনের মধ্যে ১৬ টি উত্তরবঙ্গে এবং ৩৯ টি দক্ষিণবঙ্গে।

এই নির্বাচনকেন্দ্রগুলিতে শরণার্থীরা বসবাস করে।

এই ১০০ টির মধ্যে ৩২ টি তফসিলি জাতি এবং ৫টি তফসিলি উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত। পশ্চিমবঙ্গের মোট ২৯৪ টি বিধানসভার মধ্যে ৬৬টি তফসিলি জাতি এবং ১৬ টি তফসিলি উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত। বাম ও তৃনমূলের বক্তব্য অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের তফসিলি জাতি/উপজাতিরা সামাজিক অগ্ৰগতির ক্ষেত্রে, সামগ্ৰিক উন্নয়নের ব্যাপারে তারা যথাযথ প্রসাশনিক সুবিধা এবং সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তৃনমূল প্রসাশনের তরফে থেকে এই তফসিলি জাতি/ উপজাতির উন্নয়নের জন্য এতদিন এমন কিছু করা হয়নি যা তাদের সামগ্ৰিক অগ্ৰগতিতে সাহায্য করত।

এই ১০০টি নির্বাচনীঅঞ্চল যেখান থেকে বিধানসভা নির্বাচনের প্রায় ৩৪% আসন রয়েছে, রাজনৈতিক পালাবদলের ক্ষেত্রে যে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে তা বলাইবহুল্য। কলকাতায় এমন আরও অনেক নির্বাচনী অঞ্চল রয়েছে, যেখানে বাংলাদেশ থেকে আসা প্রচুর শরণার্থী রয়েছেন। বর্তমানে অন্যান্য ইস্যুর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুটি হ’ল নাগরিকত্ব। পশ্চিমবঙ্গে এই শরনার্থীদের এতদিন অনেক ব্যঙ্গ বিদ্রুপের শিকার হতে হয়েছে। তাদের সাথে অনুপ্রবেশকারীদের মতো ব্যবহার করা হয় যা অত্যন্ত অপমানজনক। শুধুমাত্র রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ফায়দা তোলার জন্য পশ্চিমবঙ্গে দু’টি আলাদা আলাদা শ্রেণীর মানুষ আপাতভাবে একইরকম মর্যাদা পেয়ে এসেছে এতদিন। যাইহোক, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গকে হিন্দুদের স্বদেশ হিসাবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। তিনি আরও চেয়েছিলেন শরণার্থীরা তাদের প্রাপ্য অধিকার, ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার কারণ এটা তাদের নিজেদের অধিকারের মধ্যে পড়ে। যদিও অনুপ্রবেশকারীদের সেই অধিকার নেই। সিএএ একবার প্রয়োগ করা হলে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সেইসব শরনার্থীদের জীবন সরকারীভাবে সুরক্ষিত করা হবে যাদের একদিন পূর্ব পাকিস্তান / বাংলাদেশে নিজেদের সবকিছু ফেলে রেখে বাধ্য হয়ে উদ্বাস্তুর মতো এ’দেশে চলে আসতে হয়েছিল। এইভাবেই শরণার্থী এবং অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে স্থায়ীভাবে একটা সীমানা নির্ধারণ করা হবে। এখানে ন্যায়বিচারকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।

অমিত শাহ জানিয়েছেন যে কোভিড -টিকাকরনের পর আবার নাগরিকত্ব সংশোধন আইন প্রয়োগের কাজ শুরু করা হবে। যেহেতু এই আইন বলবৎ করার ক্ষেত্রে বিপুল সংখ্যক কর্মী প্রয়োজন যারা সরকারী দপ্তরের সাথে যোগাযোগ রাখা থেকে শুরু করে সক্রিয়ভাবে জন সংযোগের মাধ্যমে সমস্ত প্রক্রিয়াটি সম্পাদন করবেন। সেইজন্য টিকাকরনকে অগ্ৰাধিকার দেওয়া হয়েছে।

অমিত শাহ তথা ভারতীয় জনতা পার্টি পশ্চিমবঙ্গের শরণার্থীদের যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তাতে কি তারা ভরসা রাখতে পারবে? বিজেপি শাসিত রাজ্যে তফসিলি জাতি / উপজাতিরা কি নতুন সম্ভাবনার মুখ দেখতে পাবে?

উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে পশ্চিমবঙ্গে ২০০টিরও বেশি আসন, গেরুয়া শিবিরের দখলে থাকবে বলে মনে হচ্ছে।

দেবযানী ভট্টাচার্য একজন কলাম লেখক যিনি রাজনীতি এবং সামাজিক পরিবর্তনের তীব্র পর্যবেক্ষক .. পেশাগতভাবে যোগাযোগ-কৌশলবিদ, বিশ্লেষণাত্মক জ্যাককিফাইংয়ের প্রতি তাঁর বিশেষ প্রবণতা রয়েছে। এছাড়াও দেবযানী একজন ফার্মাসিউটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং একজন ম্যানেজম্যান্ট প্রফেশনাল।

ডেটা ও তথ্যের বিশ্লেষণের প্রতি তাঁর বিশেষ আগ্ৰহ এবং আকর্ষন রয়েছে। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বিষয়ের মধ্যে ভারতের সংবিধান এবং এর ব্যাখ্যা তাঁর বিশেষ পছন্দের। তিনি ক্লাসিক বাংলা সাহিত্যের একজন একনিষ্ঠ পাঠক। তিনি তার ব্লগ, টুইটার এবং ফেসবুকের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনমত গঠন করেন।

দেবযানী ভট্টাচার্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.