নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি নিয়ে দেশজোড়া বিতর্কের আবহে পোয়াবারো সীমান্তের পাচারকারীদের। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাজের সূত্রে থাকা আতঙ্কিত বাংলাদেশিদের সীমান্ত পার করাতে নেওয়া হচ্ছে মাথাপিছু পাঁচ হাজার টাকা।

বনগাঁ ও বসিরহাট মহকুমার সীমান্তবর্তী এলাকায় সেকারণে ‘ধুর’দের ব্যবসা (দালাল) এখন রমরমিয়ে চলছে। এক রাতে ১০ জনকে পার করলেই তাদের পকেটে ঢুকছে নগদ ৫০ হাজার টাকা। অথচ কয়েক দিন আগেও মাথাপিছু পারাপারের এই দর ছিল সর্বোচ্চ দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। তবে যে পথে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে, সেই পথে অল্পবিস্তর অনুপ্রবেশের ঘটনাও ঘটছে। এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তরফেও বিএসএফকে সতর্ক করা হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিস ও সীমান্তরক্ষীদের মদতেই চলছে এই কারবার।

এই বিষয়ে বনগাঁ ও বসিরহাট জেলা পুলিসের কোনও কর্তা মতামত দিতে রাজি হননি। বিএসএফের তরফে জানানো হয়েছে, সীমান্তে কড়া নজরদারি রাখা হয়েছে। সেকারণে প্রায় প্রতিদিনই অবৈধভাবে দেশে ঢোকা বা বের হতে চাওয়া বাংলাদেশিদের আটক করে পুলিসের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনার জেলার বনগাঁ ও বসিরহাট মহকুমার বাংলাদেশ সীমান্তে এখনও সম্পূর্ণভাবে কাঁটাতারের বেড়া তৈরি হয়নি। এই সুযোগে সীমান্তবর্তী নদী ও ফাঁকা জমির উপর দিয়ে রমরমিয়ে পাচারের কাজ চলে। এনআরসি আতঙ্ক ও নাগরিকত্ব আইন পাশ হওয়ার পর অনুপ্রবেশকারীদের বাংলাদেশে ফেরার হিড়িক পড়ে গিয়েছে। আর তাতেই ধুর সিন্ডিকেটে মানুষ পাচারের দর একলাফে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। এই ধুরদের যোগাযোগ দুই প্রান্তেই থাকে। মোবাইলের মাধ্যমে তাদের মধ্যে যোগাযোগ হয়। সাংকেতিক কথার মাধ্যমে দুই দিকে বিএসএফ ও বিজিবি কোন সময় থাকছে না, তা দেখে নিয়েই পারাপার করে। এই কাজে সীমান্তের স্থানীয় মানুষকে ইনফরমার হিসেবে ব্যবহার করে। সীমান্তবর্তী বসতির মধ্যে বাংলাদেশিদের অস্থায়ীভাবে রাখা হয়। এরপর মধ্যরাতে কিংবা ভোররাতে পারাপার করানো হয়।

স্থানীয়দের দাবি, সীমান্ত টপকে হাজার হাজার বাংলাদেশি চেন্নাই, মুম্বই, পুনে, দিল্লি সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাজের সূত্রে ছড়িয়ে গিয়েছে। নাগরিকত্ব আইন পাশ হওয়ার পর তারাই এখন আতঙ্কের কারণে দেশে ফিরতে চাইছে। বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত বাংলাদেশিরা হাওড়া ও শিয়ালদহ হয়ে বনগাঁ ও বসিরহাটের সীমান্তবর্তী এলাকায় আসছে। বাগদার বাণেশ্বরপুর ব্রিজ লাগোয়া বিভিন্ন পাড়ার মতোই বিভিন্ন সীমান্তবর্তী গ্রামে তাদের রাত্রিকালিন আস্তানা দেওয়া হচ্ছে। এরপর দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে পরিস্থিতি বুঝে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে। বাগদার কুলিয়া রণঘাট, কাশীপুর, জিৎপুর, বাঁশঘাটা দিয়ে দেদার পাচারের কাজ হচ্ছে। এছাড়া বনগাঁ ও বসিরহাট মহকুমার জয়ন্তীপুর, আংরাইল, আমোদিয়া, কইজুড়ি, ভাদুড়িয়া, পানিতর সহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে পারাপার হচ্ছে।

বিশ্বজিৎ মাইতি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.