ওয়ান শটার চাই? দরকার মাত্র চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। যদি লাগে সেভেন এমএম পিস্তল, তবে দামটা আরেকটু বেশি। ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ করতে রাজি থাকলে তবেই মিলছে সেভেন এমএম পিস্তল। আর কোনও মতে যদি কুড়ি থেকে ২৫ হাজার টাকা হাতে তুলে দিতে পারেন, তবেই হাতে হাতে নাইন এমএম পিস্তল! আস্থা রাখার মতো কার্তুজ ঘোরাফেরা করছে পাঁচশো থেকে ৮০০ টাকায়।
ভোট এলেই এখানে যেন উৎসবের মহড়া। বায়না দেওয়া, কেনাকাটা, সবই চলে হুড়মুড়িয়ে। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দেশজুড়ে শুরু হয়ে গেছে গণতন্ত্রের উৎসবের প্রস্তুতি। প্রার্থী বাছাই, দেওয়াল লিখন, পুলিশি ব্যবস্থা, ইভিএমের পাঠ, কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে তরজা, সবই চলছে পাশাপাশি। আর নজরের আড়ালে এখানে চলছে অন্য প্রস্তুতি। সেই প্রস্তুতির খবর নিতেই ‘দ্য ওয়ালের’ প্রতিনিধি পৌঁছে গিয়েছিলেন খুবই গোপন সেই ডেরায়। যা জানান দিচ্ছে ভোটের আগে বারুদের স্তুপের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে মালদা। গনিখানের গড় মালদা।
এ জেলার বাংলাদেশ সীমান্তের কাঁটাতার রয়েছে বেশ অনেকখানি জায়গা জুড়ে। আবার রয়েছে আন্তঃরাজ্য বেড়া অর্থাৎ বিহার সীমান্তও। বরাবরই বেআইনি অস্ত্রের অবাধ কারবার জেলা জুড়ে। কারবারিরাই জানাচ্ছেন, তৈরি অস্ত্রের বেশিরভাগটাই আনা হয় পাশের রাজ্য থেকে। কিছু ক্ষেত্রে আবার সরঞ্জাম এনে তা অ্যাসেম্বল করা হয় বৈষ্ণবনগর, কালিয়াচকে ছড়িয়ে থাকা ছোট বড় অসংখ্য অস্ত্র কারখানায়।
তাঁরাই জানালেন, নানা মাত্রার সন্ত্রাস আছে। সরঞ্জামের দামেরও তাই প্রকারভেদ। চার থেকে পাঁচ হাজারে মিলবে কেবল ওয়ান শটার। সেভেন এমএম পিস্তল হলে দামটা আরেকটু বেশি। ১০ থেকে ১৫ হাজার। আর নাইন এমএম চাইলে কিন্তু বাড়াতে হবে বাজেটটাও। যার যেমন চাই, প্রয়োজনমাফিক বায়না কিন্তু হয়ে যাচ্ছে এখন থেকেই। আস্থা রাখার মতো কার্তুজ ঘোরাফেরা করছে পাঁচশো থেকে থেকে ৮০০ টাকায়। শক্তিশালী বোমা দরকার? কুছ পরোয়া নেই। ৫০০ টাকায় মিলছে এমন বোমা। যদি দরকারের সময় না মেলে, এমন আশঙ্কায় বায়না দিয়ে রাখছেন অনেকেই।
তবে তেমন আশঙ্কা অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন কারবারিরা। বরং আশ্বাস দিয়েছেন, চাইলেই মিলবে। শুধু দামটা দেওয়ার অপেক্ষা। তাঁরা বলছেন, “চাইলে পাবেন না এমনটা হবে না। টাকা দিলেই বাড়ি বসে পেয়ে যাবেন। পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বও আমাদের।”
এত টাকা খরচ করে মারণ অস্ত্র কিনে নিয়ে গিয়ে যদি শেষমেশ ব্যবহার না করা যায়। গুণগত মাণে যদি সমস্যা থাকে? সন্দেহ হলে আপনার চোখের সামনেই পরীক্ষা করে দেখানো হবে এই সমস্ত মারণাস্ত্র আর বোমার কার্যকারিতা।
এত বেপরোয়া অস্ত্রের ঝনঝনানি কী ভাবে ? পুলিশের ভয় নেই?
স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক স্বাধীন সরকার বলছেন, “এই অস্ত্র কারবারিরা সবাই তো শাসকদলের ছত্রছায়ায় রয়েছেন। তাই তাদের আর ভয় কীসের? পুলিশ তো সব জেনেও চুপচাপ থাকে। এই অস্ত্র কারখানাগুলো সম্পর্কে আমি নিজে একাধিকবার পুলিশকে জানিয়েছি। কিন্তু বন্ধ করে দেওয়ার কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।”
তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন অস্ত্র কারবারিদের সঙ্গে তৃণমূলের যোগ অস্বীকার করেছেন, তবে আবার এও বলেছেন, আগে একশো শতাংশ হলে তা এখন দশ থেকে কুড়ি শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থাৎ বেআইনি অস্ত্র কারবার যে চলছে তা পুরোপুরি উড়িয়ে দেননি তিনিও।
তবে জেলা পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে এমন অস্ত্র কারখানার কথা তাঁদের জানা নেই।