বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন বন্ধ না হলে ১০০টিরও বেশি দেশে প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু করবে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। ঢাকায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই ঘোষণা করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)। বাংলাদেশের খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার শিয়ালী গ্রামে মৌলবাদী হামলায় মন্দির, ঘরবাড়ি ভাঙ্গচুর ও লুটপাটের প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কপিল কৃষ্ণ মন্ডল এই হুঁশিয়ারি দেন।
কপিল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, গত ৭ আগস্ট শনিবার দুপুর ৩ টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত খুলনা জেলার রূপসা উপজেলায় শিয়ালি গ্রামে শতাধিক মৌলবাদী সন্ত্রাসী হিন্দুদের ওপর হামলা চালায়। তারা ৪টি বড় মন্দির সহ ১০ টি মন্দির ভাঙ্গচুর করে এবং ৫৭টি বাড়িঘর ও ৭ টি দোকান ভাঙ্গচুর ও লুটপাট করে। হামলাকারীরা বাড়ির গরু, ছাগলও লুট করে নিয়ে গেছে। এমনকী মৃতদেহ বহনকারী গাড়িও নিয়ে গেছে। হিন্দুদের অশ্রাব্য গালিগালাজ করে এবং বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে যেতে বলে, না গেল হিন্দুদের প্রাণ নাশের হুমকি দেয় এবং নারীদের শ্লীলতা হানিরও চেষ্টা করে।
কপিলকৃষ্ণবাবু বলেন, জানা যায় শিয়ালি বাজারের মসজিদের ইমামের প্ররোচনায় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পাশের আনন্দনগর, চাঁদপুর, বামনডঙ্গা গ্রাম থেকে মৌলবাদি সন্ত্রাসীরা জড়ো হয়ে এই হামলা চালিয়েছে। সেখানকার হিন্দুরা আর্তনাদ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে, দেশ ত্যাগের অনুমতি প্রার্থনা করছে, যা খুবই মর্মস্পর্শী ঘটনা।
তিনি আরো বলেন, গত ৬ আগষ্ট বরগুণার আমতলী উপজেলার গুলশাখালী গ্রামে আব্দুল বারেক নামে একব্যক্তি মাধব চন্দ্র হাওলাদারের বাড়িঘর ভাঙ্গচুর করে টাকাপয়সা, সোনার গয়না সহ বাড়ির সবকিছু লুট করে নিয়ে যায়। ৩১ জুলাই ফরিদপুরের কৃষ্ণনগর গ্রামে সর্বজনীন কালী মন্দিরে হামলা হয়। ২৫ জুলাই নোয়াখালীর সুবর্ণচরে মন্দির, বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাঙ্গচুর ও লুট করে। ২১ জুলাই ঈদের দিন গোপালগঞ্জ জেলার কোটালিপাড়ায় হামলা, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে হিন্দুদের জমি জোর করে দখল করে।
কপিলকৃষ্ণবাবু আরও জানান, ১৯ জুন সিরাজগঞ্জের রায়পুর হাওলাদার পাড়ার কালী মন্দিরে হামলা হয়। চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলা সোনাকানিয়া কর্মকার পাড়ায় শিব মন্দিরে হামলা ও ভাঙ্গচুর হয়। চট্টগ্রামের কালুরঘাটের স্বপন কুমার দাশের সীমানা পাঁচিল ভেঙ্গে তাঁর জায়গা দখল করে নিয়েছে। রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার মালোপাড়ার লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দিরে হামলা, বরগুনা জেলার বামনা উপজেলার চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে অসীম চন্দ্র শীলের পরিবার সহ একাধিক হিন্দু পরিবারকে দেশত্যাগের হুমকি দেয়। অধ্যক্ষ মিন্টু চন্দ্র বর্মনকে হত্যার পর তাঁর দেহ ৬ টুকরো করে মাটিতে পুঁতে রাখাসহ বহু ঘটনা এদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের ভবিষ্যৎ অস্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে চলেছে।
তিনি বলেন, বহু আলোচিত বাঁশখালীর ১১ জনকে পুড়িয়ে মারার মামলা ১৮ বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি। ভিডিও ফুটেজের প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বিশ্বজিৎ হত্যার আসামীদের ফাঁসি না দিয়ে খালাস দেওয়া হয়েছে। অতীতের এমন বহু ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না পাওয়ার পরিস্থিতি মনে করিয়ে দেয় এদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য আইনের শাসন নেই। অথচ অর্পিত সম্পত্তি আইন, দেবোত্তর সম্পত্তি আইন, হিন্দু পারিবারিক আইন, হিন্দু সম্পত্তি বণ্টন আইন তথা বিভিন্ন হিন্দু বিরোধী আইন প্রণয়ন করে এদেশের হিন্দু সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র চলছে প্রতিনিয়ত। অতীতের কোনো ঘটনার বিচার না হওয়া, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার নিশ্চয়তার প্রতি সরকারের উদাসীনতা ও অপরাধীদের উৎসাহিত করার কারণে এ সকল ঘটনা বারবার সংঘটিত হচ্ছে।
গতকাল ১২ আগস্ট বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এই সব মানবাধিকার লঙ্গনের ঘটনা ইতিমধ্যে জাতিসঙ্ঘ, ইউরোপিয়ান কমিশনে জানিয়েছে। এবার বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের কাছে এদেশের সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের তথ্য পাঠানো হবে।
তিনি বলেন, সরকার, প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থার কাছে আমাদের দাবি, খুলনার শিয়ালি গ্রামের ঘটনা সহ উল্লেখিত সব ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। আক্রান্তদের দ্রুত সাহায্য ও নিরাপত্তার পাশাপাশি সারাদেশের সংখ্যালঘু সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে। হিন্দু আইন, দেবোত্তর সম্পত্তি আইন সহ হিন্দু বিরোধী কোনও আইন প্রণয়ন করা যাবে না। এই সব দাবি পুরণ না করলে এবং হিন্দু নির্যাতনের পুনরাবৃত্তি ঘটলে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশে একযোগে ব্যাপক কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলে, সংগঠনের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সহদেব চন্দ্র বৈদ্য, সহ-সভাপতি সুবীর কান্তি সাহা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত নাথ জুয়েল, সেবা প্রমুখ সমেন কুমার সাহা, কোষাধ্যক্ষ সাধন কুমার দাশ, দপ্তর সম্পাদক বাদল সাহা, কার্যকরী সদস্য রবিন লাল, বিশিষ্ট সমাজসেবক সোমনাথ দে, দৈনিক ভোরের ডাকের সিনিয়র রিপোর্টার ও হেড লাইন ত্রিপুরার ব্যুরো চিফ সুজন দে, পোস্তগোলা জাতীয় মহা শ্মশান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ডিকে সমীর, লিটন কৃষ্ণ দাশ প্রমুখ।h