কতদিনের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ? না নিলে কী ক্ষতি-জানালেন চিকিৎসকেরা

দেশজুড়ে করোনার ভ্যাকসিন সংকট৷ প্রথম ডোজ নেওয়ার পর দেখা যাচ্ছে অনেকেই দ্বিতীয় ডোজ পাচ্ছেন না৷ কবে পাবেন, তারও নিশ্চয়তা নেই৷ এই পরিস্থিতিতে রীতিমতো উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ৷ প্রথম ডোজ নেওয়ার কতদিনের মধ্যে ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে? সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ নিলে কোনও ক্ষতি হবে কিনা অথবা করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে কিনা-এই সমস্ত বিষয়ে আলোকপাত করলেন বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ অরিন্দম বিশ্বাস৷

বর্তমানে ভারতে দুটি করোনা( Covid-19) ভ্যাকসিনের প্রয়োগ চলছে। একটি হল ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন কোভ্যাক্সিন (Covaxin)। অপরটি সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার কোভিশিল্ড( Covishield) ।

ঠিক কতদিনের ব্যবধানে দুটি ডোজ নেওয়া প্রয়োজন?

কোভিশিল্ডের দুটি ডোজের মধ্যে সময়ের ব্যবধান প্রাথমিক পর্যায়ে ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ রাখা হয়েছিল। পরবর্তী পর্যায়ে তা বাড়িয়ে ৪ থেকে ৮ সপ্তাহ করা হয়।

অন্যদিকে কোভ্যাক্সিনের দ্বিতীয় ডোজ, প্রথম ডোজ গ্রহণের ৪ থেকে ৬ সপ্তাহের মাথায় নিতে হয়।

কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞদের নির্দেশিকা অনুযায়ী কোভিশিল্ডের প্রথম ডোজ গ্রহণের ৬ থেকে ৮ সপ্তাহের মাথায় দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারলে সবচেয়ে ভাল। কিন্তু ৮ সপ্তাহের বেশি হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা হ্রাস পেতে পারে।

চিকিৎসকরা বলছেন, সর্বোচ্চ ১২ সপ্তাহের মধ্যে ভ্যাকসিন নিয়ে নিতে হবে৷ ১২ সপ্তাহের মধ্যেও যদি ভ্যাকসিন না নেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে কোনও ক্ষতি হবে কিনা সেরকম কিছু এখনও গবেষণায় উঠে আসেনি৷

ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেওয়ার পর যদি কেউ করোনা আক্রান্ত হন সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া কি যাবে?

করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর স্বাভাবিকভাবেই দেহে অ্যান্টিবডি উৎপন্ন হয় যা ভবিষ্যতের সংক্রমণের সম্ভাবনা কমায়। কিন্তু চিকিৎকসদের মতে, কোভিড থেকে সুস্থ হয়েও ভ্যাকসিন অবশ্যই নেওয়া উচিত কারণ তা দেহে অনাক্রমতা আরও বৃদ্ধি করে সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচায়।

যদি দু’টো ডোজ নেওয়ার পরেও কেউ এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হন, তাহলে নতুন করে ভ্যাকসিন নেওয়ার কি প্রয়োজন আছে?

চিকিৎসকরা বলছেন, নতুন করে নেওয়ার দরকার নেই। যে ভ্যাকসিন নেওয়া হয়েছে সেটাই কাজ করবে এবং রোগের উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে রাখবে। উপসর্গহীন কোভিড রোগীরা অনেক সময় চিন্তায় থাকেন যে তাঁরা যদি ভ্যাকসিন নেন তাহলে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যাবে কি না! উপসর্গহীন রোগীরা নিশ্চিন্তে ভ্যাকসিন নিতে পারেন, কারণ এতে কোনও প্রতিক্রিয়া হবে না।এটা ঠিক যে শরীরে ভাইরাস প্রবেশ করলে শরীর নিজে থেকে অ্যান্টিবডি বা ইমিউন সিস্টেম তৈরি করে নেয়। তবে যে পরিমাণ অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে সেটা পর্যাপ্ত কি না, তা একটা বড় প্রশ্ন।

সম্প্রতি কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন এমন কেউ যদি ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী হন, তাহলে তিনি তাঁর রোগের সমস্ত লক্ষণ চলে যাওয়ার পর এক থেকে তিন মাসের মধ্যে টিকা নিতে পারেন।

দাম

কোভিশিল্ড : রাজ্যগুলিকে ডোজপিছু ৩০০ টাকায় কোভিশিল্ড বিক্রি করা হবে। বেসরকারি হাসপাতালগুলি কিনবে ডোজপিছু ৬০০ টাকা।

কোভ্যাক্সিন : ডোজপিছু রাজ্যগুলি ৬০০ টাকা কিনবে কোভ্যাক্সিন। অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতালগুলি ডোজপিছু ১,২০০ টাকায় কিনবে।

যে দাম ঘোষণা হয়েছে, সেটা রাজ্য সরকার ও বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে টিকা বিক্রির জন্য। সাধারণ ভ্যাকসিন গ্রহণকারী ব্যক্তির জন্য নয়।

রাজ্য সরকারি হাসপাতাল থেকে ভ্যাকসিন নিলে ভর্তুকির ফলে কম দামেই পাওয়া উচিত্ টিকা। আবার পশ্চিমবঙ্গ-সহ বেশ কিছু রাজ্যে টিকা সম্পূর্ণ বিনামূল্যেই দেওয়া হবে। অর্থাত্ রাজ্য সরকার টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন কিনলেও প্রয়োগ করতে সাধারণ মানুষের থেকে দাম নেবে না।

চিকিৎসকেরা বলছেন, কোভ্যাক্সিন এবং কোভিশিল্ড উভয়ই কিন্তু আমাদের সংক্রমণ থেকে পুরোপুরি বাঁচাবে না। তবে ভবিষ্যতে যদি আমরা করোনা বা অন্যান্য কোনও গুরুতর ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হই, তাহলে এই ভ্যাকসিন আমাদের সুরক্ষিত রাখবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.