অদম্য ইচ্ছা যে কোনও সাফল্য এনে দিতে পারে। এমন কথা আকছাড় শোনা যায়। কিন্তু সেটা যে মুখের কথা নয় তা বোঝা যায় শ্বেতার লড়াইয়ের কথা জানলে।
হুগলির ভদ্রেশ্বরের মেয়ে শ্বেতা আগরওয়াল আজ আইএএস অফিসার। কিন্তু শৈশব থেকে যে আবহে তাঁর বড় হওয়া তাতে এমন স্বপ্ন দেখাটাই ছিল একটা লড়াই। তবে লড়াইটা শুধু স্বপ্ন দেখাতেই থেমে থাকেনি, এগিয়ে গিয়েছে। আর তার জোরেই কোনও রকমে চলা সংসারে থেকেও স্বপ্নটা সত্যি হয়েছে। ২০১৫ সালে ইউপিএসসির সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় দেশের মধ্যে ১৯তম হয়ে চমকে দিয়েছেন তিনি। একদিন যে বাড়িতে খবরের কাগজ আসত না, সেই বাড়িতেই একদিন খবরের কাগজ আসে মেয়ের ছবি আর খবর নিয়ে।
সেই সময়েই এক সংবাদমাধ্যমকে শ্বেতা বলেছিলেন, তাঁর জন্মটাই ছিল অকাঙ্খিত। মধ্যবিত্ত মারোয়ারি যৌথ পরিবারে ছেলে হওয়ার স্বপ্ন মিথ্যা করে মায়ের কোলে এসেছিলেন শ্বেতা। এমনকি দাদু-ঠাকুমা তাঁর বাবাকে পুত্র সন্তান দত্তক নিতেও বলেন। সবারই ভাবনা ছিল, ছেলে না হলে বাবার মুদির দোকান সামলাবে কে!
যৌথ পরিবারের ১৫ ভাইবোনের সবার ছোট শ্বেতাকে নিয়ে প্রথম লড়াইটা অবশ্য ছিল ওঁর বাবা-মায়ের। সবাই যখন হিন্দি কিংবা বাংলা মাধ্যম স্কুলের পড়ুয়া তখন শ্বেতাকে কনভেন্ট স্কুলে পড়তে পাঠানোটাই ছিল এক বড় লড়াই। সব খরচ সামলে স্কুলের ১৬৫ টাকা ফিয়ের ব্যবস্থা করাটাই ছিল কঠিন। যে পরিবারে মেয়েদের শিক্ষাকেই অপ্রয়োজনীয় মনে করা হয় সেই পরিবারে প্রথম স্নাতক হন শ্বেতা।
যদি ভাবেন, এর পরে মেধাবী শ্বেতা আইএএস হয়ে গেলেন তবে কম ভাবা হবে। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে ইকোনমিক্স নিয়ে স্নাতক শ্বেতা এর পরে এমবিএ করেন। চাকরিও পেয়ে যান। কিন্তু মনে আইএএস হওয়ার স্বপ্ন চাকরি ছাড়তে বাধ্য করে। অফিসের বস জানতে চেয়েছিলেন, যে পরীক্ষায় চার লাখের মধ্যে মাত্র ৯০ জন পাশ করে সেই পরীক্ষার জন্য এত ভালো চাকরি ছাড়ার ঝুঁকি নেওয়া কি ঠিক হবে? অদম্য শ্বেতার জবাব ছিল, তিনি ৯০ জনের মধ্যেই থাকবেন।
প্রথমবার হল না। দ্বিতীয় বার দেশের মধ্যে ৪৯৭-এ। বাড়িতে বিয়ে করার জন্য প্রবল চাপের মধ্যে তৃতীয় বার দেশের মধ্যে ১৪১। ১০ নম্বর কম থাকায় বাধ্য হলেন আইপিএস ট্রেনিং-এ চলে যেতে। কিন্তু খাকি পোশাক যে তাঁকে টানে না। তাই আবার পরীক্ষায় বসা। আর সেবার শ্বেতা দেশের মধ্যে ১৯ তম।
রাজ্যের টপার হয়েছিলেন শ্বেতা। আর অনেকদিন পরে বাংলার কেউ প্রথম কুড়ির মধ্যে।