দক্ষিণবঙ্গে যে বর্ষা এই প্রথম এমন কৃপণ, তা নয়। অতীতেও হয়েছে এমনটা। কিন্তু গত ১০ বছরে এই প্রথম বার জুলাই মাসের তাপমাত্রা যেন ফোস্কা ফেলছে গায়ে!
একে বাতাসের তাপমাত্রা বেশি, তার উপর আদ্রর্তার হারও বেশ চড়া। এই দুয়ে মিলে তীব্র ভ্যাপসা গরমে নাজেহাল অবস্থা গোটা দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে।
তুলনায় উত্তরবঙ্গ যেন ভিন্ন মেরু। সেখানে প্রবল বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সোমবার বৃষ্টি সামান্য কমলেও আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী দু’দিনও সেখানে অঝোরে বৃষ্টি হবে। তার পর থেকে বৃষ্টি কমতে শুরু করবে।
সোমবার দক্ষিণবঙ্গে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৭। এ বছর এখনও পর্যন্ত জুলাই মাসের এটাই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, গত এক দশকে বর্ষার সময় এত গরম পড়েনি বাংলায়। শেষ বার এমন হয়েছিল ২০০৫ সালের ৫ জুলাই। সে দিন তাপমাত্রা ছিল ৩৬.৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। তবে এ ব্যাপারে যদি অতীত পরিসংখ্যান খোঁজা হয়, দেখা যাবে ১৯৭১ সালের ১০ জুলাই এখনও পর্যন্ত সব থেকে গরম পড়েছিল পশ্চিমবঙ্গে। সে দিন তাপমাত্রা ছিল ৩৯.৯ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।
সঞ্জীববাবুর আরও জানিয়েছেন, নিম্নচাপ রেখা যে-হেতু হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থান করছে, তাই দক্ষিণবঙ্গে আগামী কয়েক দিন তাপমাত্রার বাড়ার আশঙ্কাই বেশি। অর্থাৎ গরম ও ভ্যাপসা ভাব অব্যাহত থাকবে।
এ বছর এমনিতেই অনেকটা দেরিতে বর্ষা এসেছে বাংলায়। সাধারণত ৮ জুন সরকারি হিসেবে বাংলায় বর্ষা আসার কথা থাকে। কিন্তু এ বার কেরলেও দেরিতে এসেছে বর্ষা। তার প্রভাব পড়েছে এখানেও। বাংলায় বর্ষা দেরি করে এসেছে ২১ জুন। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, ১ জুন থেকে দক্ষিণবঙ্গে সামগ্রিক বৃষ্টির ঘাটতি হল ৪৯ শতাংশ। এর মধ্যে কলকাতা ও হাওড়ায় বৃষ্টির ঘাটতি সব থেকে বেশি। কলকাতায় ৭২ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। হাওড়ায় বৃষ্টি কম হয়েছে ৭৭ শতাংশ। তা ছাড়া দক্ষিণবঙ্গের অন্য জেলাগুলিতে কোথাও ৫৫ শতাংশ তো কোথাও ৬০ শতাংশ বৃষ্টি কম হয়েছে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল জানান, ১ জুন থেকে বৃষ্টির পরিমাণ হিসেব করলে মনে হবে দক্ষিণবঙ্গে ঘাটতি অনেকটাই বেশি। কিন্তু বর্ষা দেরিতে আসায় সেটা খুব স্বাভাবিক। জুলাই মাসের প্রথম ১৫ দিনে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির পরিমাণ হিসেব করে দেখা যাচ্ছে, ৩৯.৯ শতাংশ ঘাটতি রয়েছে। এটা ঠিক যে, জুলাইয়ে অনেকটাই কম বৃষ্টি হয়েছে। তবে এ-ও মাথায় রাখতে হবে, বাংলায় সব বছর যে সমান বৃষ্টি হয় তা নয়। একটা ওঠা-নামা চলতেই থাকে। যেমন, ২০১৩ সালে জুলাই মাসের প্রথম ১৫ দিনে বৃষ্টির ঘাটতি ছিল ৩৭.৭ শতাংশ। ২০১০ সালে বৃষ্টি হয়েছিল ৮২ মিলিমিটার। ২০১২ সালে বৃষ্টি হয়েছিল ৯৮ মিলিমিটার। আগামী সাত দশ দিনের মধ্যে এই ঘাটতি কতটা পূরণ হয় সেটাই দেখার।
স়ঞ্জীববাবু জানিয়েছেন, আগামী দু-তিন দিনে দক্ষিণবঙ্গের কয়েক জায়গায় হালকা বৃষ্টি হবে। তার পর হয়তো ভারী বৃষ্টি হতে পারে দক্ষিণবঙ্গে।
অন্য দিকে উত্তরবঙ্গের বহু জায়গায় সোমবারও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হয়েছে। সেখানে বৃষ্টির ঘাটতি নেই বললেই চলে। মাত্র ১ শতাংশ। আগামী ৪৮ ঘণ্টাও উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলায় ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে।