বানিজ্যে চলিল শেষে দক্ষিন পাটন।।
শিব শিব বলি যাত্রা করে সদাগর ।
মনের কৌতুক চাপে ডিঙ্গার উপর।।
বাহ্ বাহ্ বলি ডাক দিল কর্ণধারে ।
সাবধান হয়ে যাও জলের উপরে । ।
চাঁদের আদেশ পা্ইয়া কান্ডারী চলিল ।
সাত ডিংগা লয়ে কালিদাহে উত্তরিল ।।
চাঁদ বেনের বিসস্বাদ মনসার সনে ।
কালীদহে সাধু দেবী জানিল ধেয়ানে ।।
নেতা লইয়া যুক্তি করে জয় বিষহরী ।।
মম সনে বাদ করে চাঁদ অধিকারী।।
নিরন্তর বলে মোরে কানী চেঙ্মুড়ী
বিপাকে উহারে আজি ভরা ডুবি করি ।।
তবে যদি মোর পূজা করে সদাগর।
অবিলম্বে ডাকিল ষতেক জলধর ।।
সপ্তডিঙা মধুকর নিয়ে বাণিজ্যে যেতেন ধনপতি, চাঁদসদাগর । যেতেন আরো কত বিখ্যাত অখ্যাতও বণিক মহাজন। ভাগীরথী গঙ্গায় পালতোলা জাহাজ ভাসে আসতেন তাঁরা সমুদ্রের মোহনায় । ভেসে চলতেন সিংহল, সুবর্ণদ্বীপ, চম্পা ,কম্বোজ , বালি , যবদ্বীপ । আরো কত দেশ বন্দরে। কেবলই পণ্য নয়, বিনিময় হত #সংস্কৃতির পসারও । পূর্ব ভারতের বৃহৎ বন্দর ছিল #রূপনারায়নের তাম্রলিপ্ত । আর ছিল তৈলকম্প বন্দর। আদি গঙ্গার মোহনায় ছিল প্রাচীন গঙ্গারিডি রাজ্যের রাজধানী । সরস্বতীর তীরে ছিল সপ্তগ্রাম । বহু প্রাচীনকালে গঙ্গা-ভাগীরথী আরও পশ্চিম দিকে রাজমহল, সাঁওতালভূমি, ছোটনাগপুর, মানভূম, ধলভূমের তলদেশ দিয়ে সোজা দক্ষিণবাহিনী হয়ে সমুদ্রে পড়ত এবং এই প্রবাহই ছিল অজয়, দামোদর ও রূপনারায়ণের সঙ্গম।প্রাচীন ভাগীরথীর তীরে সমুদ্রমোহনার কাছে ছত্রভোগ বন্দর ।এই সব বন্দর দিয়ে শুধু প্রাচ্যদেশেই বাণিজ্য হতো তা নয় , বাণিজ্য হত #রোমক , #গ্রিক ,#ফিনিসীয় বনিকগনের সঙ্গেও। বাণিজ্যপোত এসে ভিড়ত এসকল বন্দরে। গঙ্গা ভাগীরথীর তীরে তীরে গড়ে উঠেছিল তৎকালীন সভ্যতার পীঠস্থান গুলো…..
গঙ্গার মাহাত্ম্যের তুলনীয় আর কিছুই নয়। শরশয্যায় পিতৃব্য ভীষ্ম যুধিষ্ঠিরকে বলছেন, “সেই দেশ জনপদ ও আশ্রমই শ্রেষ্ঠ যার মধ্য দিয়ে সরিদ্বরা গঙ্গা প্রবাহিত হন। তপস্যা, ব্রহ্মচর্য ও দানের যে ফল, গঙ্গার আরাধনাতেও সেই ফল। যারা প্রথম বয়েসে পাপকর্ম করে পরে গঙ্গার সেবার করে, তারাও উত্তম গতি পায়। হংসাদি বহুবিধ বিহঙ্গে সমাকীর্ণ গোষ্ঠ সমাকীর্ণ গঙ্গাকে দেখলে লোকে স্বর্গ বিস্মৃত হয়। গঙ্গাদর্শন গঙ্গাজলস্পর্শ ও গঙ্গা অবগাহন করলে উর্ধ্বতন ও অধস্তন সাত পুরুষের সদগতি হয়”….
প্রাচীন গৌড়ে নিকটবর্তী চম্পানি বা চম্পক নগর। এখানে বাসছিল #গন্ধবণিক সম্প্রদায়ভুক্ত কোটিশ্বরের পুত্র বিখ্যাত চাঁদ সদাগর। গন্ধবনিকেরা ছিলেন শৈব। এঁরা কৌশাম্বি থেকে বঙ্গে আসেন সেন রাজত্বের পূর্বে । জঙ্গল চাঁদ বিষহরির পূজার বিরোধী ছিলেন। কিন্তু পরিবারের লোকদের পীড়াপীড়িতে অবশেষে সেই পূজা করেন। মনসামঙ্গল কাব্যের অন্তর্ভুক্ত সেই চাঁদ সওদাগর ও বেহুলা লখিন্দরের কাহিনী যুগ থেকে যুগান্তরে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সম্পদ হয়ে রয়েছে….
আর তার সঙ্গে অমর হয়ে আছে কালীঘাট ,গড়িয়া ,বৈষ্ণবঘাটা, রাজপুর সোনারপুর, হরিনাভি, কোদালিয়া, চাংড়িপোতা, মালঞ্চ, মাহিনগর, শাসন, বারুইপুর, ময়দা, দক্ষিণ বারাসাত ইত্যাদি ২৪ পরগনার বিভিন্ন অঞ্চল গুলি। এসকল কথা আমি পূর্বেই আলোচনা করেছি।
ভাগীরথী খাতে প্রবাহিত গঙ্গা নদীর নিম্ন প্রবাহটি একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে যেমন ছিল, তেমনটি আগে ছিল না। ব্যান্ডেলের কাছে ত্রিবেণীতে এটি তিনটি শাখায় ভাগ হয়ে যেত। দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে সপ্তগ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যেত সরস্বতী নদী। দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বয়ে যেত যমুনা নদী।মাঝখান দিয়ে বইত হুগলি নদী।
ষোড়শ শতাব্দীর আগে গঙ্গার মূল স্রোতটি সরস্বতী নদীর খাতে বইত। ষোড়শ শতাব্দী থেকে এটি হুগলির খাতে বইতে শুরু করে। সরস্বতী নদীর উচ্চ প্রবাহটি এখন শুকিয়ে গেছে। হুগলি আদিগঙ্গাকে ত্যাগ করে এখন সরস্বতীর নিম্ন প্রবাহটি ধরে সমুদ্রে মিশছে।
বিপ্রদাস পিপলাই তাঁর মনসাবিজয় (মনসামঙ্গল) কাব্যে চাঁদ সদাগরের যাত্রাপথের বর্ণনায় চিৎপুর, বেতড়, কালীঘাট, চূড়াঘাট, বারুইপুর, ছত্রভোগ, বদ্রিকুণ্ড, হাথিয়াগড়, চৌমুখি, সাতামুখি ও সাগরসঙ্গমের (সাগর দ্বীপ) নাম উল্লেখ করেছেন। বিপ্রদাস পিপলাইয়ের বর্ণনার সঙ্গে ভ্যান ডেন ব্রুকের ১৬৬০ সালে আঁকা আদিগঙ্গার মানচিত্রটি হুবহু মিলে যায়।
কোনো কোনো মতে, অতীতে আদিগঙ্গার ধারাটি শুকিয়ে যাওয়ায় কৃত্রিম খালের সাহায্যে সরস্বতীর নিম্ন প্রবাহের সঙ্গে সেটিকে যুক্ত করে রাখা হয়েছিল, যাতে সমুদ্রগামী আদিগঙ্গা যেখানে গঙ্গা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে সেখানে গঙ্গা ও সরস্বতীর মোহনার কাছে একটি জোয়ারের জলে পুষ্ট খাঁড়ি ছিল। জনশ্রুতি অণুযায়ী, ওলন্দাজ বণিকরা জাহাজ চলাচলের সুবিধার জন্য এই খাঁড়িটি বিভক্ত করেছিল।
যাক এত কথা বলছি যখন আরো কিছু তথ্য দিয়ে রাখি…হাজার হোক আদিগঙ্গার তীরবর্তী প্রাচীন ভূমি নিয়ে যখন বলছি…
অষ্টাদশ শতাব্দীতে আদিগঙ্গা আদি কলকাতার অন্যতম বসতি গোবিন্দপুর গ্রামের দক্ষিণ সীমা নির্দেশ করত। এই জন্য সেই সময় এই নদীর নামকরণ হয় #গোবিন্দপুর_খাঁড়ি.. খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ থেকে সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত এই নদীটিই ছিল হুগলি নদীর প্রধান ধারা। পরে মহাকালের নিয়মে এই ধারাটি ক্ষীণপ্রভা হয়। ভাগীরথী খাতে প্রবাহিত গঙ্গা নদীর নিম্ন প্রবাহটি একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে যেমন ছিল, তেমনটি আগে ছিল না। এর পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্বের সময় ১৭১৭ খ্রিষ্টাব্দে এডওয়ার্ড সারম্যান খননকাজ চালিয়ে এটির সংস্কার করেন । ফলে সেই ক্ষীণ প্রবাহের নাম হয় #সারম্যানের_নালা। কিন্তু ১৭৫০ খ্রিস্টাব্দ সময়কালে আদিগঙ্গা মজে যায় এবং গঙ্গা তার প্রাচীনতম ভাগীরথী (সরস্বতী) প্রবাহপথেই ফিরে যায়।
পরবর্তী কালে কর্নেল উইলিয়াম টালি এই মজা নদীটিকে (আদিগঙ্গা) খননকার্যের মাধ্যমে গভীর করে সার্কুলার খালের সঙ্গে যুক্ত করেন। তারপর এর নাম হয় #টালির নালা। ১৭৭৫ সালে কর্নেল টালি আদিগঙ্গার সঙ্গে বিদ্যাধরী নদীর যোগ স্থাপন করেন। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যাধরী নদীর দীর্ঘ ৩৫ মাইল অংশও মজে যায়।
কর্নেল টালির সংস্কারের পর আদিগঙ্গা আবার নৌপরিবহণ-যোগ্য হয়ে উঠলেও পরবর্তীকালে মানুষের মধ্যে জলপথ ব্যবহারের প্রবণতা কমে যায়। দ্রুত নগরায়ণের ফলে আদিগঙ্গার গভীরতা কমে যায়। সম্ভবত অষ্টম শতাব্দীর পর থেকেই আদিগঙ্গা মজে যেতে শুরু করে। তবে তখনও বেতড়ের দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে আদিগঙ্গার নদীখাতে কিছু জল প্রবাহিত হত।
১১৭৫ খ্রিস্টাব্দে লক্ষ্মণ সেনের তাম্রশাসনে প্রদত্ত গ্রামের পূর্ব দিক দিয়ে জাহ্নবী প্রবাহিত হত – এ প্রমাণ রয়েছে। যাইহোক, ১৭৫০ নাগাদ আদিগঙ্গা মজে যায় এবং অষ্টাদশ শতাব্দীর পরেই এই আদিগঙ্গার প্রবাহপথ সম্পূর্ণরূপে শুকিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত এটি দক্ষিণ-পশ্চিম কলকাতার একটি #নিকাশি নালায় পরিণত হয়।
চেয়ে দেখি ছাতার মতো ব্ড় পাতাটির নিচে বসে আছে
ভোরের দয়েলপাখি – চারিদিকে চেয়ে দেখি পল্লবের স্তূপ
জাম-বট-কাঁঠালের-হিজলের-অশথের করে আছে চুপ;
ফণীমনসার ঝোপে শটিবনে তাহাদের ছায়া পড়িয়াছে;
মধুকর ডিঙা থেকে না জানি সে কবে চাঁদ চম্পার কাছে
এমনই হিজল-বট-তমালের নীল ছায়া বাংলার অপরূপ রূপ
দেখেছিল; বেহুলাও একদিন গাঙুড়ের জলে ভেলা নিয়ে –
শ্রীচৈতন্যদেবের স্মৃতিবিজড়িত ও পদধূলি ধন্য মঙ্গলকাব্য উল্লিখিত গুরুত্বপূর্ণ স্থান বৈষ্ণবঘাটা বিশ শতকের তিরিশের দশকের পূর্ব পর্যন্ত বৈষ্ণবঘাটা নাকতলা অঞ্চলটি ইউনিয়ন বোর্ডের অধীন ছিল। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে এটি টালিগঞ্জ পুরসভার অন্তর্গত ছিল। ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে টালিগঞ্জ পুরসভার জন্ম হয়। তারও পূর্বে টালিগঞ্জ অঞ্চলটি ছিল সাউথ সুবাবার্ন বা বেহালা মিউনিসিপ্যালিটির অংশ। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে টালিগঞ্জ মিউনিসিপ্যালিটি কলকাতা পুরসভার অন্তর্গত হয়। বৈষ্ণবঘাটা মৌজার অপর অংশে অর্থাৎ রাজা সুবোধচন্দ্র মল্লিক রোডের পূর্বদিকের অংশটিও পূর্বে ইউনিয়ন বোর্ডের এবং তারপর পঞ্চায়েতের অধীন ছিল।
১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে এই অংশ যাদবপুর পুরসভার মধ্যে প্রবেশ করে। অবশেষে ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে যাদবপুর পুরসভাটি কলকাতা পুরসভার #যুক্তাঞ্চল বা Add Area হিসাবে পরিগণিত হয়।
নিম্নবঙ্গ তথা সমগ্র বঙ্গই লৌকিক দেবদেবী প্রভাবিত ছিল। আদিগঙ্গা তীরবর্তী প্রাচীন সুন্দরবনের অন্তর্গত প্রাচীন বৈষ্ণবাঘাটা অঞ্চলও লৌকিক দেবদেবী প্রভাবিত অবশ্যই ছিল। গ্রাম বা গেরাম দেবতা প্রকৃত ভাবেই অত্যন্ত জাগ্রত হন আজও লৌকিক বিশ্বাসে।
ভারতের প্রায় প্রতি গ্রামে একজন করে গেরাম দেবতা বা বিশেষ #গ্রাম_দেবতাকে পাওয়া যায়। তবুও গ্রামের #সার্বিক_কল্যাণ ও স্থিতি বজায় রাখার জন্য একজন দেবতা বা দেবীকে গ্রামের প্রান্তে প্রতিষ্ঠিত করার মধ্যে সমাজ ব্যবস্থার আদিমতম রূপকল্প টি খুঁজে পাওয়া যায়। প্রবর্তনার কাল থেকে দেব স্থানগুলি একই জায়গায় অবস্থান করছে ।
পুরোহিতরাও এখানে বংশানুক্রমিকভাবে পুজোর কাজ করে। অঞ্চলে যে সমস্ত প্রাচীন সনাতন ধর্মীরা বসবাস করে থাকেন তাদের প্রত্যেকের গ্রামের সন্নিহিত কোন ফাঁকা জায়গায় গুটিকয়েক গাছের নিচে সিঁদুর চর্চিত কিছু পোড়া মাটির হাতি ঘোড়ার মূর্তি দেখতে পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসা করলে জানা যাবে যে, ওগুলো গেরাম দেবতার থান।
গ্রাম্য দেবতাকে গেরাম ঠাকুর, গরাম দেবতা, গরাম ইত্যাদি বিভিন্ন নামে সম্বোধিত করা হয় । আখ্যান যাত্রা দিন, হাঁস-মুরগি পায়রা ইত্যাদি বলি দিয়ে , যদি বৈষ্ণব মতে হয় তাহলে পায়েস ইত্যাদি ভোগ প্রদান করে সেখানে পুজার বিধি প্রচলিত রয়েছে।
ওই দিনটি ছাড়া গেরাম ঠাকুরের পুজোর মাসিক বা কোন ঋতুভিত্তিক কোন দিন থাকেনা। তবে গ্রামে চাষবাস হচ্ছে না, বৃষ্টি হচ্ছে না, অপদেবতার কোপ পড়েছে, প্রবল বর্ষণের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, দূর্বিক্ষ মহামারি প্রকট পড়েছে এমন অবস্থায় অকালবোধনের ব্যবস্থা দেখতে পাওয়া যায় ।
বৈষ্ণবঘাটা #ওলাইচন্ডীর বা ওলাদেবীর থান তারই এক দৃষ্টান্ত। পরবর্তী কালে এখানের নাম হয় দরগাতলা বা ওলাবিবিরথান। কেন হয় সে কথা বলার অবকাশ রাখে না… ঊনবিংশ শতকের শেষভাগে বৈষ্ণবঘাটার নীলমণি মুখোপাধ্যায় এই মন্দির বা থানের প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতি বছর অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লপক্ষের শুক্রবার এখানে পূজা হয়।ভক্তগণ মানসিক করে পোড়ামাটির ঘোড়া উৎসর্গ করেন।
বৈষ্ণবঘাটার আজাদ হিন্দ পাঠাগারের পাশে এ.বি. গার্লস স্কুল। সেখানে পূর্বে শ্বাপদ সংকুল অরন্য ছিল। সুদীর্ঘ বিটপীর দল স্থানটিকে রহস্য ছায়ায় ঘিরে থাকত। সেই অরণ্যের মাঝে বৃহৎ বৃক্ষের নিচে ছিল সুন্দরবনের লৌকিক দেবী #বনদেবীর বা বনবিবির থান। আর সুন্দরবনের গড়িয়া গাছের আধিক্য এখানে এতই ছিল যে সম্পুর্ন এলাকার নাম হয়েছিল গড়িয়া।
গড়িয়ার যে দূরপাল্লার সরকারি বাস টার্মিনাসের পূর্বদিকে ছিল #বাওয়ালি_মন্ডলদের_কাছাড়ি_বাড়ি। সেখানে চৈত্র সংক্রান্তিতে চড়কের মেলা বসত। গাজনের গান হত। আর হত সং এর নাচ।সঙেরা ছড়া কেটে গান করত। গাজনের সন্ন্যাসীরা এখান থেকে দল বেঁধে #কালীঘাটে পূজা দিতে যেতেন। কারন, যে সময়ের কথা বলছি সে সময় #তারকেশ্বর রেল লাইন তৈরি হয়নি। বহু দূর দুরান্ত থেকে মানুষ সেই মেলা দেখতে আসতেন।
বৈষ্ণবঘাটা রথতলার কিছু পূর্বদিকে আদি গঙ্গার তীরে একটি সুপ্রাচীন ও বৃহৎ #শ্মশান ছিল। গড়িয়া মহাশ্মশানের ন্যায় এটিও প্রাচীন ছিল। বহু দূরবর্তী স্থান থেকে গঙ্গাতীরে দাহ করার জন্য নৌকা সংযোগে শবদেহ এখানে আনা হত। একটা সময় নাকি এখানে দাহ করার জন্য লাইন পড়ত। এ শ্মশানের চিতার আগুন কখনো নিভে যেত না। কিন্তু পরিবর্তন… মানুষ ইতিহাসকে কম টিকিয়ে রাখতে চায় এই দেশে। নিজের টুকু হলেই হল…ফলত লোকালয় বৃদ্ধি পাওয়ায় শ্মশানটি #বন্ধ হয়ে যায়।
এই শ্মশানটিকে কেন্দ্র করে এর উত্তরদিকে একটি কালীমন্দির নির্মিত হয় অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে।রথতলার পূর্বদিকে এখন যেখানে সরকারি আবাসন সেখানে পূর্বে সেই কালীমন্দিরটির ধ্বংসাবশেষ বহু বহুদিন জঙ্গলাকীর্ন হয়ে পরিত্যক্ত ছিল।
বৈষ্ণবঘাটা গ্রামের উত্তর দিকে বাঙালি হিন্দু উদ্বাস্তু উপনিবেশকে কেন্দ্র করে ব্যাপক জনবসতি গড়ে উঠতে শুরু করেছিল পঞ্চাশের দশক থেকে…তার আগে ওখানে ফসল উৎপাদন হত আর ছিল ফাঁকা প্রান্তর। সেই মাঠের নাম ছিল #উত্তরের_মাঠ। ইংরেজ আমলে টালিগঞ্জ অঞ্চলে অনেক সাহেব বাস করতেন। তাঁরা ওই মাঠে ঘোড়া ছোটাতেন। বর্তমানে এই অঞ্চলের নাম রামগড়- গাঙ্গুলিবাগান।
ক্রমশঃ….
#দুর্গেশনন্দিনী
তথ্যঃ বৃহত্তর গড়িয়ার ইতিবৃত্ত