বনগাঁর পুরসভায় আস্থা ভোটের দিন বিজেপি কাউন্সিলরদের পুলিশ ও তৃণমূল সমর্থকরা কী ভাবে আটকে দিয়েছিলেন তা সংবাদমাধ্যমে লাইভ দেখা গিয়েছে।
এ ব্যাপারে যে হাইকোর্টে মামলা হবে সেই দেওয়াল লিখন স্পষ্টই ছিল। শুক্রবার ওই মামলায় তৃণমূল পুরপ্রধানকে তীব্র ভর্ৎসনা করলেন বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়। এ দিন শুনানির সময় বিচারপতি তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেন, “আপনাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। তাও কেন চেয়ার আঁকড়ে পড়ে রয়েছেন। মানুষ আপনাদের পরিষেবা দিতে পাঠিয়েছেন। কিন্তু এটা কী করছেন? এতো নির্লজ্জ কেন আপনি?”
শুধু বনগাঁ নয়, হালিশহর পুরসভা তৃণমূল যে ভাবে পুনর্দখল করেছে তা নিয়েও এদিন তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারপতি। তিনি বলেন, হালিশহরে শুনলাম হোয়াটস অ্যাপ মেসেজে অনাস্থা নোটিস পাঠানো হয়েছে। হচ্ছে টা কী?
এর আগেও বনগাঁর ঘটনা নিয়ে হাইকোর্ট ভর্ৎসনা করেছে। তবে এ দিন যে মন্তব্য বিচারপতি করেছেন তা শাসক দলের জন্য যে প্রবল অস্বস্তিকর তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
লোকসভা ভোটে বনগাঁ আসনে জিতেছে বিজেপি। তার পরই জলঘোলা শুরু হয়। স্থানীয় বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বিজেপি-তে যোগ দেন। সেই সঙ্গে গেরুয়া শিবিরে যোগ দেন পুরসভার ১২ জন কাউন্সিলর। বনগাঁ পুরসভায় ২২টি ওয়ার্ড রয়েছে।এর মধ্যে তৃণমূলের দখলে ছিল ২০টি। একটি বাম এবং একটি ওয়ার্ড ছিল কংগ্রেসের। ১২ জন তৃণমূল কাউন্সিলর বিজেপি-তে যাওয়ার পর, জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সহ নেতারা আদাজল খেয়ে জমি ফেরাতে নামেন। দলত্যাগীদের মধ্যে শম্পা মহান্তি নামে এক কাউন্সিলরকে তাঁরা বিজেপি থেকে তৃণমূলে ফিরিয়ে আনতে সফল হন। ফলে পুরসভার সমীকরণ দাঁড়ায় বিজেপি ১১। তৃণমূল ৯।
কিন্তু এর পর পরই শম্পা অভিযোগ করেন, তিনি তৃণমূলে ফেরায় বিজেপি-র দুই কাউন্সিলর কার্তিক মণ্ডল এবং হিমাদ্রি মণ্ডল তাঁকে হুমকি দেন। থানায় গিয়ে এফআইআর করেন। অভিযোগ করেন, ওই দুই কাউন্সিলর কার্তিক এবং হিমাদ্রি তাঁকে অপহরণের চেষ্টা করেছিল। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয় ওই দুই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন কার্তিক এবং হিমাদ্রি। মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী নির্দেশ দেন, ওই দুই কাউন্সিলরকে এখনই গ্রেফতার করা যাবে না। ফলে তাঁদের আস্থা ভোটাভুটিতে অংশগ্রহণে কোনও বাধা ছিল না।
কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ান পুলিশ ও স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা। গত পরশু আস্থা ভোটকে কেন্দ্র করে ধুন্ধুমার হয় বনগাঁয়। শেষমেশ বনগাঁয় ভোটাভুটি হলেও, তার আবার ফল প্রকাশ হয়নি। বরং বৃহস্পতিবার দেখা যায়, শঙ্কর আঢ্য পুরসভায় তাঁর চেয়ারে গিয়ে বসেছেন।
বনগাঁ মামলা নিয়ে হাইকোর্টে শুনানি এখনও চলছে। সম্ভবত আজই রায়দান করতে পারেন বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়। এরই মধ্যে বিজেপি আবার হালিশহরের ঘটনা নিয়েও মামলা করেছে হাইকোর্টে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি যে জটিল হয়েছে তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই।