১৮ ঘণ্টার আগে গাইঘাটার করোনা রোগীর দেহ সরাতে পারল না স্বাস্থ্য দফতর

মৃত্যুর পর প্রায় ১৮ ঘণ্টা ধরে পড়ে রইল এক বৃদ্ধ করোনা রোগীর দেহ। অভিযোগ, জেলা স্বাস্থ্য দফতরের সব নম্বরে ফোন করেও দেহ সৎকারের জন্য সাহায্য জোটেনি। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার গাইঘাটায় এই ঘটনায় প্রায় ১৮ ঘণ্টা ধরে রীতিমতো অসহায় অবস্থায় কাটালেন মৃতের পরিবারের সদস্যরা। বাড়িতে করোনা রোগীর দেহ পড়ে থাকায় সংক্রমণের আতঙ্কও চেপে বসল তাঁদের। তবে শেষমেশ শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ ওই দেহ সৎকারের ব্যবস্থা করে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। যদিও এই ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পড়েছেন দফতর আধিকারিকেরা।

শনিবার ভোরে গাইঘাটা থানার চাঁদপাড়া ঢাকুরিয়া এলাকায় করোনা-আক্রান্ত কলকাতা পুলিশের এক প্রাক্তন পুলিশকর্মী দুলালচন্দ্র মজুমদারের মৃত্যু হয়। বছর ঊনআশির ওই বৃদ্ধের ছেলে ইন্দ্রনীল মজুমদার বলেন, “বৃহস্পতিবার রাতে বাবার করোনা রিপোর্ট পজিটিভ এসেছিল। তার পর শুক্রবার থেকে বাড়িতেই বাবার ওষুধ চলছিল। শ্বাসকষ্টও ছিল। অনেক চেষ্টা করেও হাসপাতালে ভর্তি করাতে পারিনি। এর পর তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। শনিবার ভোর সাড়ে ৩টে থেকে সাড়ে ৪টের মধ্যে বাবা মারা যান।”

বৃদ্ধের পরিবারের দাবি, বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করানোর চেষ্টা করলেও কোনও জায়গাতেই বেড পাওয়া যায়নি। এমনকি, অক্সিজেন বা অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করতেও পারেননি তারা। শনিবার ভোরে নিজের ঘরেই মৃত্যু হয় ওই বৃদ্ধের। তার পর থেকে মৃতদেহ দীর্ঘক্ষণ তাঁদের বাড়িতেই পড়ে রয়েছে। বৃদ্ধের স্ত্রী অর্চনা মজুমদারও কোভিডে আক্রান্ত। তাঁকেও হাসপাতালে ভর্তি করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে বৃদ্ধের দেহ প্রায় ১৮ ঘণ্টা ধরে বাড়িতে পড়ে থাকায় সংক্রমণের আশঙ্কায় চরম দুশ্চিন্তায় কাটালেন পরিবারের লোকেরা।

এই ঘটনার কথা জানাজানি হতেই অস্বস্তিতে পড়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। শনিবার দুপুরে গাইঘাটা প্রাথমিক হাসপাতালের এক স্বাস্থ্য কর্মী কাবেরী কর্মকারের দাবি ছিল, “রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের নিয়ম অনুযায়ী দেহ সৎকারের ব্যবস্থা করা হবে। সেই চেষ্টাই চলছে।” তবে স্বাস্থ্য দফতরের আশ্বাস সত্ত্বেও বৃদ্ধের সৎকার করতে গিয়ে নাজেহাল হতে হয় পরিবারের সদস্যদের। ইন্দ্রনীল বলেন, “প্রথমে পুলিশে ফোন করি। লোক পাঠাবে বললেও বিকেল পর্যন্ত কারও দেখা নেই। বাবার দ্রুত সৎকার করতে চাই।”

পরিবারের আকুতি সত্ত্বেও সরকারি নিয়মের ফাঁদে পড়ে থাকে বৃদ্ধের দেহ। গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গোবিন্দ দাসের সাফ কথা, “জনসমক্ষে কোনও ভাবেই (করোনা রোগীর) দেহ বার করা যায় না। গভীর রাতে বনগাঁ শ্মশানে মৃতদেহ দাহ করা হয়। ফলে রাতের আগে এই দেহ বাইরে বার করা যাবে না।”

তবে এই খবর জানাজানি হতেই অবশেষে দেহ সৎকারের ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হয় জেলা স্বাস্থ্য দফতর। গাইঘাটার ওই বাড়ি থেকে শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ দেহ সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.