তিনি ফেসবুক লাইভে আসা মানে কিছু না কিছু হবেই। কিন্তু এতদিন ছিল অন্যরকম। তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্রের শনিবারের ফেসবুক লাইভ সম্পূর্ণ আলাদা। প্রতিটি সেকেন্ডে বিতর্কের বারুদ ঠাসা। আর সেই ফেসবুক লাইভ থেকেই দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন মদন। ফিরহাদ হাকিম, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায়ের মতো একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতার নাম করে বললেন, ওঁদের নামে অভিযোগ থাকলেও বলির পাঁঠা করা হয়েছিল তাঁকে।
সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেন প্রাক্তন পরিবহণ মন্ত্রী। ২০১৬ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে কামারহাটি থেকেই দ্বিতীয়বার প্রার্থী করেছিলেন। তখন তিনি জেলে। জেল থেকেই ভোট লড়েছিলেন। কিন্তু এ দিন মদন বলেন, “আমি প্যারোল চেয়েছিলাম। পাইনি। আমায় বলা হয়েছিল নির্বাচন কমিশন দিচ্ছে না। পরে জেনেছি, প্যারোল দেওয়া – না দেওয়ায় কমিশনের কোনও হাত নেই। আমি ৪৩টি আবেদন করেছিলাম কারা দফতরকে। কিন্তু সেই সব চেপে দেওয়া হয়েছিল।” নাম করে তোপ দাগেন প্রয়াত তৃণমূল নেতা তথা তৎকালীন কারামন্ত্রী হায়দার আজিজ সফির বিরুদ্ধে। বলেন, “আজ তিনি নেই। কবরে চলে গিয়েছেন। তাই উত্তর দিতে পারবেন না। তাঁর সরকারই যে আমায় প্যারোল দেয়নি, এটা হয়তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানেন না। কিন্তু এটাই সত্যি।” তাঁর আক্ষেপ, কিছু দিনের জন্য প্যারোল পেলে হারতে হতো না তাঁকে।
ভাটপাড়ার উপনির্বাচনেও প্রার্থী করা হয়েছিল মদনকে। কিন্তু সেখানেও তিনি হেরেছেন। অনেকের মতে, হয়তো এই হারের পরই দলে কোণঠাসা মদন। এ দিন দীর্ঘদিনের এই তৃণমূল নেতা ফেসবুক লাইভে বলেন, “আমাদের পার্টির কিছু নেতা বলছে তাঁদের নামেও সিবিআই ছিল কিন্তু তাঁরা জিতেছেন। জো জিতা ওহি সিকান্দর। কিন্তু আমি মনে করিয়ে দিতে চাই, তাঁদের সিবিআইয়ের বোঝা বইতে হয়নি।”
জেলে থাকার সময়ে প্যারোল না পাওয়া নিয়ে ইউএপিএ আইনে বন্দি মাওবাদী নেতা ছত্রধর মাহাতোর কথাও উল্লেখ করেন মদন। বলেন, “ছত্রধর আমায় বলেছিল, আমি মাওবাদী। দেশদ্রোহী। তাও আমি ১৫ দিনের প্যারোল পেয়েছি। আপনি পেলেন না!”
এরপর নিজের ক্যারিশমা শোনান মদন। বলেন, “আমাদের কোনও নেতাকে দূরে গিয়ে দাঁড়াতে হয়নি। সবাই বাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে জিতেছেন। আর আমি যতবার দাঁড়িয়েছি ততবার ২৫-৩০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে।” বাম জমানায় সিপিএমের সন্ত্রাস ঠেকিয়ে বিষ্ণুপুর পশ্চিমের উপনির্বাচনে জয়ের কথাও তুলে ধরেন মদন। একই সঙ্গে বলেন, “আমায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিনে পাঠিয়েছিলেন। আমি সেখানে বক্তৃতা করতে গিয়ে বলেছিলাম, আমি বাংলা থেকে এসেছি। যেখানে গত ৩৪ বছর ধরে লাল সন্ত্রাস চলছে। চিনের কমিউনিস্ট পার্টি সেমিনার বন্ধ করে ডিনারে নিয়ে গিয়েছিল। আমি সেই মদন মিত্র। অনেকে আন্ডার এস্টিমেট করছেন!”
লোকসভায় হারের পর বিপর্যস্ত শাসক দল। এর মধ্যেই কাটমানি নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন গোলমাল। তার উপর মদন মিত্রর এ হেন ফেসবুক লাইভ শাসকের অস্বস্তি বাড়াবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তবে এই লাইভেই মদন স্পষ্ট করেছেন, তিনি তৃণমূল ছেড়ে কোথাও যাবেন না। পর্যবেক্ষকদের মতে, এতে হয়তো কিছুটা স্বস্তি পেতে পারে কালীঘাট।