ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসায় নিহত বেলেঘাটার বিজেপি নেতা অভিজিৎ সরকারের মৃতদেহ দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। কমান্ডো হাসপাতালে তাঁর দেহের দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত হবে।
কেন্দ্র সরকারের হাসপাতালে নিহত বিজেপি নেতার মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাইকোর্টে মামলা হয়েছিল। রাজ্য সরকারের হাসপাতালে তাঁর দেহ ময়নাতদন্তের পর প্রশাসন তার দেহ সৎকার করতে চাপ দিয়েছিল। কিন্তু সেই চাপের কাছে মাথা নোয়াইনি অভিজিতের পরিবার। দুর্ঘটনার পর থেকে এই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই চালিয়েছেন বিজেপি নেতা দেবদত্ত মাজি।
ভোটের পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসায় বেলেঘাটার বিজেপি নেতা অভিজিৎ সরকারকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তার বাড়ির কাছেই ওই বিজেপি নেতা খুন হয়েছিলেন। পরিবারের অভিযোগ ছিল তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলে তৃণমূল নেতা পরেশ পাল ও স্বপন সমাদ্দার আশ্রিত গুন্ডারা। সকলের চোখের সামনেই তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা হামলা চালায়। সেদিন ওই বিজেপি নেতার ঘরবাড়ি এমন কি তার বৃদ্ধা মা মাধবী সরকারকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। বাড়িতে থাকা নিরীহ তিন পোষ্যকেও রেহাই দেয়নি সেদিন দুষ্কৃতীরা। পিটিয়ে পিটিয়ে তাদেরও মেরে ফেলা হয়। দেবদত্তবাবু জানান, অভিজিৎ সরকার রাস্তার অসহায় কুকুরদের তুলে এনে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করতেন। মারাত্মক জখম সেই অভিজিৎ সরকারকে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। অভিজিতের দাদা বিশ্বজিত অভিযোগ করেছিলেন, বাড়িতে লাগানো সিসিটিভিও ভেঙ্গে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা।
এরপর অভিজিতের দেহের ময়নাতদন্ত হয়। কিন্তু সেই ময়নাতদন্তের রিপোর্টে সন্তুষ্ট হয়নি অভিজিতের পরিবার এবং দলীয় নেতা কর্মীরা। পুলিশ প্রশাসনের তরফে বার বার অভিজিতের পরিবারের উপর চাপ দেওয়া হয় যাতে তার দেহ সৎকার করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
কিন্তু রুখে দাঁড়ান বিজেপি নেতা দেবদত্ত মাজি। একপ্রকার তাঁর জোরেই মর্গে পাঠানো হয় অভিজিতের দেহ। তারপর মামলা হয় হাইকোর্টে। আবেদন জানানো হয়, কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালনাধীন হাসপাতালে অভিজিতের দেহের আবার ময়নাতদন্ত করার জন্য।
শুক্রবার সেই মামলার শুনানি ছিল। হাইকোর্টে এই মামলায় নির্দেশ দেয় কমান্ড হাসপাতালে যেন অভিজিত সরকারের মৃতদেহের দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত হয়।
অভিজিৎ সরকারের ও তার পরিবারের উপর হামলা এই প্রথম নয়। বিজেপি নেতা দেবদত্ত মাজি অভিযোগ করেন, প্রায় ৯ বছর আগে আরও একবার তৃণমূল নেতা পরেশ পাল আশ্রিত দুষ্কৃতিরা অভিজিৎ ও তার দাদা বিশ্বজিতের উপর হামলা চালায়। আধমরা করে তাদের রেললাইনের ওপর ফেলে আসে। অভিজিতের মা দেবদত্ত মাজিকে এই বিষয়ে জানালে দেবদত্ত মাজি মাঝরাতে রেললাইন থেকে ওই দুজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন। এরপর পরিস্থিতি কিছুটা থিতিয়ে গেলেও বিধানসভা ভোটের ফলাফলের পর আবার হামলার ঘটনায় খুন হন অভিজিত বলে অভিযোগ।
দেবদত্ত মাজি এই ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতেই তা ভাইরাল হয়। ঘটনা সম্পর্কে জানতে পেরে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাও আসেন ওই পরিবারের সাথে দেখা করতে। অভিজিৎ সরকার যাতে বিচার পায় তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার আশ্বাস তিনি দিয়ে গিয়েছিলেন।
সেই সময় থেকেই এই অত্যচারিত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিজেপি নেতা দেবদত্ত মাজি। আজকের হাইকোর্টের রায়ের পর দেবদত্ত বাবু বলেন, “আমি অনেক চাপ সহ্য করেও অভিজিতের দেহ সৎকার করতে দিইনি। আদালতের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের নির্দেশে সেই লড়াই সফলতার দিকে কিছুটা এগিয়ে গেল।”