যে কোনও বিষয় নিয়েই পড়ুয়াদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় রাজি। পড়ুয়ারাই জাতির মেরুদণ্ড, তাঁদের সমস্যা সব সময় শুনতে রাজি। সোমবার এভাবেই যাদবপুরের পড়ুয়াদের ক্ষোভ সামলানোর চেষ্টা রাজ্যপাল তথা আচার্য জগদীপ ধনখড়ের। রাজ্যপালের সফর ঘিরে সোমবার দুপুর থেকে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা ছড়ায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট বৈঠকে যোগ দিতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যান আচার্য জগদীপ ধনখড়। রাজ্যপালের গাড়ি আটকে প্রথমে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন পড়ুয়ারা। রাজ্যপালকে উদ্দেশ্য করে ভেসে আসে একের পর এক মন্তব্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে রাজ্যপালকে তাঁরা মানছেন না বলেও সওয়াল করতে দেখা যায় ছাত্রছাত্রীদের একাংশকে। প্রায় ৫০ মিনিট গাড়িতেই বসেছিলেন রাজ্যপাল। ৫০ মিনিট পর সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ঢোকেন রাজ্যপাল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ঢোকার পরেও রাজ্যপালকে ঘিরে চলে তুমুল বিক্ষোভ। বিক্ষোভে সামিল হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী-সংগঠনও। একইসঙ্গে রাজ্যপালকে তাঁদের প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে সওয়াল করে চলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। শেষমেশ পড়ুয়াদের দাবি মেনে তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হন আচার্য জগদীপ ধনখড়। প্রথমেই তিনি পড়ুয়াদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘পড়ুয়াদের সব প্রশ্নের উত্তর দেব। গত ৫ মাস ধরে সেই কাজই করে চলেছি।’ একইসঙ্গে তিনি আরও জানান, সোমবার যাদবপুরে এলে পড়ুয়াদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হতে পারে এই আশঙ্কা তিনি আগেই করেছিলেন। কিন্তু পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলতে তিনিও একইভাবে আগ্রহী ছিলেন, তাই এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন তিনি।
CAA নিয়ে রাজ্যপালের অবস্থান জানতে চান এক পড়ুয়া। ওই ছাত্রকে প্রত্যুত্তরে স্মারকলিপি জমা দিতে বলেন রাজ্যপাল। স্মারকলিপি পেলে সে বিষয়ে তিনি আলোচনায় প্রস্তুত বলেও জানান রাজ্যপাল।
পড়ুয়াদের সঙ্গে আলাপচারিতায় সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বশাসন নিয়েও মুখ খোলেন রাজ্যপাল। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বশাসন থাকা জরুরি।’ সবক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ তিনি সমর্থন করেন না বলেও জানান। নাগরিকত্ব আইন নিয়ে এদিন রাজ্যপাল আরও বলেন, ‘নাগরিকত্ব আইন নিয়ে কিছু বিতর্ক আছে। পড়ুয়াদের এবিষয়ে প্রশ্ন থাকলে তিনি তাঁদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এবিষয়ে আলোচনায় প্রস্তুত।’
এরই পাশাপাশি নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসি নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে গন্ডগোল নিয়েও এদিন মুখ খোলেন রাজ্যপাল। ‘অশান্তি বা গন্ডগোল কখনও কোনও দেশের ভাল করতে পারে না’। নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসির প্রতিবাদে তুমুল আন্দোলন চলে এরাজ্যেও। আন্দোলনের নামে এককথায় তাণ্ডব চলে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। বাস জ্বালিয়ে, ট্রেন পুড়িয়ে চলে তাণ্ডব। জেলায় জেলায় রাস্তায় টাযার জ্বালিয়ে চলে পথ অবরোধ। রেললাইনে আগুন জ্বেলে চলে রেল অবরোধ। একাধিক রেলস্টেশনেও চলে ভাঙচুর। এদিন রাজ্যের অশান্তির সেই ঘটনা নিয়েও রাজ্যপালকে প্রশ্ন করেন এক পড়ুয়া।
এপ্রসঙ্গে বলতে গিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধেই ক্ষোভ উগরে দেন রাজ্যপাল। তিনি স্পষ্ট জানান, রাজ্যে অশান্তি নিয়ে সরকারের কাছে একাধিকবার রিপোর্ট চেয়েছিলেন তিনি। রাজ্যের তরফে তাঁর চিঠির উত্তর দেওয়া হয়নি বলেও এদিন অভিযোগ করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।