বাংলায় রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা নিয়ে গতকালই উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। মঙ্গলবার দুপুরে তিনি রাজভবনে ডেকে পাঠালেন রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্রকে।
লোকসভা ভোটের পর থেকে বিক্ষিপ্ত হিংসার ঘটনা ঘটছে রাজ্য জুড়ে। তাতে শাসক দল এবং বিরোধী দলের অন্তত পনেরো জন কর্মীর ইতিমধ্যে প্রাণহানি হয়েছে। সব থেকে বেশি অস্থির হয়ে রয়েছে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা। বিশেষ করে দুটি মহকুমা এলাকা,- বনগাঁ ও ব্যারাকপুর। রবিবার নতুন করে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়েছেন ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং। সোমবার তাঁকে দেখতে হাসপাতালেও গিয়েছিলেন রাজ্যপাল। তার পর বেরিয়ে আসার সময় তিনি বলেছিলেন, “বাংলায় হিংসার ঘটনা দেখে আমার কষ্ট হচ্ছে”। তাঁর কথায়, “সাংবিধানিক পদে থেকে আমি শুধু এটুকুই বলতে পারি যে বাংলায় আইনের শাসন কায়েম থাকুক। হিংসা, সন্ত্রাস বন্ধ হোক। বাংলায় উন্নয়নের পথে হাঁটুক”।
এর পরই মঙ্গলবার ডিজিকে রাজভবনে ডেকে পাঠান রাজ্যপাল। রাজনৈতিক ভাবে এ ঘটনা অনেকেই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। কেন না গত এক দশকে বাংলায় হিংসার ঘটনা নিয়ে রাজভবন যতবারই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, ততবারই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অতীতে বাম জমানায় বাংলার রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা দেখে তৎকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী বলেছিলেন, ‘হাড় হিম করা সন্ত্রাস।’ তখন প্রকাশ্যে রাজভবনের ভূমিকার সমালোচনা করেছিলেন বাম নেতারা। এমনকি দিল্লিতে নালিশও করেছিলেন। বলেছিলেন, রাজ্যপাল রাজনীতি করছেন।
পরবর্তীকাল বাংলায় তৃণমূল জমানায় রাজনৈতিক হিংসা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিতর্কে মুখে পড়েছেন দুই রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন এবং কেশরীনাথ ত্রিপাঠি।
বাংলায় নতুন রাজ্যপালের সঙ্গে এখনও তৃণমূলের সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। রাজ্যপাল হিসাবে তাঁর ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই টুইট করে মমতা তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। পরে রাজভবনে গিয়ে একদিন রাজ্যপাল ও তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎও করেন মুখ্যমন্ত্রী।
তবে সেটা যেমন একটা দিক, তেমনই এও সত্যি যে নতুন রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে তৃণমূলের মধ্যে উদ্বেগ ইতিমধ্যে বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে অর্জুন সিংকে দেখতে রাজ্যপালের রাজভবনে চলে যাওয়াটার তাৎপর্য রয়েছে। তৃণমূলের এক নেতা ঘরোয়া আলোচনায় বলেন, অর্জুন কী ধরনের নেতা সবাই জানেন। তাঁর মাথায় সামান্য চোট লেগেছে। তা দেখতে হাসপাতালে চলে গেলেন ধনকড়, এবং এর মধ্যে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই তা কি বিশ্বাসযোগ্য? তাঁর কথায়, সুপ্রিম কোর্টের পোড় খাওয়া আইনজীবী ছিলেন জগদীপ ধনকড়। সাংবিধানিক এবং আইনি বিষয় তাঁর গুলে খাওয়া। উপরি লোকসভা ভোটে এ বার বাংলায় রক্তের স্বাদ পেয়েছে বিজেপি। সব মিলিয়ে চাপের আশঙ্কা তো রয়েছেই।