মুখ্যমন্ত্রী দেখুন, “ডোমকলের ছাত্রীরা কেমন অভ্যর্থনা জানিয়েছে আমাকে!”

বুধবার মুর্শিদাবাদের ডোমকলে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। একে তো সে জন্য নবান্নের থেকে হেলিকপ্টার চেয়ে তিনি পাননি। উপরি তিনি ডোমকলে ঢোকার মুখে তাঁকে কালো পতাকা দেখান স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা। কিন্তু এতকিছু সত্ত্বেও ডোমকল কলেজের ছাত্রীরা যে ভাবে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান, তাতে যারপরনাই আপ্লুত হয়ে পড়েন ধনকড়।

এর পরেই মুখ্যমন্ত্রীকে মেনশন করে টুইট করেন রাজ্যপাল। লেখেন, “দেখুন, কলেজের ছাত্রীরা আমাকে কেমন আন্তরিকতার সঙ্গে অভ্যর্থনা জানিয়েছে!”

এখানেই থেমে থাকেননি ধনকড়। মুখ্যমন্ত্রীকে মেনশন করে উপর্যুপরি টুইট করেন। তাঁর অভিযোগ, যেখানে তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানো হচ্ছিল, তার পাশেই পুলিশ নীরব হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বিক্ষোভকারীদেরই যেন মদত করছিল পুলিশ। আর তাঁর অনুষ্ঠানস্থলে কোনও পুলিশের দেখা মেলেনি। এ কথা বলেই রাজ্যপাল প্রশ্ন তোলেন, “এ সবই সাজানো নয়তো?”

সাংববিধানিক গণতন্ত্রে কোনও রাজ্যপালের তরফে রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের তাৎপর্য গুরুতর। এর মোদ্দা অর্থ একটাই—তা হল শাসক দল ও সরকার মিলে রাজ্যপালের সঙ্গে তীব্র অসহযোগিতা শুরু করেছে। হালফিলে কোনও রাজ্যে রাজভবন ও সরকারের মধ্যে সংঘাত এতো তীব্র আকার ধারন করার নজির বিশেষ নেই। পুদুচেরিতেও অবশ্য কিছুটা অশান্তি পেকেছে। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী নারায়ণস্বামী রাজ্যের লেফটেন্যান্ট গভর্নর কিরণ বেদীকে হিটলারের বোন বলে মন্তব্য করে বসেছেন।

রাজ্যপাল আসলে বুঝিয়ে দিতে চাইলেন, শাসকদল যতই লোকলস্কর জুটিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে স্লোগান দিক, বিক্ষোভ দেখাক, মানুষের সমর্থন তাঁর দিকেই। সেটাই তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে মেনশন করে স্পষ্ট করতে চেয়েছেন।

তবে বাংলার রাজ্যপালের ভূমিকাও দেখার মতোই। এ দিন ডোমকলের অনুষ্ঠানের পর তিনি যে মেজাজে টুইটের পর টুইট করেছেন তাতে বোঝা যাচ্ছে, ধনকড় শেষ দেখে ছাড়তে চেয়েছেন।

এর আগে রাজ্যপালকে সরাসরি ‘বিজেপির পার্টি ম্যান’ বলে আক্রমণ শানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু মঙ্গলবার রাজভবনের তরফে যে ডোমকল সফরের বিবৃতি জারি করা হয়েছিল তাতে লেখা হয়েছিল প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বর্তমান ডোমকলের বিধায়ক আনিসুর রহমানের আমন্ত্রণেই সেখানে যাচ্ছেন। আনিসুরবাবু দীর্ঘদিনের সিপিএম নেতা। দু’দশক রাজ্যের প্রাণীসম্পদ দফতরের মন্ত্রী ছিলেন। এদিনের টুইটেও রাজ্যপাল লেখেন, “প্রাক্তনমন্ত্রী তথা বিধায়ক আনিসুর রহমান আমায় উষ্ণ অভ্যর্থনা দিয়ে স্বাগত জানিয়েছেন।”

গত পাঁচদিনে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার মুর্শিদাবাদ সফরে গেলেন রাজ্যপাল। গত সপ্তাহেই গিয়েছিলেন ফারাক্কা কলেজের অনুষ্ঠানে। সেদিনও রাজভবন হেলিকপ্টার চেয়েছিল। কিন্তু সরকার জানিয়ে দিয়েছিল হেলিকপ্টার নেই।

বুধবারের সফরের জন্যও হেলিকপ্টার চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু ফের না করে দেওয়া হয় নবান্নের তরফে। শেষমেশ সড়ক পথেই মুর্শিদাবাদ যান। যাওয়ার পথে কৃষ্ণনগরের রাস্তা খারাপ নিয়েও কটাক্ষ করেন রাজ্যপাল। ফারাক্কা সফরের দিনও বলেছিলেন, জাতীয় সড়কগুলি তো ঠিকই আছে! কিন্তু রাজ্য সড়কগুলোরই বেহাল দশা।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.