বাংলার রাজ্য সরকরি কর্মীদের সব থেকে সংবেদনশীল জায়গা ছুঁলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ ইঙ্গিত দিলেন, বাংলায় বিজেপি ক্ষমতায় এলে চালু হবে সপ্তম বেতন কমিশন৷ মোদীর বক্তব্য, দিল্লিতে সপ্তম বেতন কমিশন রয়েছে, ত্রিপুরাতে রয়েছে৷ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ এখনও ষষ্ঠ বেতন কমিশনও পায়নি৷ এরপরই একধাপ এগিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারকে আক্রমণ করেন মোদী, ‘‘বাংলায় পিসি-ভাইপোর সরকার তাদের পার্টিতে জগাই-মাধাই ভর্তি করে রেখেছেন৷ এখানকার যুবকরা পরীক্ষায় পাশ করে চাকরি পাননা৷ শিক্ষিত যুবকদের বেতন দেওয়ার টাকা নেই৷ গুন্ডাদের দেওয়ার টাকা আছে৷ সরকারি কর্মীদের ডি এ দেওয়ার টাকা নেই, সপ্তম বেতন কমিশন দেওয়ার টাকা নেই৷’’
রাজ্য সরকারি কর্মীদের সপ্তম বেতম কমিশনের প্রতিশ্রুতি ইতিমধ্যেই দিয়ে রেখেছে বিজেপি৷ বাংলায় বিজেপি ক্ষমতায় এলে প্রথম ক্যাবিনেট মিটিংয়েই সরকারি কর্মীদের জন্য সপ্তম বেতন কমিশন ঘোষণা করা হবে৷ বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ মালদহের জনসভা থেকে রাজ্য সরকারি কর্মীদের জন্য সপ্তম বেতন কমিশন ঘোষণা করে দিয়েছেন৷
পরিসংখ্যান দিয়ে বিজেপি বলেছে, ১৩ তম অর্থ কমিশনের আওতায় ইউপিএ জমানায় শেষ পাঁচ বছরে বাংলায় ১ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা এসেছে৷ ১৪ তম বেতন কমিশনের আওতায় মোদীজি দিয়েছেন ৩ লাখ ৯৫ ৪০৬ কোটি টাকা৷ বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ এক জনসভায় প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘‘টাকা তো কম পড়বেই৷ দিদি অর্ধেক টাকা আপনার লোক খায়, বাকি টাকা অনুপ্রবেশকারীরা খায়৷’’ অমিত প্রশ্ন তুলেছেন ‘‘ রাজ্যে ওয়াকফের জমি কোথায় গেল জবাব দিন …৷’’
সপ্তম বেতন কমিশন নিয়ে মমতাকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বামফ্রন্টও৷ আগেই বামফ্রন্ট প্রচার জোরদার করেছে৷ বাম কর্মী সংগঠনগুলি বলেছে, ৩৪ বছরে ৫টা পে-কমিশন, সময়মত মহার্ঘ ভাতা দিয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু৷ নিজের গাড়ির চালককে গাড়ির দরজা খুতে নিষেধ করতেন তিনি৷ কারণ ওই চালকের পরিচয় তিনি সরকারি কর্মী৷ শুধু মাত্র মুখ্যমন্ত্রীর ড্রাইভার নন৷ সরকারি কর্মীদের বেতন কমিশনের উন্নয়নের দাবিতে প্রচারও শুরু করা হয়েছে৷ বামেদের দাবি, ডি এ চাইলে সরকারি কর্মীদের বাম সরকার কখোনও কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউ করতে বলেনি৷ পার্থক্য চেতনায়৷
রাজ্য সরকারি কর্মী সংগঠনগুলিরও অনেক দিনের অভিযোগ, গত তিন বছর ধরে বেতন কমিশনের মেয়াদ বাড়িয়েই চলেছে সরকার৷ শেষবার যে বেতন কমিশনের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছিল, তা কিছুদিনের মধ্যেই শেষ হত৷ কিন্তু শেষ হওয়ার আগেই ফের ৬ মাস মেয়াদ বাড়ানো হল৷ তবে, মেয়াদ বাড়ানোই শেষ কথা নয়৷ বেতন কমিশন কিংবা মহার্ঘ ভাতা নিয়ে সরকারি কর্মীদের একগুচ্ছ অভিযোগ রয়েছে৷ যেমন, ভারতবর্ষের বেশিরভাগ রাজ্যে ইতিমধ্যেই সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ মোতাবেক কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারিদের মতো সংশোধিত বেতন কাঠামো চালু করে দেওয়া হয়েছে ৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা যদি এতটাই এগিয়ে থাকতো তবে রাজ্য সরকারি কর্মীদের এই হাল কেন ? দক্ষিণ ভারতের কেরল, অন্ধপ্রদেশ এবং কর্ণাটকে সংশোধিত বেতন কাঠামোর হার কেন্দ্রীয় সরকারের থেকেও বেশি ৷ ওইসহ রাজ্যগুলিতে কমিশন এক বছরের কম সময়ে সুপারিশ সমূহের প্রকাশ করেছিল ৷ পশ্চিমবঙ্গের কর্মচারিদের সংখ্যা ওই সব রাজ্যগুলির থেকে বেশি নয় ৷ তবে এরাজ্যে বেতন কমিশন এত দীর্ঘ কেন ?
২০১৪ সালে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বিধানসভায় বলেছিলেন, রাজ্য সরকারি কর্মীদের সংখ্যা ৩ লক্ষের একটু বেশি ৷ তার মধ্যে প্রচুর কর্মী অবসর গ্রহণ করেছে এবং শূন্যপদগুলি পূর্ণ হয়নি৷ তবে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের তালিকাভুক্ত উপভোক্তার সংখ্যা নয় নয় করে হলেও প্রায় ৯ লক্ষ ৷ এরা কী বঞ্চিতই থেকে যাবেন ? জিনিসের দাম বেড়ে গেলে কাজে আসে মহার্ঘভাতা ৷ রাজ্য সরকারি কর্মচারিদের ৪২ শতাংশ মহার্ঘভাতা বাকি ৷ সংশোধিত বেতন এবং বকেয়া মহার্ঘ ভাতা না দেওয়ার ফলে একজন গ্রুপ-ডি অবং গ্রুপ-সি পদে কর্মরত কর্মী ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ১ লক্ষ ১৪ হাজার ৪০৪ এবং ১ লক্ষ ৩৮ হাজার ৫৮১ টাকা কম পাচ্ছেন৷
বিজেপি শাসিত আরও ১৯টি রাজ্য সপ্তম বেতন কমিশনের সুবিধা ভোগ করছে৷ তালিকায় আছে — অরুণাচল প্রদেশ, অসম, গোয়া, গুজরাট, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ, ঝাড়খন্ড, মহারাষ্ট্র, মণিপুর, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ড৷ অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, জম্মু ও কাশ্মীর, সিকিম এবং নাগাল্যান্ডে সরকারের জোট সঙ্গী বিজেপি৷ মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড়ে – বিজেপি সরকার নেই৷ কিন্তু বিজেপি সরকার থাকার সময়েই সপ্তম বেতন কমিশন চালু করেছে৷ তবে সপ্তম বেতন কমিশনের সুবিধা পাচ্ছেন সেখানকার রাজ্য সরকারি কর্মীরাও৷