আর্থিক ভাবে অনগ্রসর শ্রেণির জন্য সরকারি চাকরি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করার জন্য গত জানুয়ারি মাসে সংবিধান সংশোধন বিল পাশ করিয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার।
সেই পথে হাঁটতে পশ্চিমবঙ্গ সময় নিল আরও ছ’মাস। লোকসভা ভোট হয়ে গিয়েছে। এ বার বাংলাতেও আর্থিক ভাবে অনগ্রসর শ্রেণিকে সরকারি চাকরি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ সংরক্ষণের সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাবে অনুমোদন দিল মমতা-মন্ত্রিসভা। খুব শিগগির এ ব্যাপারে বিল পাশ হবে বিধানসভায়।
সাংবিধানিক ব্যবস্থা অনুযায়ী ৫০ শতাংশের বেশি আসন সংরক্ষণ করার অনুমতি ছিল না। সেই কারণে, গত ৬ ও ৭ জানুয়ারি সংসদে সংবিধানের ১২৪ তম সংশোধনী বিল পাশ করে মোদী সরকার। তাতে বলা হয়, তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির জন্য যে সংরক্ষণ রয়েছে, তা বহাল থাকবে। তার উপর আরও ১০ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করা হবে আর্থিক ভাবে অনগ্রসর শ্রেণির জন্য। কেন্দ্রের নতুন আইনে বলা হয়েছে, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্যও এই নিয়ম বলবৎ হবে।
কেন্দ্র সংবিধান সংশোধন বিল পাশ করানোর পর ৫০ শতাংশ রাজ্যে বিধানসভায় তা পাশ করাতে হয়। সেই কাজ অধিকাংশ রাজ্যই করে ফেলেছিল। ফলে গত ৬ মাসে সর্বভারতীয় স্তরে ইঞ্জিনিয়ারিং বা ডাক্তারি পড়াশোনার প্রবেশিকা পরীক্ষায় সেই সব রাজ্যের আর্থিক ভাবে অনগ্রসর ছেলেমেয়েরা সংরক্ষণের সুবিধা পায়। কেন্দ্রীয় কর্মীবর্গ দফতরের তরফে বলা হয়েছিল, এ জন্য কোনও প্রার্থী তাঁর জেলার জেলাশাসক বা মহকুমা শাসকের থেকে শংসাপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন।
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বিলটি পাশ করানো না হওয়ায় বাংলার ছেলেমেয়েরা সেই সুবিধা পায়নি বলে অভিযোগ। অনেকের মতে, লোকসভা ভোটের আগে মোদী সরকারের এই পদক্ষেপ ছিল একেবারেই রাজনৈতিক। ভোটে এর সুবিধা তুলতে চেয়েছে বিজেপি। হতে পারে বাংলায় বিজেপি যাতে এই নব্য সংরক্ষণ বিধির জন্য কোনও রাজনৈতিক সুবিধা না পায়, সেই কারণে চুপ করে বসেছিল নবান্ন। ভোট মিটে যাওয়ার পর এখন তা বাস্তবায়ন করতে নেমেছে।
তবে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এই অভিযোগ খারিজ করতে চেয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “কেন্দ্র ও রাজ্যের প্রস্তাবের মধ্যে ফারাক রয়েছে। দুটি বিষয়ের অর্ডার ভাল করে পড়ুন। আগে আমাদের অর্ডারটা পড়ে দেখুন, বুঝতে পারবেন। আমাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের পার্থক্য কী।” শিক্ষা মন্ত্রীর কথায়, “এর মধ্যে অযথা রাজনীতি খোঁজার দরকার নেই। আগে আমাদের অর্ডারটা আসতে দিন। কোথাও বা কোন রাজ্যে এমনটা হয়েছে আমার জানা নেই। কারণ, এই সংরক্ষণে কেবলমাত্র আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়াদের রাখা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মন্ত্রিসভায় যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা ঐতিহাসিক। কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে এসসি, এসটি, ওবিসিরা রয়েছে। আমারা শুধু আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়াদের রেখেছি।”
তবে বিজেপি মুখপাত্র সায়ন্তন বসু বলেন, শিক্ষামন্ত্রী মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছেন। কেন্দ্র যে সংবিধান সংশোধন বিল পাশ করেছে তাতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির জন্য আসন সংরক্ষণের অতিরিক্ত ১০ শতাংশ আসন আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়াদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হবে। আসল কথা হল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবেতেই রাজনীতি করছেন। তাতে বাংলার ছেলেমেয়েরা বঞ্চিত হলেও পরোয়া নেই।
কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, এটা বাংলার বর্তমান সরকারের পুরনো অভ্যাস। মনমোহন সিং সরকার খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় গরিব পরিবারের জন্য ২ টাকা কেজি দরে চাল গম দেওয়ার প্রকল্প শুরু করেছিল। কিন্তু ওই আইন পাশ হওয়ার পর তক্ষুণি তা বাংলায় বাস্তবায়ন করেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেড় বছর পর তা চালু করেছিলেন। এখন সেটাকেই স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প নাম দিয়ে চালায় বর্তমান সরকার। কিন্তু ওই দেড় বছরে যে কয়েক লক্ষ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হলেন, সেই হিসাব রাজ্য দেয় না।