কলকাতাবাসীদের জন্যে সুখবর, উৎসবের মরশুমে চালুর পথে মাঝেরহাট ব্রিজ

নির্মীয়মাণ মাঝেরহাট ব্রিজের (Majherhat Bridge) মূল অংশের ২২৭ মিটারের সামান্য কিছুটা কাজ এখন আর বাকি। আগামী সপ্তাহে শুরু হবে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর ধাঁচে কেবল জোড়ার কাজ। সোমবার নতুন ব্রিজ নির্মাণের দায়িত্বে থাকা ভারপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়াররা জানালেন, “নদীর উপর ঝুলন্ত বকখালির সেতুর দু’পাশে কেবল জুড়তে সময় লেগেছিল ৪২ দিন। কিন্তু রেল লাইন ও মাটির সার্পোট থাকা মাঝেরহাটের জন্য কেবল জুড়তে ৩০ দিনের কম সময় লাগবে। চেষ্টা হচ্ছে পুজোর আগেই কেবলের কাজ শেষ করার।” পূর্ত দপ্তর দিনে-রাতে নজরদারি চালিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। রঙের কাজও শুরু হয়েছে। তিনটি ডিজাইন তৈরি, নবান্নের পছন্দ হলে পুজোর তিনদিন আগে কাজ শেষ করবেন রঙের ইঞ্জিনিয়াররা। নবান্নের টার্গেট রয়েছে, উৎসবের মরশুমেই মাঝেরহাটে ‘কেবল স্টেইড’ ব্রিজ তিলোত্তমার বুকে নতুন আঙ্গিকে চালু করার।

এ বছর শারদোৎসবে দুর্গা ষষ্ঠী ২২ অক্টোবর। নিম্মচাপের বৃষ্টি উপেক্ষা করেও তদারকিতে থাকা পূর্ত দপ্তরের এক শীর্ষ কর্তা এদিন জানিয়েছেন, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন নির্মাণের টেকনিক্যাল সমস্ত শর্ত ও যাবতীয় সুরক্ষা বিধি মেনেই মাঝেরহাট ব্রিজের কাজ সম্পূর্ণ করা হোক। এখন একটা নীল রঙের ডামি কেবল বসানো হয়েছে। এদিন দুপুরে গিয়ে দেখা গিয়েছে, বৃষ্টির মধ্যেও ব্রিজের পাশে কেবল জোড়ার জন্য ‘সেটআপ’ বসানোর কাজ শুরু করেছেন ইঞ্জিনিয়াররা। কিন্তু পুরোপুরি আসল কেবলের তার জুড়ে দেওয়ার কাজ শুরু হবে আগামী সপ্তাহেই। মূল অংশের ঢালাইয়ে প্রতিদিন জল দেওয়া হচ্ছে এবং নিচের নানা কাজ চলছে। ৬৩৬ মিটার দৈর্ঘ্যের নয়া ব্রিজটি ১৮ মিটার চওড়া এবং চার লেনের হওয়ায় আগের চেয়ে অনেক বেশি গতিতে গাড়ি চলাচল করবে।

যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হয়েছে ব্রিজের দু’দিকে অ্যাপ্রোচ রোড তৈরির কাজ। মাঝে মধ্যে এসে নির্মাণ কাজের গতি নিয়ে তদারকি করে যাচ্ছেন স্বয়ং পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস (Arup Biswas)। আর পূর্তদপ্তরের রাস্তা বিভাগের মুখ্য ইঞ্জিনিয়ার সুস্মিত বন্দ্যোপাধ্যায় কার্যত শিবির করে বসে আছেন। মাঝে একবার পূর্ব রেলের আপত্তিতে নির্মাণের কাজ থমকে গিয়েছিল। কিন্তু অত্যন্ত গোপনে দফায়-দফায় রেলের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেই জটিলতা কাটিয়ে ফের কাজ শুরু করান পূর্তমন্ত্রী। এখন শেষ পর্যায়ের কেবল জুড়লে এবং ভার বহনের টেকনিক্যাল রিপোর্ট পেলেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন ব্রিজ তৈরির দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ার ও কর্মীরা।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে ৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে আচমকা ভেঙ্গে পড়ে মাঝেরহাট ব্রিজ। বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে বেহালা জনপদ থেকে শুরু করে বিস্তীর্ণ দক্ষিণ ২৪ পরগনা যানবাহন পরিষেবা। বিকল্প পথ হিসেবে কলকাতা বন্দর এলাকার হাইড রোড এবং নিউ আলিপুরের টালিগঞ্জ সার্কুলার রোডকে ব্যবহার করা শুরু করে প্রশাসন। রেলের সঙ্গে কথা বলে একটি বেইলি ব্রিজ তৈরি হয় নিউ আলিপুর এলাকায়। কিন্তু তাতেও দুর্ভোগ কমেনি নিত্যযাত্রীদের। ‌প্রথমে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল মাত্র নয় মাসে তৈরি হয়ে যাবে এই নতুন সেতুটি। কিন্তু পূর্ত দপ্তর ও রেল মন্ত্রকের সমন্বয়ের অভাবে ব্রিজ তৈরির কাজ বিলম্ব হয়েছে। ফলে দু’বছরেও সম্পন্ন করা যায়নি মাত্র ৬৩৬ মিটার লম্বা এই ব্রিজ। আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। তাই মনে করা হচ্ছে সেই ভোট ব্যাংকের কথা মাথায় রেখেই চলতি বছর পুজোর মুখেই উদ্বোধন হয়ে যাবে এই বহু প্রতীক্ষিত ব্রিজের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.