Bilingual : From Sanchayita to Saradha, Rose Valley, a dark period in West Bengal – Part 5 – সঞ্চয়িতা থেকে সারদা রোজভ্যালি, পশ্চিমবঙ্গের এক অন্ধকারাচ্ছন্ন কালখন্ড – পঞ্চম ভাগ

পঞ্চম ভাগ

সারদা-কাণ্ডে দোষীদের কড়া সাজা দেওয়ার আইনি অস্ত্র হাতে থাকা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার যথাসময়ে তা প্রয়োগ করেনি বলে মনে করছেন সঞ্চয়িতা-কাণ্ড এবং ওভারল্যান্ড-কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত তদন্তকারী অফিসারদের একাংশ। 

ওই অফিসারদের দাবি, ভারতীয় দণ্ডবিধির যে সমস্ত আইন রয়েছে, তাতেই বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা যায়, অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা যায়, বাজার থেকে তাদের টাকা উদ্ধারও করা যায়। এর জন্য নতুন আইনের প্রয়োজন নেই। অফিসারেরা জানিয়েছেন, ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় মামলা করেই সঞ্চয়িতা কাণ্ডে বাজার থেকে ৪০ শতাংশ টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল। ওভারল্যান্ড-কাণ্ডে ক্রোক করা হয়েছিল অভিযুক্তদের দেড় হাজার বিঘার বেশি জমি। সঞ্চয়িতার মামলা এখনও চলছে। দীর্ঘ আইনি জটিলতার জেরে ধৃত ১৩০ জনের মধ্যে কারও এখনও সাজা হয়নি। ওভারল্যান্ড-কাণ্ডে ধৃত পাঁচ জনের কাউকেই কড়া শাস্তি দেওয়া যায়নি ঠিকই, কিন্তু সেটা উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণের অভাবে। অফিসাররা বলছেন, অভিযুক্তদের এখনও সাজা দেওয়া না গেলেও সঞ্চয়িতা এবং ওভারল্যান্ড-কাণ্ডে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে থানায় এফআইআর করেছিল। তার সুফলও মিলেছে এবং সেটা হয়েছে বর্তমান ফৌজদারি আইনের জেরেই। 

ওই তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, সঞ্চয়িতার ক্ষেত্রে এফআইআর করেছিল অর্থ দফতরের ‘ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন’। ওভারল্যান্ডের ক্ষেত্রে তা করেছিল রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশ সিআইডি। অথচ সেবি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরেও রাজ্য সরকারের কোনও সংস্থাই সারদা-র বিরুদ্ধে এফআইআর করেনি। তারা অপেক্ষা করেছে একটি বৈদ্যুতিন মাধ্যমের বেতন না পাওয়া কর্মীদের দায়ের করা প্রতারণার অভিযোগের জন্য। এ ক্ষেত্রে অন্যের দায়ের করা অভিযোগের উপরেই রাজ্য সরকারকে নির্ভর করতে হচ্ছে। ওভারল্যান্ড-কাণ্ডের তদন্তকারীরা জানান, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৬৭ ধারায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল সিআইডি। সেই ধারায় (নকল কাগজ বানিয়ে প্রতারণার অভিযোগ) দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। অথচ রাজ্য সরকার সারদা-কাণ্ডে এই আইনি অস্ত্রটাই প্রয়োগ করেনি বলে তাঁদের মত। প্রসঙ্গত, ওভারল্যান্ড-কাণ্ডের তদন্তকারী দলের প্রধান তৎকালীন ডিআইজি (সিআইডি) উপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস ২০১১-২০১৬ সময়কালে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী। 

ওই মামলায় উপেনবাবুর এক সহকারীর কথায়, “আমরা ওভারল্যান্ডের মালিক, তাঁর স্ত্রী-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছিলাম। কত জনকে সাজা দিতে পেরেছিলাম সেটা বড় কথা নয়। আমরা আমাদের বাহিনীর সাহায্যে গোটা প্রতারণা চক্রটাকে প্রকাশ্যে এনেছিলাম। ১ হাজার ৫৪৬ বিঘে জমি ক্রোক করছিলাম ।” 

তুলনামূলক বিশ্লেষণ করলে খুবই করুন দেখাবে পরবর্তীকালে পনজি স্কিমগুলির টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়াকে।

বিচার চলাকালীনই সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছিল, হাইকোর্টের গড়ে দেওয়া তালুকদার কমিটি চিটফান্ডের সম্পত্তি বিক্রি করতে পারবে । বিধি অনুসারে কমিটি রাজ্যের ভ্যালুয়ারকে দিয়ে পনজি স্কিমগুলির সম্পত্তির দাম ধার্য করছে, তারপর নিলামে তুলছে। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি পনজি স্কিমের সম্পত্তি নিলামে তোলার পর দেখা যাচ্ছে কোনও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। এমন–কি বিবাদী বাগ অঞ্চলে অফিসপাড়াতেও। তালুকদার কমিটি তাই দাম কমানোর অধিকার চেয়ে হাইকোর্টের কাছে আবেদন জানিয়েছিল । ইতিমধ্যে এমপিএস, প্রয়াগ–সহ ৩২টি চিটফান্ডের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা, তা নিলাম করা এবং প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে প্রতারিতদের প্রাপ্য মেটানোর নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। এই ৩২টির মধ্যে ২৫টি কোম্পানির ব্যাপারে বাজেয়াপ্ত সম্পত্তির নিলামের প্রক্রিয়া পুরোদমে শুরু করেছিল কমিটি। এগুলো হল এম‌পিএস, হ্যানিম্যান হারবাল, এমএসডি গ্রুপ, স্বর্ণভূমি গ্রুপ, মাল্টিপারপাস বায়ো ইন্ডিয়া, কোর গ্রুপ, প্রয়াগ গ্রুপ, আসদা গ্রুপ, রাহুল গ্রুপ, পৈলান টাওয়ার গ্রুপ, ভিভজিওর, গ্রেটার কলকাতা, লাইফ কেয়ার অ্যাগ্রো প্রোজেক্ট, রুফারস্‌, পিডিএস অ্যাগ্রো, প্রিমিয়ার ডেলমার্গ, এজি ওয়ে ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, টোগো রিটেল মার্কেটিং, শ্যাম অ্যাগ্রো ফার্মিং, আরএন পলিমার্গ, ডলফিন গ্রুপ, প্রিমিয়ার অ্যাগ্রো, রিয়েল সানশাইন, অ্যানেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার। 

বিচারপতি এসপি তালুকদার বলেছিলেন, এই কমিটি গঠিত হয়েছে সাংবিধানিক অধিকার বিশ্লেষণ করে হাইকোর্টের বিশেষ উদ্যোগে। আমরা চেষ্টা করছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রতারিতদের প্রাপ্য ফিরিয়ে দেওয়ার। কমিটি একটা ওয়েবসাইট খুলেছিল। প্রাপকরা এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তথ্যপ্রমাণ–সহ আবেদন জানাবেন। কমিটির কিছু জিজ্ঞাস্য থাকলে ইন্টারনেটের মাধ্যমেই প্রাপকদের সঙ্গে যোগাযোগ হবে। 

এ ব্যাপারে জেলা ও মহকুমা শাসকদের সহযোগিতা নেওয়া হবে। প্রাপ্য অর্থ প্রাপকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দিয়ে দেওয়া হবে। চেকের মাধ্যমে বা কোনও এজেন্টের মাধ্যমে নয়। ফলে চেক বাউন্স করার সম্ভাবনা নেই। তবে কমিটিকে নির্ভর করতে হচ্ছিল সরকারি ভ্যালুয়ারের ওপর। হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চে ১০০টিরও বেশি চিটফান্ডের মামলা বিচারাধীন। প্রত্যেকেরই আবেদন, কমিটির মাধ্যমে তাদের আবেদন মেটানো হোক। ৭০টির বেশি মামলার শুনানি এখনও হয়নি। তবু আশায় বুক বেঁধে আছেন বিচারপ্রার্থীরা।‌

চুরি হয়ে যাওয়ার পরে তো আস্তাবলে তালা ভালই পড়েছে কিন্তু চুরি হওয়ার আগে কি তা ঠেকানোর জন্য ন্যূনতম চেষ্টা করা হয়েছিল। বাস্তব কিন্তু অন্য কথা বলছে ।সমকালীন নথি থেকে যে সত্যটা প্রকট হয়ে গিয়েছে, তা হল, ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা লগ্নি সংস্থাগুলির রাশ টেনে ধরতে সরকারের হাতে অস্ত্র তুলে দিতে চেয়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক৷ কিন্তু সরকারই তা প্রয়োগে কোনও আগ্রহ দেখায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে৷ কিন্তু কী সেই রক্ষা কবচ? 

আরবিআই আইনের ৪৫(টি) ধারা অনুযায়ী, কোনও সংস্থার টাকা তোলার বৈধ অনুমতি আছে কি না, তা যাচাই করতে কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত করার অধিকার পাবেন থানার ওসিরা৷ আইনটি প্রয়োগ করার কথা জানিয়ে রাজ্য বিজ্ঞপ্তি জারি করলে আদালতের নির্দেশ নিয়ে যে কোনও সময় যে কোনও অর্থলগ্নি সংস্থার কাগজপত্র সিজ করতে পারবেন তাঁরা৷ নথিপত্রে বেআইনি কিছু মিললে থাকবে কড়া শাস্তির সংস্থান৷ আরবিআইয়ের অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমরা এ ব্যাপারে অনুরোধ করেছি৷ ২০১১-র আগস্ট থেকে মুখ্যসচিবকে একাধিক বার চিঠি দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ৪৫(টি) ধারাটি কার্যকর করা হয়নি৷ তত্কালীন মুখ্যসচিব সমর ঘোষ বলেন, এই কাজের নোডাল ডিপার্টমেন্ট অর্থ দফতর৷ বিষয়টি অবশ্যই ওদের জানানো হয়েছিল৷ তবে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল কি না, তা এখন মনে নেই৷

সরকারি নথিও কিন্তু অন্য কথা বলছে৷ মহাকরণ সূত্রে খবর, লগ্নি সংস্থাগুলির বেআইনি কার্যকলাপ সম্পর্কে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে ২০১১-র আগস্ট থেকে ২০১২-র ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরকে মোট চারটি চিঠি পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক৷ কেন্দ্রের তরফে রাজ্যকে এটাও বলা হয়েছিল, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর অফিসকে রাজ্য সরকার কোনও জবাব দেয়নি৷ তারা যে বারবার চিঠি দিয়েও সাড়া পাচ্ছে না, সেটাও রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরকে মনে করিয়ে চিঠি আসে দিল্লি থেকে৷ কিন্তু তাতেও কোনও কাজই হয়নি বলে সূত্রের খবর৷

২০১২-র ২৪ ফেব্রুয়ারি রাজ্যকে একই বিষয়ে ফের চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক৷।সেই চিঠিতেও রাজ্যকে মন্ত্রকের পাঠানো আগের চিঠিগুলির কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়৷ তারপরও রাজ্যের তরফে কোনও সাড়া দেওয়া হয়নি বলে মহাকরণ সূত্রে খবর৷ রাজ্যকে যখন কেন্দ্রের তরফে ওই সমস্ত চিঠি পাঠানো হয়, তখন রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব জ্ঞানদত্ত গৌতম৷ পরবর্তীকালে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের পক্ষ থেকে

এ প্রসঙ্গে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি৷ 

 এই পনজি স্কিম গুলি সাধারণ মানুষের জীবনকে তো দুর্বিষহ করে তুলেছিল্ই তাছাড়াও ক্রীড়াজগৎকেও দিয়েছিল সাময়িকভাবে এক প্রচন্ড আঘাত ।

শুধু ইস্টবেঙ্গল নয়, লাল হলুদ কর্তা নীতু সরকার গ্রেপ্তার হওয়ায় পুরো কলকাতা ময়দান জুড়েই নেমে এসেছিল আশঙ্কার কালো মেঘ৷ আশঙ্কা ছিল, আগামী দিনে কলকাতা ফুটবলই হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে স্রেফ স্পনসরের অভাবে৷

প্রয়াগ তার আগের দু’ মরসুমে ইউনাইটেড স্পোর্টসকে দিয়েছিল প্রায় ১৪ কোটি টাকা । পনজি স্কিম কেলেঙ্কারিতে 

প্রয়াগের ব্যবসা ডকে ওঠায় স্পনসরের অভাবে আই লিগ খেলা টিম ইউনাইটেড স্পোর্টস টিমই নামাতে পারেনি পরবর্তী কলকাতা লিগে৷ 

সারদা কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পরই ময়দান থেকে একে একে সরে যেতে থাকে অনেক অর্থ লগ্নি সংস্থা৷ প্রয়াগ (ইউনাইটেড), পৈলান (আইএফএ, এআইএফএফ), টাওয়ার (জানবাজার, জর্জ, এয়ারলাইন্স কাপ), এনভিডি (ভবানীপুর, মোহনবাগান, আইএফএ), জি গ্রুপ (ওয়াইএমএসএ), ফাইভ স্টার, ওয়ারসি (সাদার্ন সমিতি),কেডব্লিউআইএল (টালিগঞ্জ) রোজভ্যালি (মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, আইএফএ, ভবানীপুর) সরে যায় ক্লাবগুলো৷ ওই সংস্থাগুলোর মোট স্পনসরশিপ বাবদ বিনিয়োগ ছিল প্রায় ১৯ কোটি টাকা৷ 

ময়দানি দুর্নীতি দেখে কিছুটা ভয়েই বেশ কিছু অন্য সংস্থা স্পনসরশিপ থেকে তুলে নেয় ক্লাব থেকে৷ এদের মধ্যে ছিল বোস গ্রুপ (মহামেডান, টালিগঞ্জ, আইএফএ), ক্যামেলিয়া (জর্জ, কালীঘাট), টেকনো (এরিয়ান), চিরাগ (ইউনাইটেড), জৈন গ্রুপ (টালিগঞ্জ), উন্নয়ন গ্রুপ (আইএফএ), পিনকন (কালীঘাট, রেফারি সংস্থা), ড্রিমস আনলিমিটেড (মিলনবীথি), ডিকেএস (ঐক্য), চৌধুরী গ্রুপ (হাওড়া ইউনিয়ন), অ্যান্ড্রূ ইউল (হাওড়া ইউনিয়ন)৷ এদের স্পনসরশিপের টাকার পরিমাণও প্রায় ২ কোটির কাছাকাছি৷ 

জানা গেছিল, কলকাতায় আয়োজিত ২০১২ সালের ৮ ডিসেম্বর একটি ফুটবল খেলার আয়োজন করা হয়। এই খেলায় ব্রাজিলের বেশ কয়েকজন তারকা মাঠে হাজির ছিলেন। তাদের অর্থ প্রদান নিয়ে কিছু সমস্যা হলে সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন সেই অর্থের ব্যবস্থা করেন। 

শুধু ফুটবল নয় পনজি স্কিম কেলেঙ্কারিতে প্রভাবিত হয়েছিল ক্রিকেট জগতও ।

রোজভ্যালি কাণ্ডে জড়িয়েছিল শাহরুখ খানের ফ্র্যাঞ্চাইজি টিম কলকাতা নাইটরাইডার্সের নাম। আইপিএলের আঙিনায় কলকাতা নাইট রাইডার্সের ক্রিকেটাররা নিজেদের জার্সিতে রোজভ্যালির লোগো লাগিয়ে মাঠে নামতেন। কলকাতার রোজভ্যালির অফিস থেকে উদ্ধার হওয়া নথি ঘেঁটে সিবিআই-এর আধিকারিকরা জানতে পেরেছিলেন, চুক্তি অনুযায়ী আইপিএলে খেলাকালিন রোজভ্যালির সঙ্গে কলকাতা নাইট রাইডার্সের মধ্যে বিপুল পরিমাণ আর্থিক লেনদেন হয়েছিল।

সাধারণ মানুষের সমস্ত সঞ্চয় চলে যাওয়া যে কি বিপুল বিপদের সম্মুখীন করে একটি পরিবারকে, তার উল্লেখ আমরা পাই স্বাধীনতার পূর্বে গিরিশচন্দ্র ঘোষের প্রফুল্ল নাটকে এবং স্বাধীনতার পরে সত্যজিৎ রায়ের মহানগর চলচ্চিত্রে , একের পর এক পঞ্জি স্কিমের ব্যর্থতা পশ্চিমবঙ্গের ঘরে ঘরে এই দৃশ্যের পুনরাভিনয় ঘটিয়ে চলেছে অনবরত। কিন্তু শুধুমাত্র ব্যক্তিগত বা পারিবারিক ট্রাজেডির সৃষ্টি নয় ,পঞ্জি স্কিমগুলির এই উপর্যপুরি ব্যর্থতা দেশ এবং রাজ্যের অর্থনীতিকেও প্রচন্ড আঘাত করছে। বিশ্লেষণে দেখা যাক , পঞ্জি স্কিমগুলি পশ্চিমবঙ্গের বুক থেকে সব মিলিয়ে প্রায় 4 লক্ষ কোটি টাকা তুলেছে ,যেই টাকা প্রায় পুরোটাই অদৃশ্য হয়ে গেছে রাজ্যের অর্থনীতির মধ্যে থেকে। এই অর্থ যদি উপযুক্ত জায়গায় আমানত হিসেবে সঞ্চয় হতো তাহলে ঋণ হিসেবে এই অর্থ সত্ উদ্যোগপতিরা পেত অর্থাৎ বলা যায় চার লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ হতে পারতো পশ্চিমবঙ্গের বুকে , যার থেকে হত প্রচুর কর্মসংস্থান , অর্থাৎ উপার্জন বৃদ্ধি পেত, উপার্জন বৃদ্ধি পাওয়ায় সেই বাড়তি উপার্জিত অর্থ পশ্চিমবঙ্গের বাজারে আসত অর্থাৎ চাহিদা বৃদ্ধি পেত, সেই চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে অর্থাৎ সেই চাহিদা অনুযায়ী জোগান বজায় রাখতে গিয়ে উৎপাদন বাড়তো অর্থাৎ কর্মসংস্থান আবার বৃদ্ধি পেত ,আবার এই চার লক্ষ কোটি টাকার থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক বা ডাকঘরের সুদ হিসেবে বছরে 30 হাজার কোটি টাকা বা মাসে আড়াই হাজার কোটি টাকা আয় হত অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের বাজারে আসত অর্থাৎ আরো চাহিদা বাড়তো এবং সেই চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে অর্থাৎ সেই চাহিদা অনুযায়ী জোগান বজায় রাখতে গিয়ে আবার কর্মসংস্থান বৃদ্ধি হত অর্থাৎ একদিকে বিনিয়োগ এর ফলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি জনিত কারণে উপার্জন বৃদ্ধি অন্যদিকে সুদের আয় থেকে উপার্জন বৃদ্ধি অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির সামগ্রিক উপার্জন ও সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধি পেত অনেক বেশি , অর্থাৎ উপার্জন বৃদ্ধি-চাহিদা বৃদ্ধি- যোগান বৃদ্ধি- কর্মসংস্থান বৃদ্ধি-পুনরায় উপার্জন বৃদ্ধি এই রূপ একটি অর্থনীতির বৃদ্ধি চক্রে প্রবেশ করতে পারতো পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতি ,যা হলো না পঞ্জি স্কিম গুলির ব্যর্থতার জন্য।

এ পর্যন্ত পড়ে মনে হতেই পারে যে এই পনজি স্কিম কিংবা অর্থলগ্নি সংস্থা গুলি তাদের ব্যবসাটি ভালোভাবে চালিয়ে জনসাধারণের কাছ থেকে তোলা টাকা সময়মতো ফেরত দিয়ে দিতে পারত ব্যবসাটি বৈধ এবং আইনানুগ থাকতো। সংস্থাগুলি জনসাধারণের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করেছে ,  আমানত দিয়ে ব্যবসা করেছে , হয়তো কিছুটা লাভ্ও করেছে কিন্তু ফেরত দেবার সময় ফেরত দিতে গিয়ে তারা দেখছে যত টাকা ফেরত দেবে বলেছিল কত টাকা লাভ হয়নি, সেখানেই তারা চুক্তিভঙ্গের দায়ে পড়েছে, দেউলিয়া হয়েছে বা তাদের ব্যবসা লাটে উঠেছে এবং সেখানেই কাজটি হয়েছে বেআইনি। সংস্থাগুলি যদি সঠিকভাবে ব্যবসা করে , উপযুক্ত পরিমাণে লাভ করত এবং জনসাধারণকে তাদের প্রদেয় অর্থ সময়মতো পরিশোধ করতে পারতো তাহলে তাদের ব্যবসা হত আইনসম্মত কিন্তু এই চিন্তাটিও ভুল ।একটু ভেবে দেখা যাক ,যখন সারদা ,রোজভ্যালি বা অন্যান্য অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির ব্যবসা পুরোদমে রমরমিয়ে চলছে, যখন তাদের ওপর তাদের আমানতকারীদের বিন্দুমাত্র সন্দেহ সৃষ্টি হয়নি তখনো পর্যন্ত তারা তাদের আমানতকারীদের কাছে কথার খেলাপ করে নি তখনই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বা প্রশাসনের কর্তারা এইসব অর্থলগ্নি সংস্থার মালিকদের কাছ থেকে নিয়মিত ঘুষ নিচ্ছিলেন কোন অধিকারে এবং অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির মালিকরাও ঘুষ দিয়ে যাচ্ছিলেন নিয়মিত কোন ভয়ে ।ব্যবসা ভালো চলছে ,আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারবেন তারা নিশ্চিত ছিলেন তখনও কি কারনে তারা ঘুষ দিতে গেলেন ? এখানেই বুঝে দেখা দরকার ব্যাংকিং রেগুলেশন আইন এর অন্তর্নিহিত অর্থ কি? ব্যাংকিং রেগুলেশন আইন অনুযায়ী জনসাধারণের কাছ থেকে কোন অর্থলগ্নি সংস্থা অর্থ আমানত হিসেবে তুলতে পারবে এবং সেই আমানত তারা ঋণ হিসেবে কাউকে দিতে পারবে কিন্তু কখনোই আমানত সংগ্রহকারী সংস্থা সংগৃহীত  আমানত নিজেরা খাটাতে পারবে না বা নিজেরা কোনরকম ব্যবসায় লাগাতে পারবে না। নিজেদের ব্যবসায় খাটানোর জন্য কোন সংস্থা যদি জনসাধারণের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে চায় সেই অর্থ তারা আমানত হিসেবে সংগ্রহ করতে পারবে না ,নিজেদের সংস্থার অংশীদারি বা শেয়ার বিক্রি করে সংগ্রহ করতে পারে। সেক্ষেত্রে সংস্থার লাভ হলে সংস্থার অংশীদারী হিসেবে বিনিয়োগকারী লভ্যাংশ পাবেন সংস্কার যদি ক্ষতি হয় বিনিয়োগকারী কোনো লভ্যাংশ পাবেন না তিনি নিজের অংশীদারীত্ব শেয়ার হিসেবে বাজারে বিক্রিও করতে পারেন। সংস্থার লাভ-ক্ষতির ওপর নির্ভর করে তার অংশীদারিত্বের দাম বেড়ে বা কমে যেতে পারে অর্থাৎ এক্ষেত্রে ঝুঁকি থাকে,সঞ্চয়ের নিশ্চিন্ত নির্ভরতা শেয়ারে থাকে না। অর্থাৎ বিশ্লেষণে এ কথা বলা যেতে পারে যে, নিজেদের ব্যবসার জন্য যদি কোন সংস্থা জনসাধারণের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তাহলে অর্থপ্রদানকারী কে এটা বুঝিয়ে দিতে হয় যে ব্যবসায় ঝুঁকি আছে এবং সেজন্যই নিজেদের ব্যবসার ঝুঁকির অংশীদারিত্ব তাকে দিতে হয়, এই নীতি থেকেই এই আইনটি সৃষ্টি হয়েছে যে নিজেদের ব্যবসায় টাকা খাটানোর জন্য কোন সংস্থা আমানত হিসেবে অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে না শুধুমাত্র অংশীদারি বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে ।সঞ্চয়িতা থেকে শুরু করে সারদা, রোজভ্যালি পর্যন্ত সমস্ত অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির আইনভঙ্গের সূচনা এখানেই । তারা আমানতকারীদের কাছ থেকে আমানত হিসেবে সংগৃহীত অর্থ নিজেরা ব্যবসায় খাটিয়েছে যা ব্যাংকিং রেগুলেশন আইনের পরিপন্থী অর্থাৎ বেআইনি ,সেজন্যই এই বেআইনী কাজকে আপাতভাবে বৈধ করে রাখার জন্যই ,এই বেআইনি কাজের দিকে প্রশাসন যাতে দৃষ্টি নিক্ষেপ না করে তাই প্রশাসনের চোখ বন্ধ করে রাখার জন্যই তাদের নিয়মিতভাবে রাজনৈতিক নেতাদের এবং প্রশাসনের কর্তাদের ঘুষ প্রদান এবং এই প্রদানকৃত ঘুষের জন্য অর্থ ব্যয়ের জন্যই তাদের ব্যবসারও পতন এবং আমানতকারীদের স্বপ্নভঙ্গ। যদি অর্থলগ্নি সংস্থাগুলি তাদের ব্যবসাগুলি সফলভাবে চালিয়ে যেতে সক্ষম হতো এবং আমানতকারীদের নির্ধারিত সময়ে প্রদেয় অর্থ পরিশোধ করতে সক্ষম হতো তাহলেও এই সমস্ত ব্যবসাটি বেআইনি হত । এ কারণেই সাধারণ আমানতকারীদেরও সচেতন থাকা উচিত বিনিয়োগ করার সময় বা সঞ্চয় করার সময়। কোন ব্যাবসায়িক সংস্থা বড় ব্যবসা করছে নিজের নামে এবং সেই নামেই তারা টাকা নিচ্ছে ব্যবসা করার জন্য এটা দেখলে কখনোই সেখানে অর্থ লগ্নি করা উচিত নয় ।যেমন উদাহরণস্বরূপ দেখা যাক, যখন সারদা পুরোদমে ব্যবসা করছে, নিজেদের নামে বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছে, ট্যুরিজম খুলছে, যখন পৈলান পৈলান নামেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালাচ্ছে, রোজভ্যালি রোজভ্যালি নামেই চালাচ্ছে বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, প্রয়াগের রয়েছে প্রয়াগের নামেই বিভিন্ন ইনস্টিটিউশন,তখন সারদা , পৈলান ,রোজভ্যালি বা প্রয়াগে অর্থ আমানত হিসেবে সঞ্চয় করা আমানতকারীদের একেবারেই উচিত হয় নি । কারণ তাদের এটা বোঝা উচিত আমানত হিসেবে সংগৃহীত অর্থ দিয়ে নিজেদের ব্যবসা চালানো ব্যাংকিং রেগুলেশন আইন অনুযায়ী অবৈধ। তাই এদের ব্যবসা যতই ভালো চলুক এবং ভবিষ্যতেও ভালো চলার যতই সম্ভাবনা থাকুক এখানে আমান বাংলাত সঞ্চয় করাটাই বেআইনি।এখানে আমার সঞ্চয় গচ্ছিত করব না, আমার সঞ্চয় সেখানে গচ্ছিত করব, যেই সংস্থার নিজেদের নামে কোন ব্যবসা নেই, তারা খালি আমানত সঞ্চয় করে এবং ধার দেয়। এই সচেতনতা এবং ব্যাংকিং রেগুলেশন আইনের এই সামান্য জ্ঞান যদি প্রত্যেক মানুষের মনে সদা জাগ্রত থাকে তাহলে ভবিষ্যতে সঞ্চয়িতা-ওভারল্যান্ড থেকে সারদা-রোজভ্যালি, এই অন্ধকারাচ্ছন্ন কালখন্ডকে আর কোনদিনই পশ্চিমবঙ্গ বা ভারতের বুকে ফিরে আসতে হবে না ।

From Sanchayita to Saradha, Rose Valley, a dark period in West Bengal – Part 5

Investigating officer opined that, there was a laxity on the part of the State Govt, which enabled the kingpins of the Ponzi Companies to escape heavy punishments and penalties. It may also be noted that no FIRs were lodged by the State Govt against the Chit Fund Companies.

Many football teams disappeared from the Maidan of Kolkata, and United Sports Club was the most notable among them. 

A total of 19 crores were invested by the Ponzi Companies in Kolkata football. 

KKR the franchise team of Shah Rukh Khan was also sponsored by Rose Valley, and KKR jerseys had the logo of Rose Valley. There was a huge financial transaction between KKR and Rose Valley.

As per an analysis, Ponzi Companies raised a total of 4 lac crore from the masses, and the most of which has disappeared. But, if such a quantum of investments were made in the safe hands of honest entrepreneurs, we could have witnessed a vibrant West Bengal with thriving industries and job opportunities. 

– Amlan & Jaydeep

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.