চতুর্থ ভাগ
গৌতম কুণ্ডুর বিলাসবহুল জীবনযাপন চমকে দিত অনেক বিত্তশালীকেও! চোখে স্টাইলিশ চশমা। হাতে দামি ঘড়ি। দামি পোশাক। তার একাধিক গাড়ির সমাহার। তার মধ্যে আছে চোখ ধাঁধানো রোলস রয়েজ। এই মডেল গোটা পূর্বাঞ্চলে ওই একটাই!বিতর্কিত এই মানুষটির অবাধ যাতায়াত সিনেমা জগতে। বিলাস বহুল পার্টি থেকে খেলার মাঠ, কর্পোরেট বক্সেও তিনি থাকতেন মধ্যমণি।
অভিযোগ, রোজভ্যালির ডিরেক্টর পদে ছিলেন গৌতম কুণ্ডুর শ্রী শুভ্রা কুণ্ডু৷ ইডি জানতে পেরেছিল, জুয়েলারি ব্যবসায় বেশ কয়েকশো কোটি টাকা অলংকার ছিল৷ কিন্তু, রোজভ্যালি কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পর রাতারাতি অলঙ্কার ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়া হয়৷
ইডি সূত্রে খবর, অদ্রিজা নামের একটি জুয়েলারি ব্যবসা খুলে বাজার থেকে কমপক্ষে ৩০০ কোটি টাকা ঋণ নেন শুভ্রা কুণ্ডু৷ অভিযোগ, ওই টাকা নানা ভাবে সরিয়ে ফেলা হয়ে থাকতে পারে৷ ওই টাকার লেনদেনের হিসেবও পাননি আধিকারিকরা৷ শুভ্রা অদ্রিজার লেনদেন দেখতেন৷ কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার অনেক পর অদ্রিজায় তল্লাশি শুরু করেছিল ইডি৷ ইডির তৎপরতা শুরু হতেই শুভ্রা কুণ্ডু ডিরেক্টর পদে ইস্তফা দেন৷
রোজভ্যালির সোনার দোকান আদ্রিজার বিভিন্ন শাখায় অনেক পরে তল্লাশি চালিয়েছিল ইডি। রোজভ্যালির মালিক জেলে থাকলেও কী করে তার সোনার সোনার দোকান এতদিন ধরে চললো।টেলিভিশন চ্যানেল বা সংবাদপত্রই বা চলছিল কীকরে।নিউজ চ্যানেল থেকে খবরের কাগজ, বিনোদন চ্যানেল, সবই এতদিন চলছিল অথচ ইডির চোখে তা পড়েনি? শুধু তাই নয় রোজভ্যালির ৮টি হোটেল, জমি সহ মোট ১২৫০ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি। অথচ বাজেয়াপ্ত সম্পত্তির তালিকায় প্রথমদিকে ছিল না আদ্রিজা সোনার গয়নার নাম। ভিআপি রোড, বেহালা রোজভ্যালির আদ্রিজা গয়নার দোকান শুরুতেই বাজেয়াপ্ত হল না কেন? বিভিন্ন সূত্রে খবর ছিল আদ্রিজার গয়নার দোকানের আড়ালে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছে রোজভ্যালির মালিক গৌতম কুন্ডু। আদ্রিজা সোনার দোকান থেকে গৌতম কুন্ডুর স্ত্রী মাসে মাসে বেতনও নিতেন।
ইডি সূত্রে খবর, অদ্রিজা স্বর্ণ ব্যবসায় একাধিক প্রভাবশালী নিয়মিত উপঢৌকন পেতেন৷ সোনার বিনিময়ে তাঁদের থেকে একটি টাকাও নেওয়া হত না বলে অভিযোগ৷ শাসক দলের একাধিক প্রভাবশালী নেতা থেকে শুরু করে মন্ত্রীদের দুর্গাপুজোয় ঢালাও বিজ্ঞাপন দিত অদ্রিজা৷ একাধিক সংবাদমাধ্যমেও দেওয়া হত মোটা টাকার বিজ্ঞাপন৷ ব্যবসার সঙ্গে শাসকদলের প্রভাবশালীদের যোগ ও বাজার থেকে তোলা কোটি কোটি টাকা কীভাবে সরিয়ে ফেলা হল, তা জানতে শুভ্রাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল ৷
রোজভ্যালি আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তে গতি বাড়াতে বিশেষ কিছু নথি চেয়ে নবান্নের দ্বারস্থ হয়েছিল সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, রাজ্য সরকারের কাছে রোজভ্যালি তদন্তে বেশ কিছু নথি সরবরাহের আবেদন জানিয়েছিল সংস্থা। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে জানানো সেই আবেদনের ভিত্তিতে অধিকাংশ নথি তারা রাজ্যের কাছ থেকে পায়নি। সিবিআই বারবার বলা সত্বেও সেই ফাইল পুলিশের তরফে তাদের দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।রোজভ্যালি তদন্তে সহায়ক রাজ্য সরকারের কয়েকটি বিজ্ঞপ্তি, রোজভ্যালির লাইসেন্স ও জমি সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য এবং নথির কথাই উল্লেখ করা হয়েছিল সিবিআইয়ের চিঠিতে।
২০১০ সালে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পদে ছিলেন দময়ন্তী সেন। সেসময় রোজভ্যালি সংস্থা সম্পর্কে বেশ কিছু অভিযোগ তাঁর কাছে জমা পড়ে। আর্থিক দুর্নীতি সংক্রান্ত সেসব অভিযোগের তদন্ত করেন তিনি। এরপর নিজেই আর্থিক প্রতারণা নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবিকে তার রিপোর্ট জানিয়ে চিঠি লেখেন। তাঁর চিঠিকে গুরুত্ব দিয়েই রোজভ্যালি বেআইনিভাবে বাজার থেকে টাকা সংগ্রহ করছে, তা বুঝতে পেরে সংস্থাটির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সেবি।পরবর্তী সময়ে কলকাতার পুলিশের এমন গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে রাজ্য পুলিশে বদলি হয়ে যান অন্যতম দুঁদে অফিসার দময়ন্তী সেন।
রোজভ্যালি চিটফান্ডের কাজ চালানোর জন্য ২৭টি সংস্থার নাম ব্যবহার করা হতো। যাদের মধ্যে মাত্র ছটি সংস্থার অস্তিত্ব ছিল। এখনো পর্যন্ত রোজভ্যালি মামলায় ৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি।
নজরে এসেছিল আরও অনেক তথ্যই ।
চার্টার্ড ফ্লাইট কিনে এক পরামর্শদাতাকে ‘উপহার’ দিতে চেয়েছিলেন গৌতম কুণ্ডু। কারণ, তাঁর সাহায্যেই ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠেছিল পাঁচ রাজ্যে। এমনকি রোজভ্যালি এয়ারলাইন্স কোম্পানি খুলতে তাঁকে পরামর্শ দেন ওই পরামর্শদাতা। দেশে বেসরকারি বিমান পরিষেবা চালু করতে চেয়েছিলেন গৌতম। কথাবার্তাও এগিয়ে ছিল। তবে টিচফান্ড কাণ্ড সামনে আসতেই শেষ মুহূর্তে পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
রোজভ্যালি রিয়েল এস্টেটের চেয়ারম্যান গৌতম কুণ্ডু–সহ সাত কর্তার বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ আনা হয়। গৌতম তখন জেল–হাজতে। রোজভ্যালির প্রাক্তন এজিএম (অ্যাকাউন্ট্যান্ট) সুধীর সাউয়ের বিরুদ্ধেও অভিযোগ এনে চার্জশিট পেশ করেছিল ইডি। সুধীর ২০০৪ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত ওই সংস্থার হিসেব সামলেছেন এবং সেই সময়েই বিপুল অঙ্কের টাকা নয়ছয় হয়েছে। তবে তাঁকে তখনই গ্রেপ্তার করা হয়নি । রোজভ্যালির প্রধান এজেন্ট অমিত ব্যানার্জি আর সুধীর, দুজনেই আমানতকারীদের টাকা নানা খাতে ও বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে সরিয়েছেন বলে অভিযোগ।
গৌতম জেলে থাকাকালীনই রোজভ্যালি মামলায় প্রথম চার্জশিট পেশ করা হয়। এছাড়াও নাম ছিল শিৱময় দত্ত, অশোক সাহা, অরুণ মুখার্জি, ৱি কে মল্লিক এৱং রামলাল গোস্বামীর।
২০১৩–য় সেৱি অভিযোগ করে, নন–কনভার্টেৱল ডিৱেঞ্চার ইস্যু করে ৱাজার থেকে ১২ কোটি টাকা তুলেছে রোজভ্যালি। সেৱি এৱং রেজিস্ট্রার অফ কোম্পানিজের নিয়ম না মেনে ৱেআইনিভাৱে এই টাকা আমানতকারীদের কাছ থেকে তোলা হয়। সিআইএস ৱা ‘কালেকটিভ ইনভেস্টমেন্ট স্কিম’–এর মাধ্যমে ৱাজার থেকে টাকা তুলেছিল রোজভ্যালি। তাদের দুই হাজারের বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছিল ইডি। তা নিয়ে হাইকোর্টে মামলাও করেছিল এই পনজি স্কিম সংস্থা।
তৃণমূলের আরেক সাংসদ, অশ্লীল ও হিংসাত্মক মন্তব্য করে খবরের শিরোনামে আসা অভিনেতা তাপস পাল যে রোজভ্যালির মিডিয়া বিভাগের ডিরেক্টর ছিলেন, তা-ও প্রকাশ্যে স্বীকার করেছিলেন গৌতম।
২০১৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থা রোজভ্যালি কেলেঙ্কারিতে সিবিআই প্রথমে পশ্চিমবঙ্গের সল্টলেকের দফতরে তাপস পালকে ডেকে দীর্ঘক্ষণ জেরা করে। সেখানে তাপস পাল অসঙ্গতিপুর্ণ উত্তর দেওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
সিবিআই দাবি করে, তাপস পাল রোজভ্যালির কাছ থেকে একাধিকবার মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়েছিলেন। তাপস পালের স্ত্রী নন্দিনী পালও ওই সংস্থা থেকে অর্থ নিয়েছিলেন বলে তদন্তে জানতে পারে সিবিআই।
রোজভ্যালি অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় প্রথম মামলা হয় উড়িষ্যায়, তাই সেখানকার আদালতে নিয়ে যাওয়া হয় তাপস পালকে। আদালতের নির্দেশে তাপস পালের জেল হয়।প্রায় দুই বছর জেলে কাটানোর পর উড়িশ্যা রাজ্যের কটক আদালত থেকে এক কোটি টাকা বন্ডে জামিল পেয়েছিলেন তাপস পাল। তাপস পাল ছাড়াও
রোজভ্যালির মতো বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার কেলেঙ্কারির মামলায় ইডির নজরে এসেছিল একের পর এক টলি সেলেব৷ সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে। রোজভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডুর খুব ঘনিষ্ঠ হওয়ায় একাধিকবার ওই সংস্থার টাকায় বিদেশ ভ্রমণের অভিযোগও উঠেছে অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে। কী কারণে ওই খরচ বহন করত রোজভ্যালি, তার উত্তর পাওয়া যায় নি। রোজভ্যালি থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা বিদেশে পাচার করার খবর ছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট আধিকারিকদের কাছে। দেশের বাইরে টাকা পাচারের ক্ষেত্রে ঋতুপর্ণা কোনও মধ্যস্থতা করেছিলেন কি না কিংবা কীভাবে ওই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি? সেসব প্রশ্নও উঠেছিল। রোজভ্যালির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছিল অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে।
ঢাকার সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত, প্রসেনজিৎ অভিনীত ‘মনের মানুষ’ সিনেমার প্রযোজক এই গৌতম। তার স্ত্রী শুভ্রা কুণ্ডুও এই ছবিতে অভিনয় করেন।
রোজভ্যালির চ্যানেল নিউজ টাইম চ্যানেলের সম্পাদক ছিলেন রজত রায়চৌধুরী। তাকে এর আগে সারদাকাণ্ডেও এসএফআইও এক দফা জেরা করেছিল। ইডি সূত্রে জানা গেছিল, সারদার মতো ব্যাপক অসঙ্গতি মিলেছিল রোজভ্যালির নথিপত্রে। রোজভ্যালি কান্ডে তাপস পালের পাশাপাশি গ্রেফতার করা হয় তৃণমূল সংসদ সদস্য সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কেও।
২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে গ্রেফতার হন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও ওই বছরের ১৯ মে শর্ত সাপেক্ষে জামিনে মুক্তি পান তিনি।
সিবিআইয়ের দাবি ছিল
– সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও গৌতম কুণ্ডুর মোবাইলের কললিস্ট ঘেঁটে একাধিক সূত্র হাতে এসেছিল।
– দু’জনের মধ্যে কথাবার্তার একাধিক প্রমাণ মিলেছিল ।
– ৩ টি বিশেষ নম্বরে দু’জনেই বারবার ফোন করতেন
– ওই নম্বরগুলির মধ্যে একটি নম্বর আরেক সাংসদের
– ওই সাংসদকে সারদাকাণ্ডেও তলব করা হয়
– ওই সাংসদই কমন লিঙ্ক বলে মনে করা হচ্ছে ।
এই সূত্র থেকেই সিবিআইয়ের ধারণা, সারদা ও রোজভ্যালি কেলেঙ্কারি কোথাও একই সূত্রে গাঁথা। গোয়েন্দাদের দাবি, ওই সাংসদ ও গৌতম কুণ্ডুর মধ্যে পরিচয় করিয়ে দেন সুদীপই।
গৌতম কুণ্ডু ওই সাংসদের কাছে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ গড়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন ।
– সিবিআই জানতে পেরেছে, গৌতম কুণ্ডুর থেকে ওই সাংসদ নিজে টাকা নেননি।
– কিন্তু, তাঁর মাধ্যমে পরিচয় হওয়া এক বিধায়ককে প্রায় নয় কোটি টাকা দেন গৌতম কুণ্ডু ।
– গৌতমকে সমস্ত সাহায্যের আশ্বাসও দেন ওই বিধায়ক।
– পরে সেই মেডিক্যাল কলেজ আর হয়নি ।
দক্ষিণ কলকাতার একটি নামী স্কুলকে ৭৫ লক্ষ টাকা ডোনেশন দেওয়া হ্য়। ওই স্কুলে ভরতি হয় গৌতম কুণ্ডুর ছেলে। গোয়েন্দাদের দাবি, গৌতমের ছেলেকে নামী স্কুলে ভরতি করানোর জন্য প্রভাব খাটান সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয় অন্যান্য প্রদেশেও রোজভ্যালির সঙ্গে রাজনীতিকদের যোগাযোগ ছিল বলে অভিযোগ ।তত্কালীন সংবাদপত্র অনুযায়ী, সব থেকে বড় পনজি স্কিম গোষ্ঠী রোজভ্যালির অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার নিজে অনেকবার উপস্থিত থেকে তাদের কাজকর্মকে কার্যত বৈধতা দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল৷ তাঁরা দলীয় মুখপত্রে এই সব সংস্থার প্রচারও দিয়েছিলেন৷
রাজনৈতিকদের ভূমিকা নিয়ে উঠেছিল আরও কিছু মৌলিক প্রশ্ন ।
১) সারদা গোষ্ঠী, তথা তামাম পনজি স্কিম সম্প্রদায়ের এতদিনের রমরমা ব্যবসা কি প্রাক্তণ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকারের বা বর্তমান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের কোনোওই উপকারে লাগেনি? এই যে সরকার দাবি করে হাজার হাজার চাকরি হচ্ছে, শ’য়ে শ’য়ে প্রকল্প গড়ে উঠছে -এই দাবিগুলির সঙ্গে কি পনজি স্কিম গুলির কোনও লেনদেন নেই? বড় একটিও শিল্পগোষ্ঠী তো এখনও বাংলায় আসেননি৷ তাহলে চাকরিগুলি হচ্ছে কোথায়? প্রকল্পগুলি কী এবং কারা সেগুলি তৈরি করছে? বাংলায় যে সব নামিদামি শিল্পগোষ্ঠী আছে, তারা তো বাংলায় নতুন কিছু বিশেষ গড়ছে না, ভিন রাজ্যে বিনিয়োগ করার চেষ্টায় আছে৷ তাহলে, এখানে প্রকল্প করছে কারা?
২) প্রতিটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল গত কয়েক বছর ধরে দেখায় নানান বিজ্ঞাপন-গুচ্ছের আবাসন, বেসরকারি কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, হোটেল, ব্যাটারি, ইনভার্টার, রেসর্ট, রান্নার মশলা, মিনারেল ওয়াটার কারখানা, সিমেন্ট কারখানা, এরকম কত কী প্রকল্প৷ প্রতি বছর যেন এদের সংখ্যা বাড়ে৷ এদের অনেকেরই সঙ্গে যুক্ত থাকে সারদার মতো কোনও না কোনও কোম্পানির নাম৷ এগুলি কি রাজনৈতিক মদত ছাড়াই উঠেছে?
৩) ঠিক তেমনি দেখা যায় অসংখ্য বাংলা ও ইংরাজি খবরের কাগজ৷ সব বিগত কয়েক বছরের মধ্যে হয়েছে৷ এতো কাগজ পড়ে কে, করল কারা, চলে কিসের জোরে?
৪) সারদা সহ সব অর্থলগ্নি গোষ্ঠীর এজেন্টদের সংখ্যা এতো বেহিসেবি ধরণের বাড়ল কেন হঠাত্ ? এই বাড়তি এজেন্টরা কারা?
৫) কালেকশনের হার হঠাত্ কমে গেল কেন? বড় জাহাজ ডুবতে তো সময় লাগে কিন্তু যে ব্যবসা রমরম করে চলছিল, সেই ব্যবসা হঠাত্ হুড়মুড় করে মুখ
থুবড়ে পড়ল কেন?
৬) পনজি প্রকল্পগুলি ঠিক কী ভাবে লোক ঠকায়, তা তো রাজ্য সরকারের অজানা নয়৷ যথাযথ
প্রতিরোধক ব্যবস্থা নেয়নি কেন বহু আগে থেকে? বিধ্বংসী বোমা ফাটা পর্যন্ত অপেক্ষা করছিল কেন?
৭) সারদা সহ সব অর্থলগ্নি গোষ্ঠীর কলঙ্কিত তারকারা তৃণমূল কংগ্রেসের হোমরাচোমড়াদের সঙ্গে এত খোলামেলা মেলামেশা করতে পারল কী করে এতদিন ধরে? মুখ্যমন্ত্রী কি জানতেন না যে এরা পনজি স্কিম চালায়? লোক লাগিয়েছিলেন কি একটু আধটু খোঁজ নিতে যে এই সংস্থাগুলি ঠিকঠাক টাকা ফেরত দিচ্ছে কিনা? না কি কিছুদিনের জন্য ভুলে গেছিলেন সঞ্চয়িতার ইতিহাস? রাজনৈতিক চাপান-উতোরের খেলায় এইরকভ নানা জিনিসই হয়৷ বোধকরি সারদাও তেমনি একটি কেস৷ দোষ অবশ্য শুধুমাত্র একতরফের নয়,সারদার ওয়েবসাইটেই তো লেখা ছিল: ‘দ্য জার্নি বিগ্যান ১২ ইয়ার্স এগো …’৷ সেই তো লাল-কেল্লা দাঁড়িয়ে ছিল যখন শক্ত, মজবুত হয়ে, তখন! শুরু হয়েছিল হয়ত একক প্রচেষ্টায়, বা দু’-চারজন বন্ধুবান্ধব মিলে৷ তারপর আস্তে আস্তে শ্রীবৃদ্ধি হতেই, বাড়ির পুজো হয়ে উঠল বারোয়ারি গাজন৷ আর সত্যি কথা বলতে কি, খুঁটির জোর আছে যার সেই তো বুক ফুলিয়ে চলবে৷ সুদীপ্ত সেনরাও চলত৷ চলবেই৷ চলতে দেওয়া হয়েছে, তাই চলেছে! কারণ, ক্ষীর খেয়েছে তো সবাই, খাইয়েছে সুদীপ্তরা৷
সারদা-রোজভ্যালি কান্ডের মতো এত বড় আর্থিক দুর্নীতি সমগ্র পূর্ব ভারতে বোধহয় এই প্রথম। এর আগে সঞ্চয়িতা বা ওভারল্যান্ডের মত পনজি স্কিম নিয়ে হৈ চৈ হলেও ব্যপকতার ক্ষেত্রে সারদা-রোজভ্যালি সকল কেই ছাপিয়ে গেছে। তাছাড়া পূর্বের পনজি স্কিমগুলির আমানতকারীরা ছিলেন শহর বা আধা শহরের মধ্যবিত্ত মানুষ। শ্রমজীবী বা কৃষিজীবী মানুষকে তারা খুব বেশি প্রভাবিত করতে পারেনি।
অথবা এই মানুষগুলিও যে পনজি স্কিমের আমানতকারী হতে পারে এ ধারণাও বোধহয় পনজি স্কিমের পরিকল্পনাকারীদের ছিল না। অন্যদিকে ভয়ে হোক বা অজ্ঞতার কারণে হোক সরল গরীবগুর্বো মানুষগুলি পনজি স্কিমের ধারে কাছে যেতেন না। আশির দশক থেকেই কিছু রাষ্ট্রীয় প্রকল্প জনমানসের মধ্যে সঞ্চয়ের প্রবণতা বাড়িয়ে তোলে। ধীরে ধীরে শ্রমজীবী বা কৃষিজীবী মানুষ ক্ষুদ্র সঞ্চয় বা স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলির আওতায় আসতে শুরু করে।
ধীরে ধীরে বেশী সুদের লোভ গ্রাস করে ফেলে তাদেরও । এবং সেই লোভের বশবর্তী হয়েই তারা পা দিয়ে ফেলে পনজি স্কিমগুলির পাতা ফাঁদে ।
আজকে অগুনতি সাধারণ মানুষ যারা কাঁদছে, তারা চিরকালই কাঁদে একটু বাড়তি লোভ করতে গিয়ে৷ নাহলে যে
[08/05, 4:47 p.m.] Amlan: রাজ্যে সঞ্চয়িতা নামক একটি ইতিহাস হয়ে
গেছে, সেই রাজ্যের মানুষ আবার একই ভুল বারবার করে কেন?লোভ তো পতনের কারন বটেই কিন্তু লোভই কি একমাত্র কারণ এই করুণ পরিণতির জন্য; অনেকেই মনে করেন তা নয়৷ এই পনজি স্কিমগুলি টাকা তুলেছে তো বটেই, কোটি
কোটি টাকা৷ পেল কোথা থেকে? সাধারণ মানুষের কাছ থেকেই পেয়েছে৷ পেল কেন? রামপুরহাট, বর্ধমান, দুর্গাপুর, আসানসোল,
এমনকি পুরুলিয়া বা মেদিনীপুরেও লোকে সরকারি ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পগুলি থেকে টাকা তুলে ঢুকিয়েছে এইসব পনজি স্কিমে৷ এক এক জায়গায় এই পনজি স্কিম গুলির এজেন্টরা সপ্তাহে ২০ -২৫ কোটি টাকা
করে এক এক জন তুলেছে ,বারুইপুর, জয়নগর, মথুরাপুর, বকখালি, কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার, কুলতলি, ক্যানিং যে সব জায়গায় ছিল সারদা, রোজ ভ্যালী ও অন্য পনজি স্কিম গুলির স্বর্গরাজ্য৷ গত কিছু বছর ধরে বারুইপুর হয়ে উঠছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রধান কেন্দ্র, বিশাল
জনসংখ্যা ও ফল -সবজীর জন্য বিখ্যাত৷ লোকের হাতে কাঁচা পয়সা প্রচুর৷
পনজি স্কিম গুলির এজেন্টরা সন্ধ্যেবেলা করে বাড়ি বাড়ি কালেকশন করে যেত৷ এমনকি বর্ধমান-বাঁকুড়ার বর্ডার ঘেঁষে ইন্দাস, পাত্রসাঁই, সোনামুখী, খাতড়া, খন্ডঘোষ – এইসব জায়গা থেকেও দেদার কালেকশন হয়েছে৷
কোনও ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসের কল্পনার বাইরে পনজি স্কিমের এজেন্টদের এই মার্কেটিং পরিষেবা৷ পনজি স্কিমের এজেন্টরা কমিশন পেত প্রচুর 25% থেকে শুরু করে কোথাও কোথাও 50% পর্যন্ত ।এই বিপুল কমিশনের লোভই এজেন্টদের বাধ্য করেছিল মার্কেটিংকে অত্যুচ্চ উচ্চতায় নিয়ে যেতে । এখানেই পিছিয়ে পড়েছিল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও ডাকঘরের মতো রাষ্ট্রীয় সঞ্চয় প্রকল্প গুলি ।বেশী সুদের লোভ এবং কমিশন লোভী এজেন্টেদের বোঝানো দুই মিলে পনজি স্কিমকে অনেক বেশি আকর্ষণীয় করে তুলেছিল সাধারণ মানুষের কাছে ।এছাড়াও সংবাদপত্রে পাতা জোড়া বিজ্ঞাপন দিয়ে, টিভিতে ধারাবাহিক প্রচার দিয়ে পনজি স্কিমের পরিকল্পনাকারীরা এই প্রতারণার ফাঁদ বছরের পর বছর ধরে পেতে চলেছে৷ প্রায় সমস্ত শাসক দলগুলির সাংসদ–বিধায়করা এই সব চিটফান্ডের সঙ্গে নানাভাবে জড়িত৷ এদের নানা রকম কর্মসূচিতে উপস্থিত থেকে জনগণের কাছে তা বিশ্বাসযোগ্য করতে সাহায্য করেছেন তাঁরা৷ থানা পুলিশ প্রশাসন সকলেরই নজরে এই প্রতারণার ব্যবসা চলেছে৷ এই সব সংস্থায় লগ্নি করলে মোটা অঙ্কের সুদ মিলবে– এই আশা দেখানো হয়েছে৷ এজেন্টদেরও প্রচুর সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে৷ এতসব সুবিধা দেওয়া অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়মে সম্ভব কি না– এসব বিচার না করে কোটি কোটি সাধারণ মানুষ সংকটগ্রস্ত জীবনে খানিকটা সুরাহার আশায় তাঁদের কষ্টার্জিত উপার্জন এখানে বিনিয়োগ করেছেন৷ ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে৷ আমানতকারীদের টাকা মেরে দিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে নানা সংস্থা৷ কিছু দিন তা নিয়ে হৈ চৈ হয়েছে৷ তারপর আবার অন্য নামে প্রতারণার ব্যবসা চলেছে৷ এভাবেই চিটফান্ডের কারবার ঘটে চলেছিল।
সারা দেশের মধ্যে এ রাজ্যেই পনজি স্কিমের রমরমা ছিল সবচেয়ে বেশি৷ সারা রাজ্যে কোম্পানিগুলো পঞ্চাশ লক্ষ এজেন্ট নিয়োগ করেছিল৷ জনগণের থেকে বৃহৎ কোম্পানি ও অসংখ্য ছোট ছোট কোম্পানি সব মিলিয়ে প্রায় চার লক্ষ কোটি টাকা তুলেছিল৷
শুধু যে সারদা, রোজ ভ্যালীরা তা নয়৷ ছিল আরও কত, যেমন বিশাল, উড়ান গ্রুপ ইত্যাদি৷ ২০১১ পর্যন্ত খুব ভালো টাকা পেয়েছে লোকজন৷ মরেছে তারা
যাদের ২০১২-১৩তে বা তারও পরে টাকার রিপেমেন্ট হওয়ার কথা ছিল,
আর সবশেষে নীরবে-নিভৃতে কেঁদেছে শুধুমাত্র বিচারের বাণী, কারণ নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ এ কথাই বলছে যে উপযুক্ত আইন থাকা সত্ত্বেও পনজি স্কিমের সঙ্গে যুক্ত অপরাধীরা সেরকম শাস্তি পায়নি আর পনজি স্কিমে বিনিয়োগকারীরা তাদের আমানত ফেরত পায়নি।
From Sanchayita to Saradha, Rose Valley, a dark period in West Bengal – Part 4
In his heydays Goutam Kundu was the centre of attraction, be it the Tollygunge Film Industry or the Sports arena or the Corporate sector. Goutam Kundu led a luxurious life style and travelled in a Rolls Royce.
After carrying out investigations and interrogations for almost one year, ED finally arrested Goutam Kundu in early 2015, and thereafter the MD Sibmoy Dutta was too arrested within a few months.
The Enforcement Directorate attached properties worth 1250 crores, of Rose Valley, but the Electronic Media Channe, Newspaper and the jewelry chain shop Adrija, remained functional.
Adrija, was run by Suvra Kundu- the wife of Goutam Kundu. Suvra Kundu took a soft loan of 300 crores but raids by ED could not trace the sources, as all records were destroyed.
It was through Adrija, Goutam Kundu and his wife smuggled all funds to unknown locations.
Jewelries were gifted to top TMC leaders and influential people who made regular visits to the stores located at Behala, and VIP Road. Adrija too sponsored Durga Puja in the form of hefty advertisements through banners, etc.
ED officials claimed that they had approached Nabanna the State headquarters for documents which were required for investigation in the Rose Valley case, but were denied.
It may also be noted, Damayanti Sen- the then Joint Commissioner of Police who was investigating the Rose Valley Scam was transferred.
Notable personalities who were arrested in the Rose Valley Scam were Sudip Bandhopadhyay a heavy weight MP of TMC, and actor turned politician Tapas Paul, who was also a MP of TMC.
The Sarada-RoseValley Scam was one of monumental scam of Eastern India. In the 1970s Sanchayita and Overland could only reach the middle class people, but the Sarada and Rose Valley duo, reached the daily wage earners and farmers of the State. These lower income group people did not have any idea about the operations of Ponzi Companies, and they disinvested all their small scale savings, and invested heavily for an extra penny.
It is appalling that despite having a law, the kingpins of the Ponzi Company were not booked, and the investors never got their money back.
– Amlan & Jaydeep