প্রথম ভাগ
সঞ্চয় মানুষের চিরন্তন অভ্যাস ।শুধুমাত্র ব্যক্তি মানুষের হিতের জন্য নয় বরং সমষ্টি ও রাষ্ট্রের হিতের জন্য সঞ্চয় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং এই সঞ্চয়ের নিরাপত্তার জন্যই সৃষ্টি হয়েছিল ব্যাংকিং ব্যবস্থার ।
কোন জীব দেহের মধ্যে প্রাণের সার্থক বিকাশসাধনের জন্য যেমন সেই দেহ কাঠামোর সর্বাঙ্গে প্রাণরস প্রয়োজন ,তেমনই অর্থনীতির বিকাশ সাধনের জন্য সেই রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে অর্থের সামগ্রিক সঞ্চালন প্রয়োজন। অর্থ হল বিনিময়ের মাধ্যম বা ক্রয় ক্ষমতার মাপকাঠি অর্থাৎ প্রাণীদেহের অন্তর্গত অসংখ্য কোষসমূহের ন্যায় রাষ্ট্রকাঠামোর অন্তর্গত অসংখ্য মানুষের প্রত্যেকে তার কর্মের ফল হিসেবে যে ক্রয়ক্ষমতার অধিকারী হয় তা অর্থের মাধ্যমে লাভ করে। এই লভ্য অর্থ বা অর্জিত ক্রয়ক্ষমতা দু’ভাবে ব্যয়িত হতে পারে ।এক, ভোগ্য বস্তু ক্রয়ের মাধ্যমে ,দুই, বিনিয়োগের মাধ্যমে ।এই দুই পদ্ধতিতে ব্যয়ের পরেও কোন ব্যক্তি উদ্বৃত্ত অর্থ বা ক্রয়ক্ষমতার অধিকারী থাকতে পারে আবার কোন ব্যক্তির প্রাপ্ত অর্থের অতিরিক্ত অর্থের দরকার হতে পারে উপরুক্ত দুই পদ্ধতিতে ব্যয়ের কারণে। এরকম ক্ষেত্রে এই দুই ব্যক্তি অর্থাৎ রাষ্ট্রদেহের দুই পৃথক জীব কোষ পরস্পরের পরিপূরক হয়ে যায় এবং এদের পরস্পর বিপরীতমুখী প্রয়োজনকে পরস্পরের প্রয়োজন নিবারক হতে সাহায্য করে ব্যাংকিং ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থা একদিকে উদ্বৃত্ত অর্থ বা ক্রয় ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তিকে দেয় সঞ্চয়ের সুযোগ ভবিষ্যতের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে, অন্যদিকে অধিক অর্থ বা ক্রয় ক্ষমতা আকাঙ্ক্ষী ব্যক্তিকে তার প্রয়োজনীয় অর্থ বা ক্রয় ক্ষমতা প্রদান করে ভবিষ্যতে নিজের অর্জিত অর্থ বা ক্রয় ক্ষমতা থেকে তা পরিশোধ করা চুক্তির বিনিময়ে। এভাবেই উদ্বৃত্ত অর্থের জোগান ও প্রয়োজনীয় অর্থের চাহিদার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে অর্থনীতির অগ্রগতির পথ প্রশস্ত করে ব্যাংকিং ব্যবস্থা। ধরা যাক কোন একজন ব্যক্তি রামবাবু তার কাজের জন্য মাসে 10000 টাকা পান অর্থাৎ মাসে 10000 টাকার সমমানের বস্তু ক্রয় করার অধিকার লাভ করেন, রিয়াজের মুভি কিন্তু প্রয়োজনীয় যাবতীয় দ্রব্যাদি কিনতে তার মাসে 8 হাজার টাকা লাগে, বাকি 2000 টাকা তিনি সঞ্চয় করেন ভবিষ্যতের জন্য ।আবার শ্যামবাবু তারও আয় ব্যয় রামবাবুর মতই কিন্তু তার মনে এক বিশেষ পরিকল্পনা আছে, যে পরিকল্পনা ভবিষ্যতে অধিক উৎপাদনের দরজা খুলে দেবে অর্থাৎ অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ঘটাতে সাহায্য করবে কিন্তু তার জন্য প্রয়োজনীয় বস্তু ও শ্রম ক্রয় করতে বর্তমানে 5 লক্ষ টাকা প্রয়োজন যা তার কাছে নেই ।এখানেই ব্যাংকিং ব্যবস্থার ভূমিকা। সে রাম বাবু এবং তার মতো আরো আড়াইশো লোকের সঞ্চয় একত্রিত করে শ্যামবাবু জুগিনি জুগিনিকে দেয় বিনিয়োগ করার জন্য ।এর ফলে রামবাবু পান তার সঞ্চয়ের অধিক মূল্য ও নিরাপত্তা এবং শ্যামবাবু পান তার পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করার রসদ এবং সামগ্রিক অর্থনীতির পায় বৃদ্ধির পথে চলার শক্তি । সেজন্য পৃথিবীর সমস্ত প্রান্তে বিভিন্ন সময়ে গড়ে ওঠা মানবসভ্যতাতেই ব্যাংকিং ব্যবস্থার অস্তিত্ব দেখা যায় ব্যাংকিং ব্যবস্থায় বিপর্যয় দেখা যায় । আর যদি কোন দেশে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় বিপর্যয় দেখা দেয় তাহলে সেই দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিই বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় ।যেমন দেখা গেছিল 2008 খ্রিস্টাব্দে আমেরিকায় । আর যে দেশে ব্যাংকিং ব্যবস্থার অস্তিত্বই নেই সে দেশে প্রত্যেক মানুষ থাকে এককোষী প্রাণীর মতো পৃথক। সেখানে একের সঞ্চয় অপরের বিনিয়োগে পরিবর্তিত হয় না, প্রত্যেকে তার সীমিত উদ্বৃত্তের মধ্যেই নিজের প্রয়োজনীয় ভোগব্যয় ও বিনিয়োগ করতে বাধ্য হয় । ফলে বিনিয়োগের অনেক উন্নত পরিকল্পনা ব্যর্থ হয় প্রয়োজনীয় উদ্বৃত্তের অভাবে। আবার অধিক উদ্বৃত্তের অধিকারী সঞ্চয়ের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয় বিনিয়োগের উপযুক্ত ও নিজস্ব পরিকল্পনার অভাবে । অর্থনীতির এহেন বিপর্যয়ের সাক্ষী ছিলো তালিবানশাসিত আফগানিস্তান ( ইসলামে সুদের কারবার নিষিদ্ধ বলে সেই সময় আফগানিস্তানে ব্যাংক ছিল বেআইনি)। সৌভাগ্যবশত:, ভারতের ব্যাংকিং ব্যবস্থা উন্নত মানের ।2008 খ্রিস্টাব্দে গোটা বিশ্ব যখন অর্থনৈতিক মন্দার সম্মুখীন হয়েছিল তখন শুধুমাত্র উন্নতমানের ব্যাংকিং ব্যবস্থা দৌলতে ভারত সেই বিশ্বব্যাপী মন্দার হাত থেকে রক্ষা তো পেয়েছিলই উপরন্তু নিজের জিডিপি বৃদ্ধির হার ধরে রেখেছিল 8 শতাংশের চেয়ে বেশিতে। পরবর্তীকালে জনধন যোজনা প্রভৃতি জনহিতকর নানা পদক্ষেপে বর্তমানে দেশের প্রতিটি মানুষ ব্যাঙ্কিং পরিষেবার সুবিধাপ্রাপ্ত ।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের ব্যাপার হল এত উন্নত ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও এবং নিজেদের সঞ্চয়ের সুরক্ষা ও বৃদ্ধির এত নিরাপদ মাধ্যম থাকা সত্বেও আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ অনেক সময় প্রভাবিত হন অসাধু ব্যবসায়ীদের দ্বারা এবং নিজেদের উদ্বৃত্ত সঞ্চয়ের জন্য ব্যাংক-এর পরিবর্তে নানান অসাধু বেসরকারি সংস্থাকে বেছে নেন ফলতঃ প্রতারিত হন। বিভিন্ন রকমের পঞ্জি স্কীমের মোহে পড়ে তারা প্রতারিত হন এবং সর্বস্বান্তও হন বারেবারে । গোটা দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে এধরণের অসাধু বেসরকারি সংস্থার দ্বারা পরিচালিত পঞ্জি স্কীমের রমরমা এবং তার হাতে প্রতারিত হওয়া ব্যক্তিবর্গের সংখ্যা অনেক বেশি ।
অসাধু লগ্নিকারী সংস্থাগুলো সাধারণত জনসাধারণের কাছে চিটফান্ড নামে পরিচিত হয় কিন্তু প্রকৃতপক্ষে চিটফান্ড তা নয় চিটফান্ড হল একটি সম্মিলিত তহবিল যেখানে সকল সদস্য সম্মিলিতভাবে একত্রিত হন এবং নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা করতে সম্মত হন। প্রতি মাসে সংগ্রহ করা অর্থ যে কোনও সদস্যের তাত্ক্ষণিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য নিলাম করা হয়। নিলামে সমস্ত সদস্য অংশ নেয় এবং যারা সংগৃহীত অর্থ চান তারা এটির জন্য দর দেন।সর্বনিম্ন দরদাতা অর্থ পায়।
উদাহরণস্বরূপ, ধরা যাক 24 জন সদস্য রয়েছেন যারা প্রতি মাসে 5000 টাকা জমা করতে রাজি হন। সুতরাং, প্রথম মাসে, 24 জন সদস্য মিলে জমা দিয়েছিলেন 1,20,000 টাকা (24 * 5000)। প্রথম মাসে সংগৃহীত অর্থ অর্থাত্ 1,20,000 টাকা নিলামে উঠেছে। ধরা যাক 24 সদস্যের মধ্যে এ, বি এবং সি এই তিন জন সদস্য রয়েছেন যাদের অর্থের প্রয়োজন। হয়তো এ দর দিলেন একলক্ষ দশ হাজার টাকা, বি দর দিলেন দিলেন 1 লক্ষ 5 হাজার টাকা, সি দর দিলেন এক লক্ষ টাকা। নিলামের বিজয়ী সি হয় কারণ তিনি সর্বনিম্ন দর দিয়েছেন ।
এবার সি এক লক্ষ টাকা নিয়ে নেবেন, এক বছরের মধ্যে সেই এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা উনি পরিশোধ করবেন এবং উদ্বৃত্ত কুড়ি হাজার টাকা গ্রুপের 24 জন সদস্যের মধ্যে সমানভাবে বন্টিত হয়ে যাবে ।এটি সম্পূর্ণ আইনানুগ ব্যাপার ।
জনসাধারণের অর্থ নিয়ে প্রতারণা করা সংস্থাগুলিকে প্রকৃতপক্ষে পঞ্জি স্কীম বলা যায় ।
পনজি স্কিম হচ্ছে এক ধরনের কৌশল যেখানে নতুন বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আদায় করা অর্থ পুরনো বিনিয়োগকারীদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। চার্লস পনজি নামের এক ব্যক্তির নাম থেকে এটা চালু হয়েছে।
পনজি স্কিমে এক ধরনের ফান্ড সৃষ্টি করা হ্য় যেই ফান্ডে নতুন বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে পুরনো বিনিয়োগকারীদের মুনাফা পরিশোধ করা হয়। যখন অর্থপ্রবাহ কমে যায়, তখনই এই অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানটি ভেঙে পড়ে।
চার্লস পনজি ১৯০৭ সালে মন্ট্রিয়লে গিয়েছিলেন।
সেখানে চাকরি নেন লুইজি জারোচ্চি নামের এক ইতালীয় বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান ব্যাংক মালিকের কাছে , জারোচ্চির ব্যাংক—বানকো জারোচ্চিতে। এই ব্যাংক তাঁর আমানতকারীদের ৬ শতাংশ সুদ দিত। সেই সময় যেটি ছিল অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় অনেক অনেক বেশি। ফলে রাতারাতি এই ব্যাংকে আমানতকারীর সংখ্যা বেড়ে যায় এবং রিজার্ভ ফুলে-ফেঁপে ওঠে। নতুন যে আমানতকারীরা ব্যাংকে টাকা রাখতেন বেশি মুনাফার আশায়, তাঁদের টাকা থেকেই লাভ দেওয়া হত পুরোনো গ্রাহকদের। আসলে ব্যাংক তাঁর বিনিয়োগের লাভ থেকে এই কাজ করত না। এভাবে বেশি দিন চলতে পারে নি। ব্যাংকে ধস নেমেছিল। গ্রাহকদের টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছিলেন জারোচ্চি। এই ঘটনা থেকে প্রতারণার শিক্ষা নেন পনজি এবং বুদ্ধিটা পরে কাজে লাগিয়েছিলেন পনজি স্কিমে।
পশ্চিমবঙ্গে পনজি স্কিমের জালিয়াতি কোনও নতুন ঘটনা নয়৷ কম সময়ে বেশি লাভের আশায় পনজি স্কিমে টাকা রেখে মানুষকে ঠকতে হয়েছে এর আগেও, যার শুরু হয়েছে সেই সাতের দশকের শেষ থেকেই৷ সঞ্চয়িতা, সঞ্চয়িনী, ভেরোনা, ওভারল্যান্ড – এরকম একাধিক নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান সাধারণ মানুষের অর্থ লোপাট করে হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছে, সর্বস্বান্ত হয়েছেন মানুষ৷ মামলা অবশ্য দায়ের হয়েছে আদালতে, কিন্তু সেইসব মামলা আজও চলছে৷ তার পরেও যে মানুষ ফের চটজলদি লাভের আশায় পনজি স্কিমের উপরেই ভরসা করেন, তার সবথেকে বড় প্রমাণ, ভারতের কেন্দ্রীয় আর্থিক নিয়ামক সংস্থা সেবি-র হিসেব অনুযায়ী ৬০০টিরও বেশি পনজি স্কিম এখনও সক্রিয় এই রাজ্যে৷ যদিও তার মধ্যে পনজি স্কিম হিসেবে নথিভুক্ত সংস্থা মাত্র একটি৷ বাদবাকি সংস্থা নানা মুখোশের আড়ালে তাদের পনজি স্কিমের ব্যবসা চালিয়ে গিয়েছে৷
সঞ্চয়িতা ছিল প্রথম পঞ্জি স্কীম যা পশ্চিমবঙ্গের জনসাধারণকে প্রতারিত করেছিল।সাতের দশকের শেষের দিকে সঞ্চয়িতার উথ্থান হয়। ১৯৮০ সালে সঞ্চয়িতার পতন হয় ।১৯৮০ সালে সঞ্চয়িতার অফিসগুলিতে অভিযান চালানোর আগেই সঞ্চয়িতা ১২০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ সংগ্রহ করেছিল এবং মুষ্টিমেয় লোককে সামান্য অর্থ ফেরত দিয়েছিল।
এই গ্রুপের দুজন প্রধানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল যার মধ্যে একজন শম্ভু মৌখার্জি আত্মহত্যা করেছিলেন এবং স্বপন গুহাকে আদালত কর্তৃক অসচ্ছল ঘোষণা করা হয়েছিল।
তার প্রায় দেড় দশক পর ওভারল্যান্ড নামক পঞ্জি স্কীম পশ্চিমবঙ্গের জনসাধারণের বড় অংশকে প্রতারিত করেছিল ।
গ্রেপ্তারকৃতদের তালিকার শীর্ষস্থানীয় ছিলেন অজিত কুমার বাউয়াল, যার পঞ্জি স্কীম সংস্থা ওভারল্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের রাজ্যে ৪৫০ টিরও বেশি শাখা ছিল। সংস্থাটির অর্থায়নে বাউলের সাম্রাজ্য চা বাগান, পরিবহন সংস্থা, হোটেল এবং সেসময় চালু হওয়া বাংলা দৈনিক ওভারল্যান্ড স্থাপিত করেছিল। ওভারল্যান্ড-কাণ্ডের তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, এক বিধবার গচ্ছিত টাকা একটি অর্থলগ্নি সংস্থা ফেরত দিচ্ছে না বলে ভবানী ভবনে অভিযোগ আসে। বেশ কিছু মানুষ সোনারপুরে ওই সংস্থার অফিসে ভাঙচুর চালায়। তৎকালীন ডিআইজি (সিআইডি) দুই অফিসারকে ঘটনাস্থলে পাঠান। তাঁরা ওই মহিলার সঙ্গে কথা বলেন। কাগজপত্র দেখে স্থানীয় থানায় ডায়েরি করে ঘটনার তদন্তভার নিজের হাতে নিয়ে নেয় সিআইডি। ওই অর্থলগ্নি সংস্থাটি যে প্রতারণা করছে, তদন্তে তা বুঝতে পারেন গোয়েন্দারা। তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়। গ্রেফতার করা হয় ওভারল্যান্ড-সহ বেশ কিছু অর্থলগ্নি সংস্থার মালিককে। ওভারল্যান্ডের বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়ে উদ্ধার হয় টাকা, সম্পত্তি। উদ্ধার হওয়া সম্পত্তির পরিমাণ এবং কত মানুষ টাকা ফেরত পেয়েছেন, সে বিষয়ে অবশ্য তদন্তকারীরা কিছু জানাতে পারেননি।হাইকোর্ট রিসিভার বসিয়েছিল। পুরো বিষয়টি রিসিভারের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
উভয় ক্ষেত্রেই
আদালত কর্তৃক রিসিভার বসেছিল ।
সঞ্চয়িতার ক্ষেত্রে রিসিভার বসেছিল ১৯৮৩ সালে। ওভারল্যান্ডের ক্ষেত্রে ১৯৯৮-তে। প্রথমটির ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে রিসিভার বসানোর নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু সঞ্চয়িতা এবং ওভারল্যান্ড দুই আর্থিক কেলেঙ্কারির ক্ষেত্রেই আমানতকারীরা এগখনও পুরো টাকা ফেরত পাননি। কবে যে সব আমানতকারী টাকা ফেরত পাবেন, তা জানেন না আদালত নিযুক্ত স্পেশ্যাল অফিসারেরাও।
ওভারল্যান্ডের ক্ষেত্রে টাকা কিন্তু কোনো সমস্যা নয়। বন্ধ করে দেওয়া ওই লগ্নি সংস্থার যে সম্পত্তি রাজ্য সরকার বাজেয়াপ্ত করেছিল, তা বিক্রি করেই সব আমানতকারীর টাকা মোটানো সম্ভব বলে মনে করছে আদালত নিযুক্ত স্পেশ্যাল অফিসারের দফতর। তা হলে সব আমানতকারীর টাকা ফেরত দিতে এত দেরি হওয়ার কারণ কি?
স্পেশ্যাল অফিসারের দফতর সূত্রের দাবি, প্রতিটি জমি বিক্রি নিয়ে বার বার আদালতের অনুমতি নিতে হচ্ছে। তার পরে বিজ্ঞাপন দিতে হচ্ছে। এর ফলে গোটা প্রক্রিয়ায় অযথা দেরি হচ্ছে।
আর সঞ্চয়িতার ক্ষেত্রে ঠিক কত টাকা লগ্নি সংস্থাটি বাজার থেকে তুলেছিল, সেটাই এখনও পরিষ্কার নয়। পাশাপাশি সঞ্চয়িতার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার যে পরিমাণ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছিল, কার্যত দেখা যাচ্ছে, তার অনেকটাই তাদের হাতে আসবে না। আদালত নিযুক্ত স্পেশ্যাল অফিসারের দফতর জানাচ্ছে, সঞ্চয়িতার বাজেয়াপ্ত করা অনেক বাড়ির ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সেগুলিকে দেখিয়ে সঞ্চয়িতা বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছিল। সেই ঋণের টাকা আর শোধ করতে পারেনি সংস্থাটি। আদালতের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক ওই বাড়ির দখল নিয়েছে।
স্পেশ্যাল অফিসারের দফতর হিসেব করে দেখেছে, ১ লক্ষ ৩১ হাজার আমানতকারীর কাছ থেকে সঞ্চয়িতা যে টাকা তুলেছিল, তার মাত্র ২০ শতাংশ মূল্যের সম্পত্তি কমিশনের হাতে এসেছে। মূল সমস্যাটা সেখানেই। বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি বর্তমান বাজার দরে বিক্রি করার অনুমতি পেলে তহবিল যেমন বাড়ত, তেমনই সব আমানতকারীকে টাকা দেওয়ার গ্যারান্টিও দেওয়া যেত বলে স্পেশ্যাল অফিসারের দফতরের একটি সূত্র জানিয়েছেন। সঞ্চয়িতার স্পেশ্যাল অফিসারকে আগে প্রতিটি ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে হত। তাতে অযথা সময় নষ্ট হচ্ছিল। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট কলকাতা হাইকোর্টকে এই দায়িত্ব দেওয়ার গোটা প্রক্রিয়াটি অনেকটাই সরল হয়েছে। তা সত্ত্বেও সঞ্চয়িতার গোটা প্রক্রিয়া কবে শেষ হবে, তার কোনও পূর্বাভাস দিতে পারেনি স্পেশ্যাল অফিসারের দফতর।
আবার ওভারল্যান্ডের জন্য গঠিত রিসিভারের অফিস সূত্রের খবর, ওই সংস্থায় টাকা খাটিয়েছিলেন ৩ লক্ষ ৪১ হাজার মানুষ। ওভারল্যান্ড মোট ৩৪ কোটি ৯ লক্ষ টাকার আমানত সংগ্রহ করেছিল। স্পেশ্যাল অফিসারের দফতরের দাবি, ৯৭ হাজার আমানতকারী ইতিমধ্যেই ৬ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকা ফেরত পেয়ে গিয়েছেন। এখনও ২ লক্ষ ৪৪ হাজার আমানতকারীকে টাকা দেওয়া বাকি। তার জন্য আরও ২৭ কোটি ২১ হাজার প্রয়োজন।
কী ভাবে এত টাকা মেটালেন স্পেশ্যাল অফিসার? বাকি টাকাই বা আসবে কোথা থেকে?
ওভারল্যান্ড-কাণ্ডের স্পেশ্যাল অফিসারের দফতর সূত্রের খবর, তদন্তে নেমে পুলিশ ওভারল্যান্ডের ১ হাজার ৫৪৬ বিঘা সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছিল। সেই সম্পত্তি বিক্রি করেই ধীরে ধীরে আমানতকারীদের টাকা মেটানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে ২৩৪ বিঘা জমি বিক্রি করা হয়েছে। তা থেকে প্রাপ্ত টাকা থেকে মেটানো হয়েছে ৯৭ হাজার আমানতকারীর পাওনা।
স্পেশ্যাল অফিসারের অফিস সূত্রের খবর, ওভারল্যান্ডের বাজেয়াপ্ত সম্পত্তির মধ্যে বেশ কিছু জমি রয়েছে রাজারহাট-নিউটাউন, বর্ধমান সদর এলাকায়। যেখানে জমির বর্তমান বাজারদর আকাশছোঁয়া। ওই জমি বিক্রি করে আমানতকারীদের সুদ-সহ সব টাকা মেটানো যেত। কিন্তু আমানতকারীদের শুধু আসলের টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে। কেন? ওভারল্যান্ডের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট নিযুক্ত স্পেশ্যাল অফিসার রণজিৎ মিত্র বলেন, “আমরা আমানতকারীদের শুধু ‘আসল’-টা ফেরত দিচ্ছি। কোনও সুদ দেওয়া হচ্ছে না। এমনটাই আদালত নির্দেশ দিয়েছিল।”
এত মূল্যবান জমি যখন সরকারের হাতে রয়েছে, তখন আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে এত দেরি হচ্ছে কেন? স্পেশ্যাল অফিসারের দফতর সূত্রে বলা হয়, গোটা প্রক্রিয়াটাই অত্যন্ত জটিল। বাজেয়াপ্ত কোনও জমিরই আর্থিক মূল্যায়ন করা হয়নি। প্রতিটি জমি বিক্রির ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশে বিজ্ঞাপন দিতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে আদালতও জমির দাম ঠিক করে দিচ্ছে। তাই এত দেরি হচ্ছে। দেরিতে হলেও ওভারল্যান্ডের আমানতকারীরা একটু একটু করে তাঁদের টাকা ফের পাচ্ছেন। যে জমি সরকারের হাতে রয়েছে, তাতে সব আমানতকারীই যে তাঁদের আমানত ফেরত পাবেন সেই নিশ্চয়তা দিয়েছেন স্পেশ্যাল অফিসার। তিনি বলেছেন, “ওভারল্যান্ডের সব আমানতকারীকেই তাঁদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে।”
কিন্তু পঞ্জি স্কীমের মোহ থেকে চিরতরে মুক্ত হতে পারেনি পশ্চিমবঙ্গে জনসাধারণ । তাই একদেড় দশকের ব্যবধানে আবার দেখা মিলেছে বিভিন্ন রকমের পঞ্জি স্কীমের ।
পনজি স্কিম এক অদ্ভুত কারবার৷প্রায় প্রতি দশ বছর অন্তর এর বাড়াবাড়ি হয়৷বাজারে এন্তার টাকা ওড়ে৷তারপর কোনও না কোনও কেলেঙ্কারির ফাঁসে শুরু হয় ‘ধর ধর ওই চোর ওই চোর’পালা৷ দেখতে দেখেতে বাজার থেকে কোটি কোটি টাকা গায়েব৷লক্ষ লক্ষ মানুষ সর্বস্বান্ত৷ মজা হচ্ছে, যখন এই পনজি স্কিমগুলি রমরমিয়ে চলে তখন সাধারণের মুখে মুখে সেগুলির কথা ফিরলেও রাজ্যসরকারের তাবড় মাথা তা নিয়ে ঘামান না৷যেন সব বায়বীয় পদার্থ, চোখে দেখা যায় না, হাত দিয়ে ছোঁয়া যায় না৷ কোনও একটা সংস্থা ফাঁসলে তবেই জানা যায়,অমুক লক্ষ কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছে, তমুকের হাজার হাজার কোটি টাকার হিসাব মেলেনি ইত্যাদি ইত্যাদি৷শুরু হয় হইচই, থানা-পুলিশ, কোর্ট-কাছারি, একে গ্রেফতার তো তাকে দফায় দফায় জেরা৷ ‘জেল ভরো’য় তখন শশব্যস্ত প্রশাসন৷ মাঝখান থেকে টাকাগুলো কোথায় লুকোয় কে জানে! কিছুদিন বুক-কপাল চাপড়াচাপড়ি, তারপর ক্রমে উত্তেজনা থিতিয়ে আসে, একটা সময় মনে হয়-পনজি স্কিম বলে কোনও কিছু ছিলই না৷এইভাবে আট-দশ বছর কেটে গেলে দেখা যায়-আবারও তা মাথা চাড়া দিয়েছে৷ নতুন নামে, নতুন চেহারায়৷ কিন্তু কাজ সেই একই জনসাধারণের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে ফুলেফেঁপে ওঠা৷ পনজি স্কিমের সঙ্গে রাজনীতির কারবারিদের যোগাযোগও নতুন কোনও ব্যাপার নয়৷বাস্তবিক, সেই যোগাযোগের জায়গাটা পোক্ত থাকে বলেই রাজ্যে পনজি স্কিমের বাড়বাড়ন্ত ঘটে৷ রাজনৈতিক দল চালাতে লাগে জলের মত টাকা৷ক্ষমতায় থাকলে সেই টাকার খাঁই আরও বেড়ে যায়৷ এই খাঁই মেটে হিসাব-বহির্ভূত অঢেল পয়সায়, আর কারবার বজায় রাখতে তা অকাতরে বিলোতে পারে প্রধানত পনজি স্কিমগুলি৷ অন্য রাজ্যের কথা না হয় মুলতুবি রাখা গেল, এ রাজ্যের প্রসঙ্গে বলা যায়, জনসাধারণের পকেট কাটা ‘এই মারি তো গণ্ডার লুটি তো ভাণ্ডার’-এর বখরা তৃণমূল-বাম উভয় রাজনৈতিক দলই পেয়েছে৷কেউ কম, কেউ বেশি, আর ক্ষমতায় থাকলে অনেক অনেক বেশি৷
ওভারল্যান্ডের রিসিভার বসার প্রায় একদেড় দশকের ব্যবধানে পশ্চিমবঙ্গে আবার দেখা মিলল নতুন এক পঞ্জি স্কীমের। এর নাম সারদা ।
From Sanchayita to Saradha, Rose Valley, a dark period in West Bengal – Part I
it’s been more than 50 years since the first Chit Fund debacle happened in West Bengal. Since, the early 70s Sanchayita, Overland, Sanchayini and Venora were operational in West Bengal, and according to SEBI, there are 600 ponzi companies which are still operating and striving in West Bengal by hiding their real identity.
From 1970s to the 80s Sanchayita was operational in West Bengal, and had collected more than Rs 120 crores before the raids were conducted. Sambhu Mukherjee and Swapan Guha, the men at the helm of Sanchayita were arrested, while the former committed suicide.
A decade and a half later, another Chit Fund company, Overland Investment, duped the investors of West Bengal. Headed by Ajit Kumar Bowal, Overland Investment had more than 450 offices and acquired a tea estate, a transport company, and even had a news daily by the name “Dainik Overland” with the accumulated wealth.
After the raids, Receiver was appointed in 1983 for Sanchayita, and in 1998 for Overland. While Hon’ble SC appointed the Receiver for the former company, Hon’ble Calcuuta HC, appointed the Receiver for the latter. But in both cases, only a few of the investors have received back their hard earned money.
As per the Office of the Special Officer, refunds in case of Overland is not a problem, but the lengthy processes are the cause of the delay, as Court Orders are to be obtained for selling the attached properties, and valuations are to be done before selling the properties through advertisements.
Over 3 lac 41 thousand invested their money amounting to Rs 34 crore 9 lac in Overland, and refunds of Rs 6 crore 44 thousand have already been made to 97 thousand investors. Now, funds amounting to 27 crore 21 thousand rupees, remains to be returned to 2 lac 44 thousand investors.
But, how will the refunds happen?
Overland acquired over 1 thousand 546 bighas of land in prime locations of Bardhaman, Rajarhat-New Town, which were attached during raids. 234 bighas has already been sold off to repay 97 thousand investors, and the rest of the properties will too be sold to repay the rest of the investors.
In case of Sanchayita the scenario is completely different, as the Commission is still not aware how much funds were collected by the Company from the investors. The properties of Sanchayita which were attached during raids were also pledged with banks, and the banks have taken over the properties due to non-payment. Out of the funds which were collected from the 1 lac 31 thousand investors, the worth of the properties which the Commission has, can only repay 20 percent of the funds collected from the investors. The Commission too had to seek for permissions of the Supreme Court which delayed the proceeding, and even after the matter was taken over Calcutta HC, the situation has not improved, as a result the Commission could not guarantee of any specific date as to when they shall be able to complete all refunds.
Surprisingly, there was a lack in awareness drives from the State govt., on the modus operandi of the Chit Fund companies and a decade later another Ponzi company named “Sarada”, surfaced in the horizon of West Bengal.
– Amlan & Jaydeep