কীভাবে খেলা হয়?
খেলার সঙ্গীরা শুরুতে একজন বন্ধুর চোখ রুমাল বা কাপড়ের টুকরো দিয়ে বেঁধে দেয়, তারপর তাকে ছাড়া হয় খোলা মাঠে। পাতলা গামছাও ব্যবহার করে থাকে অনেক গরীব ঘরের ছেলেমেয়েরা। চোখ বাঁধা খেলোয়াড়ের পাশাপাশি অবস্থান করে সহ-খেলোয়াড়রা। তারা ছড়া কেটে বলতে থাকে, “কানামাছি ভোঁ ভোঁ/যাকে পাবি তাকে ছোঁ।” ছড়া বলতে বলতেই কাপড়বাঁধা খেলোয়াড়ের চারপাশে কাছে-দূরে নানানভাবে ঘুরতে থাকে। কখনও পায়ের কাছে যায়, কখনও কাঁধের পাশে আসে, কানের কাছে ছড়ার একটি শব্দ বলেই পালায়। এদিকে খেলোয়াড়ের কান থাকে সচেতন, আওয়াজ কোথা থেকে আসছে, খেয়াল রাখতে হবে। সেইমতো সামনে, পিছনে, নিচু হয়ে অন্য খেলোয়াড়দের ছোঁয়ার মরিয়া চেষ্টা করতে হবে, তবেই মুক্তি। অবশেষে যাকে স্পর্শ করা হবে, সেই হবে পরবর্তী ‘চোর‘।
খেলার শিক্ষা
মাছি (Domestic Fly: Musca domestica ) গ্রাম বাংলার একটি ক্ষতিকর পতঙ্গ, অথচ তার চোখটির বিশেষত্ব — পুঞ্জাক্ষি, চারপাশে দেখবার অবাধ সুযোগ, কানা হয়ে গেলে তার জারিজুরি শেষ। এরা মলমূত্রের উপর বসে, নোংরা আবর্জনায় বসে, আবার খাবারেও বসে — গৃহস্থের খাবার দূষিত করে, আন্ত্রিক রোগ ছড়ায়। ছোটোবেলা থেকে মাছিকে চেনানো হয় এই লোকক্রীড়ার মাধ্যমে, খেলার আনন্দের মধ্যে দিয়ে। তার আওয়াজ সম্পর্কে পরিচয় ঘটে। মাছি থেকে নিরাপদে থাকতে খাবার ঢেকে রাখতে হয়, এখানে মাছি থেকে পালানোর অভিনয়ে তা স্পষ্ট হয়ে দেখা দেয়। মাছিকে কানা করার তাৎপর্য হল, তাকে দমনের ব্যবস্থা করা, নানান ভাবে তাকে নিয়ন্ত্রণ করা — গ্রামে কাঁচা গোবর জলে উঠোন ও ঘরদোর নিকোনো হয় দৈনিক, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতাই মাছি নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি, মাছির প্রজনন ক্ষেত্রগুলি বিনষ্ট করা প্রয়োজন, ভেষজ উদ্ভিদের ব্যবহার করলেও কিছুটা দমন করা যায় এবং সর্বোপরি খাবার ঢেকে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। মাছি সুযোগ পেলেই ক্ষতি করার জন্য তৎপর — মানুষ ও পতঙ্গের মধ্যে এই চাপান-উতোরটিই খেলাটির শিক্ষা।