বসিরহাটের নবনির্বাচিত সাংসদ নুসরত জাহান সম্প্রতি বস্ত্র ব্যবসায়ী ও কলকাতার বাসিন্দা নিখিল জৈনের সঙ্গে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হয়েছেন। বিয়ের অনুষ্ঠানটি হয়েছে। অবশ্য বিদেশে। দেশে ফিরে তিনি সংসদে মন্ত্র গুপ্তির শপথ নেন। আর সেই শপথানুষ্ঠানে তিনি ছিলেন নববধূর বেশে। সিথিতে সিদুর, কপালে টিপ, হাতে। পলা-শাঁখা এবং গলায় মঙ্গলসূত্র পরিহিতা এক হিন্দু বাঙ্গালি বধূ। শপথ গ্রহণ শেষে ‘বন্দে মাতরম্ উচ্চারণ করেন। আর এই বেশ ও উচ্চারণ তাঁর কাল হয়।
উত্তরপ্রদেশের দেওবন্দের দার-উল-উলুমের ইমাম মুফতি আজাদ ওয়াসিম নুসরতের ওই আচার-আচরণকে ভালো চোখে নেননি। তিনি এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ফতোয়া জারি করেন। তাঁর বক্তব্য, নুসরত মুসলমান, সিদুর পরার অধিকার নেই। আসলে মুসলমান নুসরতকে হিন্দু বধূবেশে চাক্ষুষ করে ইমাম সাহেব তাঁর মেজাজ হারান এবং তাঁর ক্রোধ ওঠে চরমে। অবশ্য বিদ্বেষমূলক ফতোয়া জারিতে দেওবন্দের যথেষ্ট কু খ্যাতি আছে। ইতিপূর্বেও এখান থেকে বহু সাম্প্রদায়িক ফতোয়া জারি হয়েছে। সেসব নিয়েও সারা দেশে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।নুসরতকে নিয়েও ওই ইমাম বা মুফতির সাম্প্রদায়িক মন্তব্য বা ফতোয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় নিন্দার ঝড় উঠেছে।
ভারত গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। সংবিধানের দৃষ্টিতে ভাষা, ধর্ম, বর্ণ, আচার, মত, পথ, পোশাক, উপাসনা অঞ্চল ভেদে সব মানুষ এক। ভারতীয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা পালনের দায়দায়িত্ব যেন একমাত্র হিন্দুদের। আর মুসলমানদের একটা বড়ো অংশের সেই দায় নেই। তারা মন-মানসিকতায় শরিয়তপন্থী। ইসলামিক ভাবধারা চালিত ও তাড়িত। প্রায় ছয় দশকের কংগ্রেস সহ সেকুলারবাদী শাসকরা ধর্মনিরপেক্ষতার নামে করে গেছে। শুধু নির্ভেজাল মুসলমান তোষণ। আর হিন্দুদের ভাবাবেগকে দুর্বল করে প্রতিনিয়ত ক্ষত-বিক্ষত করেছে। যার বিষময় ফল তাই আজও ফলছে। বাকস্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে। তারা যাচ্ছেতাই বলে যাচ্ছে। আসলে তারা থাকেন ভারতে কিন্তু মনে-প্রাণে জেহাদি-পাকিস্তানি। ধর্মনিরপেক্ষতার সুযোগ নিয়ে জেহাদিমুসলমান যুবকরা হিন্দু নারীদের লাভ জেহাদের ফাদে ফেলে ধর্মান্তরিত করে শয্যাসঙ্গিনী করেছে। কই, তা নিয়ে তো কোনো ইমাম-উলেমা বা মুফতি-মৌলানা মুখ খোলেন না। কেন?না, ওটা যে ইসলামের রীতি-নীতি ও অনুশাসনের অঙ্গ। অবশ্য নুসরতের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারির ক্ষেত্রে ইমাম মুফতি ওয়াসিম একাই নন, আছেন আরও বহু ইমাম। এঁরা ধর্ম গুরু, না সাম্প্রদায়িক বিভাজনের শুরু? শোনা যাচ্ছে, এই ফতোয়া জারির পিছনে রয়েছে আরও কিছু গোঁড়া ইসলামপন্থীর উস্কানি। নুসরতও এ ব্যাপারে মুখ খুলেছেন। তবে মুখ রক্ষার জন্য।
অতঃপর ওইসব ফতোয়াবাজ ধর্মগুরু ও তাদের সাকরেদদের কাছে প্রশ্ন, চীনে তো প্রশাসন মুসলমানদের নাম ভুলিয়ে দিচ্ছে। মুসলমান নাম বদলে চীনা নাম রাখতে হবে বলে নির্দেশ জারি করেছে। প্রকাশ্য স্থানে নামাজ পড়া ও মসজিদ নির্মাণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হাজার হাজার মসজিদ ভেঙে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে। খাদ্যাখাদ্য পরিবর্তনে বাধ্য করা হচ্ছে। এমনকী, ইসলামিক ধর্মীয় গুর ও উগ্রবাদীদের সংশোধনাগারে ঢুকিয়ে মগজধোলাই করাও হচ্ছে। আর এসব ঘটনার কথা বা খবর নিশ্চয়ই মোল্লা-মৌলবিদের অজানা নয়। তাহলে এ ব্যাপারে তারা কেন মুখে কুলুপ। এঁটে আছেন? চীন মহাশক্তিধর দেশ বলে ? পাকিস্তানের বন্ধু বলে? আর যত দোষ নন্দ ঘোষ’ বেচারি নুসরত?
ইতিপূর্বে মন্দিরে পুজো দেওয়ার অপরাধে নুসরতকে ভোট না দেওয়ার ফতোয়া জারি করেছিলেন বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের একশ্রেণীর হিন্দুধর্ম বিদ্বেষী গোঁড়া মুসলমান ও ইসলামি ধর্মগুরু। কিন্তু অবস্থা বেগতিক বুঝে শাসকদলের মন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম তাদের বুঝিয়েছিলেন এই বলে যে, নুসরতকে ভোট
দিলে বিজেপি সুবিধা পেয়ে যাবে। তাই ধর্মগুরু বা ফতোয়াপন্থীদের অন্য ধর্মকে মর্যাদা দিতে শিখতে হবে। ধর্মনিরপেক্ষ দেশে গণতন্ত্রের সুযোগ নিয়ে কথায় কথায় আর ফতোয়া জারি করাবেন না, ইসলাম বিপন্ন’ বলে ধুয়ো তুলবেন না। আজ বিশ্বজুড়ে যে ইসলামি সন্ত্রাস, অন্তর্ঘাত ও নরহত্যার জেহাদ চলছে, তার জন্য বহুলাংশে মৌলবীরা দায়ী। কাফের’ (বিধর্মী) নয়, মানুষকে স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ জীব ভাবুন। জেহাদ’ নয়, অমানবতা তথা পাশবিকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শামিল হোন। আর মধ্যযুগীয় কুপ্রথা ‘ফতোয়া’কে বিদায় জানিয়ে আহ্বান করুন ভ্রাতৃত্ব, মমত্ব ও ভালোবাসাকে। সবাইকে দেখুন ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে। ধর্ম হচ্ছে সেটাই।
ধীরেন দেবনাথ
2019-07-26