‘ফণী’র গতিবিধি দেখে আবহবিদরা বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টার মধ্যেই পুরীতে আছড়ে পড়বে ফণী । শুক্রবার গভীর রাতে ১১৫ কিমি বেগে তা আছড়ে পড়বে এরাজ্যে । তাই, প্রয়োজনে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিপর্যয় ব্যবস্থাপন ও অসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের হেল্পলাইন ১০৭০-তে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে ।
বৃহস্পতিবার নবান্নে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে ‘ফণী’ নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। সর্বশেষ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আজ দুপুর বারোটায় বৈঠক হয় নবান্নতে । রাজ্য সরকারের অন্যান্য দফতরগুলির পাশাপাশি প্রস্তুতি তুঙ্গে কলকাতা পুলিশেও । শহরের সব বিভাগীয় ডেপুটি কমিশনার এবং উচ্চপদস্থ অফিসারদের নিয়ে লালবাজারে দীর্ঘ বৈঠক করেন নগরপাল রাজেশ কুমার । নবান্নের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের স্টেট এমারজেন্সি অপারেশন সেন্টারে ‘ফণী’র জন্য বিশেষ কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে । রাজ্য সরকার জানিয়েছে, আগামী রবিবার পর্যন্ত ওই কন্ট্রোল রুম থেকেই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা হবে । ১২ ঘন্টার দুটি শিফটে কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে থাকবেন একজন আইএএস অথবা ডবলিউবিসিএস (এক্সিকিউটিভ) পদমর্যাদার আধিকারিক। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা তাঁদের সাহায্য করবেন।
পাশাপাশি, পরিস্থিতির মোকাবিলায় এদিন দিল্লিতে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিপর্যয় মোকাবিলায় রাজ্য সরকার এই কয়েকটি হেল্পলাইন নম্বর ঘোষণা করেছে – ০৩৩ ২২১৪-৩৫২৬, ০৩৩ ২২১৪-৫৬৬৪, ০৩৩ ২২৫৩-৫১৮৫, ১০৭০। সব নম্বর গুলোই টোল ফ্রি ।
শুক্রবার বেলা ১২ টাতেই ফণীর দাপট দেখতে পাবে পুরী সহ ওড়িশার উপকূলীয় এলাকা । ইতিমধ্যেই অবশ্য ৪ লক্ষেরও বেশি মানুষকে ওডিশা উপকূল থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে । আরও মানুষকে নিরাপদ দূরত্ব ও আশ্রয়ে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে । প্রায় ৯০০টি ত্রাণ শিবির তৈরি রাখা হয়েছে। তৈরি রয়েছে অন্য সবরকম বন্দোবস্তও।
ফণীর প্রভাবে অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলীয় জেলাগুলিতে বৃষ্টি শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার থেকেই । বইছে ঝোড়ো হাওয়া । ক্রমশ সাইক্লোনটি উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে আগুয়ান হচ্ছে। আবহাওয়া দফতরের ধারণা এখনও ফণী যে অবস্থায় রয়েছে তাতে তা সর্বোচ্চ ২০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে স্থলভাগে আছড়ে পড়তে পারে।
ফণীর জেরে ইতিমধ্যেই কলকাতায় শুরু হয়েছে বৃষ্টি । সকাল থেকে আকাশ ছিল মেঘলা । বেলা বাড়তেই শুরু হয় বৃষ্টি । দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে । একই সঙ্গে বইবে ঝোড়ো হাওয়া । আবহাওয়াবিদদের আশংকা, শুক্রবার কলকাতায় বৃষ্টি হবে ১৭ মিলিমিটার । শনিবার, ২৩ মিলিমিটার । হাওড়ায় শুক্রবার বৃষ্টি হতে পারে ২৩ মিলিমিটার । শনিবার হবে ২৯ মিলিমিটার । হুগলিতে শুক্রবার বৃষ্টিপাতের সম্ভবনা ১০ মিলিমিটার । শনিবার, ৩৩ মিলিমিটার । উত্তর ২৪ পরগনায় শুক্রবার, ১৭ মিলিমিটার, শনিবার বৃষ্টি হতে পারে ৩২ মিলিমিটার । দক্ষিণ ২৪ পরগনায় শুক্রবার বৃষ্টি হবে ১৮ মিলিমিটার । শনিবার হতে পারে ২৫ মিলিমিটার । পূর্ব মেদিনীপুরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ শুক্রবার হতে পারে ২৪ মিলিমিটার । শনিবার হবার সম্ভবনা ২৪ মিলিমিটার । পশ্চিম মেদিনীপুরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ শুক্রবার হবে ২৪ মিলিমিটার । শনিবার বৃষ্টি হতে পারে ৬৭ মিলিমিটার । বাঁকুড়ায় শুক্রবার ১১ মিলিমিটার বৃষ্টি হবে । শনিবার হবে ৬৭ মিলিমিটার । পুরুলিয়াতে শুক্রবার ১৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হবে । শনিবার হবে ৬৭ মিলিমিটার । শুক্রবার ঝাড়গ্রামে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হবার সম্ভবনা । শনিবার হবে ৬৭ মিলিমিটার । নদিয়ায় শুক্রবার ৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হবে । শনিবার ৭৫ মিলিমিটার । বর্ধমানে শুক্রবার বৃষ্টি হতে পারে ৭ মিলিমিটার । শনিবার ৬০ মিলিমিটার । বীরভূমে শুক্রবার বৃষ্টি না হলেও শনিবার ৮২ মিলিমিটার বৃষ্টি হবার কথা । সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হবে মুর্শিদাবাদ জেলায় । শুক্রবার ৮ মিলিমিটার । শনিবার ১১৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে ওই জেলায় । চূড়ান্ত সর্তকতা জারি হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় । ১০টি ব্লকে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
ইতিমধ্যেই নবান্নের নির্দেশে জেলা প্রশাসনের তরফে নারায়ণগড়ে মোতায়েন করা হয়েছে ৩০ সদস্যের এনডিআরএফ-এর দল । পাশাপাশি সিভিল ডিফেন্সের টিমকে খড়গপুর ও মোহনপুর দুই জায়গায় রাখা হয়েছে । বৃহস্পতিবারই নবান্নে মুখ্য সচিব মলয় দের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন জেলাশাসক পি মোহন গান্ধী । এর আগে বুধবার সমস্ত দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন জেলাশাসক । ইতিমধ্যেই জেলার বন্যাত্রাণ কেন্দ্রগুলিকে তৈরি থাকার নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক । মজুত করা হয়েছে ত্রাণ সামগ্রী। কাঁচাবাড়ি ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় সেই সমস্ত বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ক্যাম্পে।
অন্যদিকে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন পার্ক দু” দিন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে বন দফতর । ঝড়ে ক্ষতির আশঙ্কায়, চাষিরা মাঠ থেকে কাঁচা ফসলই কেটে ঘরে তুলছে । পরিস্থিতি পর্যালোচনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দুপুরেই উচ্চপর্যায়ের জরুরি বৈঠক করেছেন ৷ উপস্থিত ছিলেন ক্যাবিনেট সচিব, মুখ্যসচিব ৷ আলোচনা করা হয় এনডিআরএফ-সহ বিপর্যয় মোকাবিলা দলের প্রধানদের সঙ্গে ৷ রেলের তরফে খোলা হয়েছে বিশেষ হেল্পলাইন নম্বর ৷ হাওড়ার নম্বর ৬৩৯৫০, ৪৫২৭১৷
সবমিলিয়ে, ঘূর্ণিঝড় ফণীর তাণ্ডবের মোকাবিলায় সমস্ত রকমের প্রস্তুতি তুঙ্গে ৷ আবহাওয়া দেখে বিমান চলাচলের সিদ্ধান্ত নেবে বিমানবন্দর এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল, কলকাতা বিমানবন্দরে জরুরি বৈঠকে এমনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ।ফণী সতর্কতায় বিশেষজ্ঞ দল গঠিত হয়েছে । দলে ইঞ্জিনিয়র ও অপারেশন সিস্টেমের আধিকারিকরা রয়েছেন । এই বিশেষজ্ঞ দল ২৪ ঘণ্টা উপস্থিত থাকবেন বিমানবন্দরে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানানো হয়েছে, বিমানবন্দরের কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে । ভিজিটর প্রবেশেও জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা । সিকিওরিটি ফোর্সকে বিমানবন্দরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার কলকাতার আকাশ থাকবে প্রধানত মেঘাচ্ছন্ন । আপেক্ষিক আদ্রর্তার দরুন পরিবেশ হবে অস্বস্তিকর । বৃহস্পতিবার অবশ্য কলকাতার আকাশ ছিল আংশিক মেঘলা । আবহাওয়াবিদরা জানান, এদিন রাজ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস । স্বাভাবিকের থেকে ১ ডিগ্রী কম । সর্বনিম্ন,২৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস । স্বাভাবিকের থেকে ৩ ডিগ্রি বেশি । বাতাসে অপেক্ষিক আদ্রর্তার পরিমাণ ছিল সর্বোচ্চ ৯১ শতাংশ । সর্বনিম্ন, ৫৭ শতাংশ । গত চব্বিশ ঘন্টায় কলকাতা ও পাশ্ববর্তী অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয় নি।