মহালয়াতেই চক্ষুদানের মাধ্যমে মৃন্ময়ীকে চিন্ময়ীতে রূপান্তর

মহালয়া মানেই মা দুর্গার মর্তে আগমন। এই দিনটিতেই পিতৃপক্ষের অবসান ঘটিয়ে শুরু হয় দেবীপক্ষের। বাঙালির দুর্গাপূজায় এই মহালয়া তিথিতেই দেবী প্রতিমার চক্ষুদান করা হয়। প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা এই রীতি মেনে আজও বালুরঘাটে মহালয়া তিথিতেই দুর্গা প্রতিমার চক্ষুদান করেন মৃৎশিল্পীরা। শাস্ত্র মতে মহালয় থাকে ঘোর অমাবস্যা। এদিন মর্ত্যে দেবীর আগমন এর সাথে সাথেই সূচনা হয় মাতৃ পক্ষের।

মণ্ডপে মণ্ডপে উচ্চারিত হয় “যা দেবীষু সর্বভূতেষু মাতৃরূপেন সংস্থিতা, নমস্ত্যসৈ নমস্ত্যসৈ নমস্ত্যসৈ নমঃ নমঃ”। শাস্ত্র মতে মহাসপ্তমীর দিন নবপত্রিকার প্রবেশের পর সকালে চক্ষুদান করার নিয়ম থাকলেও।

পরবতীতে অনেকেই দেবীপক্ষের সূচনার লগ্নকে শুভমুহূর্ত মেনে রং তুলির ছোঁয়ায় দেবীর মাটির প্রতিমার চক্ষু আঁকেন। প্রথমে ঊর্ধ্বনয়ন(ত্রিনয়ন) তারপর বাম এবং শেষে ডান চক্ষু আঁকা হয়। চক্ষু দানের মাধ্যমেই মৃন্ময়ী থেকে চিন্ময়ী রূপে প্রতিষ্ঠিত হন মা দূর্গা।

মর্ত্যে এসে দেবীর দিব্যদৃষ্টির আলোয় অন্ধকার ঘুচিয়ে আলোকিত হয় এই ধরা। প্রায় একশ সাতাত্তর বছর ধরে মহালয়ার পুণ্যলগ্নে রায়কুমুদিনী স্টেটের জমিদার বাড়ির দেবী প্রতিমায় চক্ষুদান হয়ে আসছে। বালুরঘাটের সাড়ে-তিন-নম্বর মোড়ে অবস্থিত এই জমিদারবাড়ির মণ্ডপে এদিন চক্ষুদান করলেন মৃতশিল্পী হিমাংশু মোহান্ত। এদিন তিনি জানিয়েছেন যে আগে তাঁর পিতা এই বাড়ির প্রতিমা তৈরী করতেন। পিতার মতো তিনিও মহালয়ার দিনেই দেবীপক্ষের সূচনা কালে প্রতিমায় চক্ষুদান করেন।

রায়কুমুদিনী স্টেটের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত বনমালী সাহারায়ের নাতী কালীকৃষ্ণ সাহারায় এদিন জানিয়েছেন যে ১৮৪২ সালে বাংলাদেশের পাবনা জেলার জামিত্তি গ্রামে প্রথম এই দুর্গাপূজার আয়োজন হয়েছিল। পরবর্তীতে বাণিজ্য করতে এসে পাবনার পাশাপাশি অবিভক্ত দিনাজপুরের বালুরঘাটেও তিনি একই নিয়মে পূজার প্রতিষ্ঠা করেন। দীর্ঘ ১৭৭বছর ধরেই তাঁদের এই পূজায় মহালয়ার দিনেই প্রতিমায় চক্ষুদান হয়ে থাকে। এবারেই সেই নিয়মের ব্যতিক্রম হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.