গভীর রাতেই নরেনের শয্যার পাশে ঠাকুর যেন এসেছেন। এক অলৌকিক বিভায় ভোরে গেছে চারিপাশ।
কে যেন ফিসফিস করে বললেন , “বাক্য ও মন যাকে পেয়ে নিবর্তিত হয় তাই মৌন ।”
অন্ধকারে নরেন্দ্রনাথ চিৎকার করে উঠলেন – “ঠাকুর র র র……”
আরেক রাতে ঠাকুর বললেন ,” নরেন, কি খুঁজিস? সুখ? হায় , হায় সুখ কি খোঁজার বস্তু রে? নিজের মধ্যে তাকিয়ে দেখ আমি আছি। আমাকে কি বলে বোধ হয় তোর?
” তুমি আস্তিকের আস্তি, নাস্তিকের নাস্তি , তুমি শূন্যবাদীর শূন্য, তুমি অদ্বৈতবাদীর অদ্বৈত।”
শূন্য হাওয়া খেলে গেল নরেনের জীর্ণ কুটিরে।
মনে পড়ছে নরেনের । বাউলের দল এসেছিল , তারা নাচলে গাইলে। কেউ শুনল, কেউ শুনল না ।
নরেন্দ্রনাথ নিজেকেই বললেন শ্রী শ্রী ঠাকুরের কথা, ” he is born in vain , who having attained the human birth , so difficult to gets , does not attempt to realise in this life.”
ঠাকুর চলে যাবার পর নরেন ধরে রইল সারদা দেবীকে। একদিন তিনি বললেন, ” মা ,আজকাল দেখছি সব উড়ে যাচ্ছে। সব দেখছি উড়ে যায় ।”
সারদা দেবী বললেন , “দেখো ,দেখো আমায় কিন্তু উড়িয়ে দিও না ।”
নরেন বললেন,” মা তোমাকে উড়িয়ে দিলে থাকি কোথায়? যে জ্ঞানে গুরুর পাদপদ্ম উড়িয়ে দেয় সে তো অজ্ঞান । “
গুরু পাদপদ্ম অবলম্বন করে নরেন্দ্রনাথ পাড়ি দিলেন আমেরিকা শিকাগো শহরে । 1893 সাল , পরাধীন ভারতবর্ষ হিন্দু ধর্মে বিশ্ব দেখলো স্বামী বিবেকানন্দের হাত ধরে ।
মৃত্যু ঘন্টা বাজল ধর্মকে কেন্দ্র করে যাবতীয় সংকীর্ণতায়। ফলে ধর্মান্তর হল তখন ম্রিয়মান। গর্বিত হল পুনশ্চঃ হিন্দু ধর্ম। ঝাড়ের আলো না থাকলে সবকিছু অন্ধকার। ঈশ্বর সাকার হন বা নিরাকার, তিনিও ঝাড়বাতি চান। সে আলো দেখালেন নরেন। শুরু হল স্বামী বিবেকানন্দ এর পথ চলা জয়ী হিন্দু ধর্মের সঙ্গে।
তাঁর আবির্ভাব দিবসই বিশ্ব যুব দিবস হিসেবে পালিত হয়। তিনি আসমুদ্র হিমাচলকে পদব্রজে জয় করেছিলেন। তিনি ধ্যানে বসে ছিলেন সেই সুবিশাল সমুদ্রমাঝে গর্বে ন্যায় উত্থিত একটি শীলার উপর। হ্যাঁ সেই শীলাই বিবেকানন্দ রক নামে আমাদের নিকট সুপরিচিত।
বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল হ’ল ভারতের তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারীতে একটি সমুদ্রের স্মৃতিসৌধ। এটি একটি বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এটি স্থল-উপকূল থেকে ৫০০ মিটার দূরে সমুদ্রের দুটি পাথরের উপরে একটি নির্মিত হয়েছে।একনাথ রানাডে বিবেকানন্দ শীলাতে বিবেকানন্দ স্মৃতি মন্দির নির্মাণে প্রধানভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। একনাথ রাণাডে ছিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সরকার্যবাহক। কি ছিল সেই বিবেকানন্দের ধ্যান স্থলের ইতিহাস? কি করেই বা হল বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল? সেই নিয়েই আগামীকাল ১২ ই জানুয়ারি ২০২০ বিকাল ৪টের সময় দূরদর্শনে দেখানো হবে একটি ফিল্ম ডকুমেন্টারি : Vivekananda Rock Memorial, Kanyakumari. সবাইকে তাই আমার বিনীত অনুরোধ যে আগামীকাল যার যত কাজ,যত আধুনিক সিনেমা দেখা,পিকনিক থাকুক না কেন..একটু সময় করে ঠিক বিকেল ৪ টের সময় আমাদের ঐতিহ্যকে দেখবেন।