চিটফান্ড তদন্তে তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায় ও দলের প্রাক্তন রাজ্যসভা সাংসদ কুণাল ঘোষ সহ ৬ জনকে জেরার জন্য ডেকে পাঠাল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। তাঁদের সুনির্দিষ্ট দিনে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে কলকাতার ইডি দফতরে। ও দিকে আবার একই তদন্তে শাসক দলের প্রাক্তন এক সাংসদ সহ আরও এক জনকে নোটিস পাঠিয়েছে সিবিআই। সেই সঙ্গে নারদ কাণ্ডে সরকারের বেশ কয়েক জন অফিসারকেও জেরার জন্য নোটিস ধরিয়েছে এই কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সি।
লোকসভা ভোটের আগে থেকেই চিটফান্ড তদন্তের গতি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে সিবিআই। যে হেতু গোটা তদন্তই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে হচ্ছে, তাই প্রয়োজনে প্রতি পদক্ষেপ সর্বোচ্চ আদালতকেও জানিয়ে রাখা শুরু করেছে তারা। তাৎপর্যপূর্ণ হল, সম্প্রতি সারদা কাণ্ডের দুই মাথা সুদীপ্ত সেন ও দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে জেলে গিয়েও জেরা করে এসেছেন সিবিআই অফিসাররা।
এখন কৌতূহলের বিষয় হল, তদন্ত কোন দিকে এগোচ্ছে?
সূত্রের খবর, সিবিআই যেমন চিটফান্ড কাণ্ডে ষড়যন্ত্রের দিকটি তদন্ত করে দেখছে। তেমন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট তদন্ত করছে ‘মানি ট্রেইল’। অর্থাৎ সাধারণ মানুষের কাছ তোলা চিটফাণ্ডের টাকা কী ভাবে হাত বদল হয়েছে। তার সুবিধা পেয়েছেন কারা? এর মধ্যে শাসক দলের কারা রয়েছেন। তা ছাড়া আর কোন কোন প্রভাবশালীর কাছে টাকা পৌঁছেছে। জানা গিয়েছে, কুণাল-শতাব্দী ছাড়া দেবব্রত সরকার, সজ্জন আগরওয়াল, অরিন্দম দাসকে জেরার জন্য ডেকেছে ইডি।
এজেন্সি সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, গত কয়েক মাস ধরে সিবিআই-ইডি দু’জনেরই তদন্তের অগ্রাধিকারের বিষয় হল,-মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবির বিক্রি ও নিলাম। চলচ্চিত্র প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতাকে গ্রেফতারের পরই সিবিআই জানিয়েছিল, মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবি কেনার জন্য চিটফান্ড সংস্থাগুলির উপর চাপ তৈরি করতেন শ্রীকান্ত। পরবর্তী কালে শিবাজী পাঁজা, শুভাপ্রসন্নকেও এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রের খবর। মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবি-র প্রদর্শনী কারা আয়োজন করেছিলেন, কোথায় করেছিলেন, কে কে সেই ছবি কিনেছিলেন সবই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ জন্য একটি বেসরকারি প্রদর্শনশালার মালিককেও তদন্তকারীরা জেরা করতে পারেন বলে জানা গিয়েছে।
তৃণমূল এ ব্যাপারে দলীয় তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে দলের একাধিক নেতা ঘরোয়া আলোচনায় বলেন, কেন্দ্রীয় এজেন্সি-র অপব্যবহার করে বিরোধীদের কালিমালিপ্ত করা বিজেপি-র পুরনো খেলা। মুখ্যমন্ত্রী আঁকা ছবি বিক্রি নিয়ে কেন তদন্ত হচ্ছে তার কারণ বোধগম্য। সাধারণ মানুষও এটা বুঝবে।
অন্যদিকে বিজেপি মুখপাত্র সায়ন্তন বসু বলেন, গোটা তদন্ত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে হচ্ছে। সিবিআই তদন্ত করে যা জানানোর নিশ্চয়ই তা আদালতকেই জানাবে। তৃণমূল কি বিচারব্যবস্থার উপর অনাস্থা প্রকাশ করতে চাইছে?