রোজভ্যালি কাণ্ডে আয়কর কর্তার কলকাতা-মুম্বই-পাটনার বাড়ি-অফিসে তল্লাশি, বাজেয়াপ্ত নথি

রোজভ্যালি তদন্তে নয়া মোড়। দেশের তিন প্রান্তে এক ইনকাম ট্যাক্স অফিসারের অফিস এবং বাড়িতে তল্লাশি চালাল কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি। শনিবার কলকাতা, মুম্বই এবং পাটনায় সিনিয়র ইনকাম ট্যাক্স অফিসার নিরজ সিং-এর বাড়ি এবং অফিসে তল্লাশি চালান ইডি আধিকারিকরা। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে একাধিক সম্পত্তির নথি।

এই তল্লাশি দেখে অনেকেই বলছেন, তদন্ত এজেন্সি কেন্দ্রীয় সংস্থার আধিকারিকদেরও রেয়াত করছে না। তাঁদের মতে, এটা আসলে বার্তা দেওয়া হচ্ছে, দুর্নীতির সঙ্গে কোনও আপোস চলবে না। সে যেই করুন না কেন। যে পদেই থাকুন না কেন।

এই নিরজ সিং ইনকাম ট্যাক্সের যে সে অফিসার নন। আয়কর বিভাগের কমিশনার পদে ছিলেন তিনি। রোজভ্যালি কেলেঙ্কারির ঘটনায় আয়কর বিভাগ যে তদন্ত ইউনিট গঠন করেছিল, তার দায়িত্বে ছিলেন এই অফিসার।

ইডি সূত্রে জানা যাচ্ছে, ১৫ হাজার কোটি টাকার রোজভ্যালি তদন্তে যোগ রয়েছে এই আধিকারিকের। অর্থলগ্নি সংস্থার কর্ণধার গৌতম কুণ্ডুর সঙ্গেও অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল এই আয়কর অধিকর্তার। তিন জায়গায় তল্লাশি চালানোর পর, ইডি আধিকারিকরা এই আয়কর অফিসারের থেকে ব্যাঙ্কের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য চেয়েছেন। জানতে চেয়েছেন, কোথায় তিনি কত টাকা বিনিয়োগ করেছেন তা সবিস্তারে জানাতে।

আয়কর অধিকর্তার বাড়িতে ইডি হানা নিয়ে অনেকেই বলছেন, এটা থেকে পরিষ্কার গৌতম কুণ্ডুর হাত কতটা লম্বা ছিল। কোন জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। রোজভ্যালি তদন্ত নিয়ে গত দু’মাসে তদন্ত এজেন্সির তেমন কোনও নড়াচড়া দেখা যায়নি। তবে জুন মাসের গোড়ার দিকে বাগুইআটি-সহ কলকাতা, হাওড়া ও দুই চব্বিশ পরগনার একাধিক অফিস এবং গয়নার শোরুমে হানা দিয়েছিল ইডি। ছটি দলে ভাগ হয়ে গিয়ে একই দিনে একই সময়ে সেই সব জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছিলেন তাঁরা। সূত্রের খবর, ইডি আধিকারিকরা এই সব নথি নিয়ে দেখতে চাইছেন, এই আয়কর কর্তা কোনও আর্থিক সুবিধে নিয়ে তদন্তকে ধামাচাপা দিতে চেয়েছিলেন কিনা। চাইলে তা কোনও মহলের চাপে করেছিলেন কিনা।

পর্যবেক্ষকদের মতে, একজন আয়কর কর্তার তিন শহরের বাড়ি-অফিসে তল্লাশি তদন্তের দিক থেকে বড় ঘটনা। এমনিতে কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সির তরফে বারবার বাংলার চিটফান্ড কেলেঙ্কারি নিয়ে বলা হয়েছে, বৃহত্তর ষড়যন্ত্র রয়েছে। ইডি, সিবিআই আদালতেও এ কথা বারবার বলেছে। অনেকের মতে, বাংলায় চিটফান্ড কেলেঙ্কারির বীজ এতটাই গভীরে পোঁতা রয়েছে, যে যত তদন্ত এগোচ্ছে, তত নতুন নতুন দিক উঠে আসেছে গোয়েন্দাদের সামনে। আইপিএস, এইএএস অফিসাররা তো তদন্ত এজেন্সির আতস কাচের নীচে রয়েছেনই। এ বার তাতে যুক্ত হল ইনকাম ট্যাক্স অধিকর্তার নামও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.