সারদা কেলেঙ্কারিতে অন্যতম অভিযুক্ত তিনি। এ বার রোজভ্যালি চিটফাণ্ড কেলেঙ্কারিতে কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট তথা ইডি-র জেরার মুখে পড়লেন রাজ্যের প্রাক্তনমন্ত্রী মদন মিত্র।
সোমবার সিজিও কমপ্লেক্সে তাঁকে চার ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। ইডি সূত্রে খবর, ফের তলব করা হতে পারে মদনবাবুকে। সূত্রের আরও খবর, রোজভ্যালি কর্তা গৌতম কুণ্ডুর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের ব্যাপার নিয়েই গোয়েন্দারা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। জেরা শেষের পর অবশ্য এ ব্যাপারে মুখ খোলেননি মদন। তবে, মদনের জেরা নিয়ে অস্বস্তি গোপন করতে পারছে না শাসকদলও।
এর আগে সারদা মামলায় দেড় বছরের বেশি সময় জেলে ছিলেন মদন। ১৬-র ভোটে লড়েছিলেন জেল থেকেই। কিন্তু সে বার হারতে হয় মদনকে। দিল্লি থেকে কপিল সিব্বল ছুটে এসেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টে মদনের জামিন করাতে। কিন্তু হয়নি। সিবিআই-এর আইনজীবীরা আদালতকে জানিয়েছিল, মদন মিত্র প্রভাশালী লোক। ছাড়া পেলেই তথ্যপ্রমাণ লোপাট করে দেবেন। সাক্ষীদের প্রভাবিত করবেন। দিনের পর দিন পিজি হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডে কেটেছে মদনের। আদালতে হাজিরা দিতে গিয়েছেন হুইল চেয়ারে চেপে। পরে অবশ্য জামিন পান তিনি। এখনও জামিনেই রয়েছেন প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী।
ভাটপাড়া বিধানসভার উপনির্বাচনে হারের পরেই মদনের গলায় অন্য সুর শোনা গিয়েছিল। ফেসবুক লাইভে এসে বলেছিলেন, “আমাকে বলির পাঁঠা করেছে সিবিআই।” সাংসদ সৌগত রায়, অপরূপা পোদ্দারদের নাম করে বলেছিলেন, “অনেকের নাম আছে সিবিআইয়ের খাতায়। কিন্তু আমাকেই বেছে নিয়েছিল।” এ-ও বলেছিলেন, “মাওবাদী ছত্রধর মাহাতো প্যারোল পেয়েছিলেন। কিন্তু তৃণমূল সরকারের কারা দফতর আমার ৪৩টি প্যারোলের আবেদন চাপা রেখে দিয়েছিল।”
অনেকের প্রশ্ন, তাহলে কি একমাস আগেই মদনবাবু টের পেয়েছিলেন আবার তাঁকে ডাকতে পারে তদন্ত এজেন্সি? তাই কি ওই সুর গেয়ে রেখেছিলেন? বস্তুত, রাজ্যে যতগুলি চিটফাণ্ড কেলেঙ্কারি নিয়ে তদন্ত হচ্ছে, কম-বেশি সবকটিতেই মদন মিত্রের নাম উঠে এসেছে। অনেকের মতে, বাংলার চিটফাণ্ড তদন্তে মদন মিত্র ‘কমন ফ্যাক্টর।’
ইতিমধ্যেই ইডি তলব করেছে সাংসদ শতাব্দী রায়কে। ১২ জুলাই তাঁকে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে বলে খবর। ভোটের আগে থেকেই চিটফাণ্ড তদন্তে গতি এনেছে সিবিআই, ইডি। জেরা করা হয়েছে একাধিক সরকারি আমলা ও পুলিশ কর্তাদের। জেরা হল মদনেরও। কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সি যে এ বার তদন্ত গুটিয়ে আনতে চাইছে, সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকদের অনেকে।