রথ দেখার কথা ছিল। হাসপাতালের বন্দোবস্তও করে এলেন অধীর রঞ্জন চৌধুরী। মুর্শিদাবাদে ডিআরডিও-কে দিয়ে একটি ৫০০ শয্যার কোভিড হাসপাতাল গড়ে তোলার ব্যাপারে লোকসভায় বিরোধী দলনেতা অধীর চৌধুরীকে আশ্বস্ত করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
মুর্শিদাবাদে কোভিড চিকিৎসার পরিকাঠামো যে অপ্রতুল তা অনেকদিন ধরেই বলছেন বহরমপুরের সাংসদ। জঙ্গিপুরের হাসপাতালে দেখা গিয়েছিল, রোগীরা ন্যাসাল সোয়াব দিয়ে নিজেরাই নমুনা সংগ্রহ করছে। সরকারি হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। এহেন পরিস্থিতিতে মুর্শিদাবাদে প্রতিরক্ষা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডিআরডিও-কে দিয়ে একটি কোভিড হাসপাতাল তৈরির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন অধীর চৌধুরী। কারণ, ডিআরডিও দিল্লিতে এ ধরনের হাসপাতাল ইতিমধ্যেই বানিয়েছে।
Asha
এ সব চিঠি-দৌত্য যখন চলছে তখন সোমবার ‘রথ দেখা’ ছিল! সিবিআইয়ের পরবর্তী ডিরেক্টর নির্বাচন নিয়ে ৭ নম্বর জনকল্যাণ মার্গে তাঁর বাসভবনে বৈঠক ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিরোধী দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এনভি রামানা প্রথা অনুযায়ী উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে। কারণ, পদাধিকার বলে এই তিন জনই সিবিআই ডিরেক্টর নির্বাচন করেন।
ওই বৈঠকের পরই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদা কথা বলেন অধীর। মুর্শিদাবাদে কোভিড হাসপাতাল গড়ে তোলার অনুরোধ জানান। বিরোধী দলনেতাকে প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন, ডিআরডিও হাসপাতাল যাতে গড়ে তোলা যায় সে জন্য তিনি সব রকম চেষ্টা করবেন।
পরে অধীরবাবু বলেন, কোভিড হাসপাতাল গড়ে তোলার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। আমি তাঁকে বলেছি, কোভিড এক্ষুণি যাবে বলে মনে হচ্ছে না। এর পর তৃতীয় ঢেউ আসবে বলে আশঙ্কা। মুর্শিদাবাদ পিছিয়ে পড়া জেলা। সেখানে এমন পরিকাঠামো গড়ে তুলতে পারলে মানুষগুলো বাঁচবে।
প্রসঙ্গত, ডিআরডিও অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরি করছে। অর্থাৎ তা চিরস্থায়ী নয়। কোভিডের সংক্রমণ মোকাবিলা করার জন্যই তারা কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের পাশে দাঁড়াচ্ছে।
ডিআরডিও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীনে পড়ে। মুর্শিদাবাদের সঙ্গে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একটা পুরনো সম্পর্ক এমনিতেই রয়েছে। তার নেপথ্যে আবার অধীর চৌধুরীর ভূমিকাও অনস্বীকার্য। অধীরের অনুরোধেই ২০০৪ সালে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। ভাল ব্যবধানে জিতেছিলেন তিনি। তার পর প্রথম ইউপিএ সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হয়েছিলেন প্রণববাবু।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসাবে যেদিন তিনি দায়িত্ব নেন সেদিন অধীরবাবুও সেখানে ছিলেন। মজা করে প্রণববাবুকে তিনি বলেছিলেন, দাদা আপনার হাতে তো এখন অনেক অস্ত্র। শুনে প্রণববাবু সহ উপস্থিত সকলেই হো হো করে হেসেছিলেন। পরে মুর্শিদাবাদে একটি সেনা ছাউনি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন প্রণববাবু। সে ব্যাপারেও অধীরের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন তিনি।
সময় বদলেছে। কেন্দ্রে সরকারও বদলেছে। যে জিনিসটা বদলায়নি তা হল, অধীর চৌধুরী এখনও বহরমপুরের সাংসদ। এখন দেখার কতদিনে কোভিড হাসপাতাল গড়ার উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়।