নির্বাচনী মরশুমে প্রার্থীরা ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করবেন, এটাই স্বাভাবিক দৃশ্য৷ শহর হোক বা শহরতলি কিংবা গাঁ-গঞ্জ, সর্বত্রই এই ছবি এখন পরিচিত৷ কিন্তু যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের কিছু কিছু অংশে ধরা দিচ্ছে অন্য একটি ছবি৷বহু বাড়ির সামনে দেখা যাচ্ছে একটি পোস্টার৷ তাতে এই কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের ছবি৷ তাঁকে সম্বোধন করা হয়েছে ‘কুখাদ্যভোজী সিপিআই (এম) প্রার্থী৷’ সঙ্গে স্পষ্ট হুঁশিয়ারির সুর – ‘আমার বাড়িতে গৃহদেবতার পূজা হয়৷ তাই ভোট চাইতে এসে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করবেন না৷ আপনারা না জানি কি অখাদ্য/কুখাদ্য খেয়ে থাকেন৷’ কিন্তু কেন? সিপিএম প্রার্থী বাড়ির দোরগোড়ায় গিয়ে কেন ভোট চাইতে পারবেন না? কীভাবে অপবিত্র হবে বাড়ি?
উত্তর খুঁজতে গিয়ে ফিরে যেতে হল বেশ খানিকটা আগে, প্রায় বছর তিনেক আগে৷ উত্তরপ্রদেশের দাদরিতে মহম্মদ আখলাকের ফ্রিজে গোমাংস রাখা আছে, এই সন্দেহে তাঁকে গণপ্রহারে খুন করা হয়েছিল৷ পরবর্তী সময়ে রাজস্থান, হরিয়ানাতেও গো-পাচারকারী সন্দেহে একই ঘটনা ঘটেছিল৷ এনিয়ে সেসময় উত্তাল হয়েছিল জাতীয় রাজনীতি৷ শীর্ষ আদালতকে পর্যন্ত এবিষয়ে মাথা ঘামাতে হয়েছিল৷ তারপর বেশ কয়েকটি রাজ্য সরকার নিজেদের জায়গায় গোহত্যা, গোমাংস খাওয়া – এসব বন্ধের নির্দেশ দেয়৷ তা নিয়েও শুরু হয় শোরগোল৷
এই পরিস্থিতিতে একদল বুদ্ধিজীবী নেমেছিলেন প্রতিবাদ করতে৷ খাওয়াদাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে৷ তাঁদের যুক্তি ছিল, খাদ্যাভ্যাসে কোনওরকম আইন করে বন্ধ করে দেওয়ার অর্থ মানুষের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ৷ প্রতিবাদে শামিল হন কলকাতার কয়েকজন বুদ্ধিজাবীও৷ ধর্মতলার প্রকাশ্য রাস্তায় বিফ পার্টির আয়োজন করে বামপন্থী সংগঠন ভাষা ও চেতনা বিকাশ৷ সেই পার্টিতে মুখ্য ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল সিপিএম ঘনিষ্ঠ নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং তৃণমূলপন্থী কবি সুবোধ সরকারকে৷ সেই ছবি বেশ ভাইরাল হয়ে পড়েছিল৷ যা বেশ মনে রেখে দিয়েছেন যাদবপুরের মানুষজন৷ ধর্মীয় ভাবাবেগ থেকে সেদিনের ঘটনাকে মোটেই সমর্থন করেননি তাঁরা৷
মাঝে কেটে গিয়েছে কয়েকটি বছর৷ সেদিন ধর্মতলার বিফ পার্টির অন্যতম মুখ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যই ২০১৯-এ যাদবপুর কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী৷ তবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাঁর সেই গোমাংস খাওয়ার দৃশ্য ভোলেননি কেউ৷ বিকাশরঞ্জনের নাম শুনলেই এখানকার মানুষজনের চোখে ভেসে ওঠে সেদিনের সেই দৃশ্য৷ হিন্দু ধর্মকে তিনি আঘাত করেছেন মনে করে তাঁকে কোনওরকম জায়গা দিতেই প্রস্তুত নন এলাকাবাসী৷ তাই দরজায় দরজায় এরকম পোস্টার দিয়ে তাঁরা সমবেত প্রতিবাদ জানাচ্ছেন৷ যাতে স্পষ্টই হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন, ‘কুখাদ্যভোজী’ বিকাশরঞ্জন যেন বাড়ির ভিতরে ভোট চাইতে না যান৷ তাহলে কি ময়দানে লড়াইয়ের আগেই কিছুটা হেরে বসলেন যাদবপুরের সিপিএম প্রার্থী? তা বোঝা যাবে ফলাফলেই৷