এনআরএশ হাসপাতালে ৮৫ বছরের এক অসুস্থ বৃদ্ধের মৃত্যু, তার জেরে হাসপাতালে রোগী-আত্মীয়দের তাণ্ডব, বহিরাগত গুন্ডাদের আক্রমণে জুনিয়র চিকিৎসক পরিবহর মাথার খুলি তুবড়ে যাওয়া, প্রতিবাদে এনআরএসের চিকিৎসকদের বিক্ষোভ অবস্থান। এই ঘটনার জের ছড়িয়েছে সারা রাজ্যে। দেশের নানা প্রান্ত থেকেও সংহতি জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
এ সবের মধ্যেই এ রাজ্যে চিকিৎসকদের ধর্মঘট পা দিল সাত নম্বর দিনে। এত দিন ধরে যে দাবি তাঁরা জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলার, শেষমেশ তা স্থির হয়েছে। আজ, সোমবার, বিকেল তিনটে নাগাদ নবান্নের সভাঘরে তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকের দিকেই আপাতত তাকিয়ে সকলে। চিকিৎসকদের সুরক্ষা এবং পরিবহর আক্রমণকারীদের গ্রেফতার করা– এই দু’টি দাবি রাজ্য সরকারের তরফ থেকে মানা হলে তবেই কাজে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
কিন্তু সে বৈঠকের আগেই, রাজ্যের চিকিৎসকদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিতে, সোমবার দেশ জুড়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন চিকিৎসকরা। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-র ডাকে দেশ জুড়ে ডাকা ওই ধর্মঘটে সাড়া দিয়েছে দেশের নানা প্রান্তের, বিভিন্ন রাজ্যের হাসপাতাল। জেনে নিন সে ধর্মঘট সম্পর্কে দু’-চার কথা।
- চিকিৎসকেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, জরুরি পরিষেবা চলবে। কিন্তু যে সব পরিষেবা জরুরি নয়, যেমন আউটডোর চিকিৎসা পরিষেবা, বা সাধারণ অস্ত্রোপচার– এ সব কিছুই সোমবার ভোর ছ’টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ছ’টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার জন্য বন্ধ থাকবে।
- তবে এই ধর্মঘট আইএমএ-র সিদ্ধান্ত হলেও, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে বিক্ষোভরত চিকিৎসকদের আলোচনার পরে কিছু হাসপাতাল ধর্মঘট তুলেও নিতে পারে। যেমন রবিবারই প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ ইতিমধ্যেই প্রত্যাহার করে নিয়েছে দিল্লির এইমস-এর রেসিডেন্ট ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন।
- এনআরএসে আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা প্রথমে নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব ফেরালেও, রবিবার তাঁরা সুর নরম করেন। নিজেদের মধ্যে দু’ঘণ্টার বৈঠকের পরে জুনিয়র চিকিৎসকদের এক মুখপাত্র জানান, তাঁরা এই অচলাবস্থা কাটাতে ইচ্ছুক। তাই নুখ্যমন্ত্রীর পছন্দমতো জায়গা নবান্নতেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় রাজি তাঁরা।
- তবে সেই আলোচনা সংবাদমাধ্যমের উপস্থিতিতে করতে চান জুনিয়র ডাক্তাররা। যদিও এই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পরে জুনিয়র ডাক্তাররা ফের কোনও শর্ত রাখবেন না কি রুদ্ধদ্বার বৈঠকেই রাজি হবেন, তা এখনও জানা যায়নি।
- চিকিৎসকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে প্রয়োজনীয় আইন তৈরির জন্য রাজ্যগুলিকে ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ হর্ষবর্ধন। তবে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর হামলা রুখতে আরও কিছু আইন আনার দাবি তুলেছে আইএমএ। যে কোনও ভাবে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করারও দাবি তুলেছে তারা।
- এর আগে, বৃহস্পতিবার পিজি হাসপাতালে গিয়ে প্রতিবাদে সামিল হওয়া চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি উল্লেখ করেছিলেন, জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের ধর্মঘট রুখতে তাঁর সরকার এসমা আইন প্রয়োগ করেনি এখনও। আন্দোলনে অনেক বহিরাগত ঢুকে পড়েছে বলেও দাবি করেছিলেন তিনি।
- এই মুহূর্তে জুনিয়র ডাক্তারদের দাবির মধ্যে রয়েছে, নিরাপত্তা, জুনিয়র চিকিৎসকে নিগ্রহে দোষীর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া, এবং ধর্মঘটে সামিল হওয়া চিকিৎসকদের “বহিরাগত” বলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষমা চাওয়া।
- গত সপ্তাহের মঙ্গলবার থেকে ধর্মঘট শুরু করেন চিকিৎসকরা। তার পরেও রাজ্য সরকার কোনও ভাবেই দাবি না মানায়, শুক্রবার রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল থেকে পদত্যাগ করেন প্রায় ৩০০ চিকিৎসক।
- দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে চিকিৎসকদের প্রতিবাদ কর্মসূচী। শুক্রবার, রাজ্য জুড়ে স্বাস্থ্য পরিষেবায় ধর্মঘট ডাকে দিল্লি মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, পাশাপাশি দিল্লি এইএমস এবং সফদরজং হাসপাতালের তরফে প্রতীকি ধর্মঘট পালন করা হয়।
- মহারাষ্ট্রের ২৬টি সরকারি হাসপাতালে রোগী দেখা বন্ধ করে দেন প্রায় ৪,৫০০ চিকিৎসক। হায়দরাবাদে, বিক্ষোভ দেখান নিজাম ইন্সটিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সের চিকিৎসকরা।
- বৃহস্পতিবার থেকে চলা ধর্মঘটে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা ভেঙে পড়েছে সরকারি হাসপাতালগুলিতে। কয়েক দিনে, এমারজেন্সি ওয়ার্ড, আউটডোর-সহ সরকারি হাসপাতালগুলির প্যাথোলজিক্যাল ইউনিটেও পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে।
- বেশ কিছু জায়গায় চিকিৎসকেরা কর্মবিরতি বা ধর্মঘটের পাশাপাশি হাসপাতালের বাইরে রোগী-পরিষেবা চালিয়ে গেলেও, কয়েকটি জায়গাতে তা ব্যাহত হচ্ছে। ফলে রোগীদের সমস্যার খবর আসছে বিভিন্ন জায়গা থেকেই।