তিনি তাঁর কথার জন্যই বিখ্যাত। মুখ্যমন্ত্রীর দিঘা সফরের পর রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ পূর্ব মেদিনীপুররের সভায় গিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। সোমবার পূর্ব মেদিনীপুরের মেচেদায় তৃণমূল ও পুলিশকে কড়া ভাষায় হুঁশিয়ার দিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি ও সাংসদ দিলীপ ঘোষ।
এ দিন তিনি বলেন, “দেশের প্রাক্তন অর্থ মন্ত্রী চিদাম্বরমকে জেল খাটতে হচ্ছে, এর তো কে ছার। দুর্গাপূজার সময় তৃণমূলের বেশকিছু নেতাকে জেলের মধ্যে থেকে পুজো দেখতে হবে। আর কেউ তা বাঁচাতে পারবে না। টিকিট কাটা হয়ে গেছে শুধুই সময়ের অপেক্ষা। সিবিআই যদি দিল্লি থেকে চেন্নাইতে গিয়ে চিদাম্বরমকে গ্রেফতার করতে পারে। তাহলে দিল্লি থেকে কলকাতায় গিয়ে চোরেদের গ্রেফতার করতে বেশি সময় লাগবে না।”
তিনি আরও বলেন, “আমি জঙ্গলমহলের ছেলে।কাউকে ভয় পাই না।আর ছেড়েও কথা বলি না। আপনারা আগে মেরে আসুন, কাউকে ক্ষমা করবেন না। যদি আপনারা সত্যি কারের বাপের ব্যাটা হন তাহলে তা করে দেখাবেন। আর যদি তা না করেন, তাহলে আপনারা বিজেপি করবেন না। আমি স্পষ্ট কথা বলতে ভয় পাই না।”
তাঁর কথায় তিনি পরিসংখ্যান দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গে ৭২ জন বিজেপি নেতা-কর্মীকে খুন হয়েছেন। এ রাজ্যে ২২ হাজার মিথ্যে মামলায় আমাদের নেতাকর্মী কেস দেওয়া হয়েছে। এখনও দু-তিন হাজার বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা মিথ্যে মামলায় জেল খাটছেন। মানুষের একফোঁটা চোখের জল বৃথা হতে দেবেন না। সব হিসেব কড়ায়-গণ্ডায় ফেরত দেব।
তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে দিলীপ বলেছিলেন, “গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে দিদিমণি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) ভোট লুঠ, ছাপ্পা, খুন, সন্ত্রাস করে ভোটে জিতেছে। এবার উনি বলেছিলেন বিয়াল্লিশে ৪২। কিন্তু কি হলো উল্টে গিয়ে হয়ে গেল বাইশ। হেরে যাওয়ার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন ইভিএম নয় ব্যালট চাই। ইভিএমে হোক আর ব্যালটে হোক ভোটে বিজেপি জিতবেই। বাংলার মানুষ মমতার নাটক বুঝে নিয়েছে। সবতেই নাম পরিবর্তন করে নিজের নামে দিদিমণি চালাচ্ছেন। এ টুকলি আর চলবে না। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বৈঠকে মাওবাদী অধ্যুষিত যেখানে সাত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগ দিয়েছেন।আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভয়ে সেই বৈঠকে যোগ দেননি। কারন, গেলে তো উনাকে কৈফিয়ত দিতে হবে। এখনও জঙ্গলমহল থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সরানো হয়নি কেন? যার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার বছরে ২.৪৭ কোটি টাকা দিচ্ছে। বর্তমানে কোন মাওবাদী-টাওবাদী কিছুই নেই।”
তিনি এও বলেন, “পাঁশকুড়ার পুরপ্রধান আনিসুর রহমান-সহ আমাদের বহু নেতাকে পুলিশ মিথ্যে কেস দিচ্ছে। হুগলিতে তৃণমূল নেতা খুন হচ্ছে, আর তাতে আনিসুরকে ঢুকিয়ে দিচ্ছে।বহু নেতা গাঁজা কেসেও ঢুকিয়ে দিচ্ছে। আমি নিকি ৩০২ মার্ডার কেসের আসামি।যদি মার্ডার না করে আমি মার্ডার কেসের আসামি হয়ে যাচ্ছি। তাহলে এবার পুলিশের ঘাড়ের উপর পা তুলে দাঁড়িয়ে পুরো পিষে মেরে ফেলব। সবই আমরা ডায়েরিতে নোট করে রাখছি।পার্লামেন্টে তৃণমূলের সাংসদরা এক কোণে চোরের মতো বসে থাকে। মুখ ফোটানোর কোন ওঁদের কোন ক্ষমতা নেই।সব দলই তৃণমূলকে ল্যাঙ মেরেছে। এর এতই নির্লজ্জ যে ৩৭০ ধারারও বিরোধিতা করেছে।”
আগামি বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে আশাবাদী বিজেপির রাজ্য সভাপতি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, “সামনে বিধানসভা ভোট। আমাদের কর্মীরা খুবই উৎসাহের সহিত কাজ করছে। এ রাজ্যে আমরা ১ কোটি সদস্য করবোই। তবে তৃণমূলকে একুশে ক্ষমতায় আসার জন্য স্বপ্ন দেখতে হবে। বিজেপি ২০২১ এ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েই সরকার গড়বে।”
এ দিন দিলীপবাবু পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগর বিধানসভার মীরগোদা গঞ্জ, খেজুরি বিধানসভার নাজিরবাজারে, তমলুকের মেছেদাতেও সভা করেন।সভায় তৃণমূল ও সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী যোগ দেন। নবাগতদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।