নাগরিক সংশোধনী আইন(সিএএ) ঘিরে অশান্তি ছড়িয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। রবিবার সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্য সরকারের উপরেই আন্দোলন ঘিরে হিংসার দায় চাপালেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।

দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘এই অশান্তি তৃণমূলের পরিকল্পিত। তৃণমূল সরকার না চাইলে এই ঘটনা ঘটত না।’ কেন্দ্রের কোনও সিদ্ধান্তকেই মুখ্যমন্ত্রী সমর্থন করেন না বলে মনে করেন দিলীপ ঘোষ।

তিনি বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও সময়েই কেন্দ্রের কোনও সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেন না। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যখন সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করা হল তখনও তিনি পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ভাষায় কথা বলেছিলেন।’

রাজ্যে শান্তি ফেরানোর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘কাদের বিরুদ্ধে শান্তির ডাক দেব? রাজ্যে একদল মানুষ সবকিছু ধ্বংস করতে চাইছে। তাদের বিরুদ্ধে শান্তি নয় প্রতিরোধ প্রয়োজন।’

নাগরিক সংশোধনী আইন ঘিরে রবিবার সকালেও নতুন করে অশান্তি ছড়ায় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। এই অশান্তি প্রতিরোধে ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গের মালদহ,উত্তর দিনাজপুর এবং দক্ষিণবঙ্গের মুর্শিদাবাদ,হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগণার বসিরহাট, বারাসত মহকুমায় ইন্টারনেট পরিষেবা নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগণার বারুইপুর এবং ক্যানিংয়ে ইন্টারনেট বন্ধের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে রাজ্য সরকার।

এই প্রসঙ্গেও মুখ খোলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি। তিনি বলেন, ‘ওইসব অঞ্চলের ভাঙচুর,লুঠপাট এবং অত্যাচারর ছবি যাতে সামনে না আসে তাঁর জন্যই ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হচ্ছে।’ শুক্রবার মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা ও হাওড়ার উলুবেড়িয়া স্টেশনে হিংসার ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ। ট্রেন এবং স্টেশন মাস্টারের ঘরে অগ্নিসংযোগ ঘটানো হয় বলেও অভিযোগ ওঠে।

এরপর শনিবার এবং রবিবারেও রাজ্যের বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেন ভাঙচুর,অগ্নিসংযোগ-সহ একাধিক হিংসার ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করা হয়। দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘আমি রেলমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। হিংসার সব ভিডিও ফটোগ্রাফ পাঠিয়েছি। রাজ্যের অশান্তির বিষয়ে রাজ্যপালকেও সব জানিয়েছি।’

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বিরোধী বিক্ষোভে টানা তৃতীয় দিন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভকারীরা জাতীয় সড়ক অবরোধ করে আগুন জ্বালিয়ে রেল পথ অবরোধ করে রয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাই এবার ইন্টারনেট পরিষেবা নিয়ন্ত্রিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।

নবান্ন সূত্রে খবর, রবিবারও সকাল থেকে দেখা যায় রাজ্যের নতুন নতুন জায়গায় আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে এবং সেই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অশান্তি ছড়াচ্ছে। রবিবার থেকে মালদহ জেলার বিভিন্ন অংশে রেলপথ এবং জাতীয় সড়ক অবরোধের খবর সামনে এসেছে। একই রকম ভাবে বীরভূম জেলার মুরারইয়ের দুটি ব্লকেই বিক্ষোভ বাড়ছে বলে খবর এসেছে নবান্নে। পর পর রেল এবং সড়ক পথ অবরোধ, বিক্ষোভ চলছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মল্লিকপুর, বারুইপুর, মহেশতলা, হটুগঞ্জে।

অন্যদিকে এ দিন সকাল থেকে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে রাখা হয়েছে উত্তর ২৪ পরগণায় আমাডাঙার সোনাডাঙা, ধানকল, কামদেবপুরে। মালদহের ভালুকা এবং কুমেদপুর স্টেশনে একটি বিশাল জমায়েত ট্রেন লাইন অবরোধ করে। ফলে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের একের পর এক ট্রেন আটকে পড়ে বিভিন্ন স্টেশনে। বাতিল করা হচ্ছে বহু ট্রেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.