রাত তখন আড়াইটে, কলকাতা মেডিকেল কলেজের সুপার স্পেশালিটি ব্লকের আই সি ইউ-র বাইরে মাস্ক পরা অবস্থায় বসে রয়েছেন এক ব্যক্তি। অনবরত খবর নিয়ে চলেছেন করোনা আক্রান্ত চিকিৎসকদের শারীরিক অবস্থার কথা। তিনরাত পরপর জেগে মধ্যরাতের পরিষেবা ও করোনা আক্রান্ত রোগীদের অবস্থা দেখতে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরছেন মেডিকেল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান নির্মল মাজি। নিজেও করোনায় চিকিৎসাধীন তিনি।
জানা যায়, দুই চিকিৎসাধীন সিনিয়র শ্বাসকষ্ট বেড়েছে, সিসিইউ-তে ভর্তি রয়েছেন তারা। এর সঙ্গে দুই জুনিয়র চিকিৎসকেরও শ্বাসকষ্ট বাড়ছে। এই খবর শুনেই নিজের বেড ছেড়ে সিসিইউতে হাজির হন তিনি। রাতে প্রায় তিন ঘণ্টা চিকিৎসকদের সঙ্গে ছিলেন নির্মলবাবু। একটানা মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সিসিইউ-এর বাইরে বসে ছিলেন। চার চিকিৎসকের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ার পর নিজের বেডে ফেরেন।
তারপর দিন শনিবার রাতেও দেখা গেল একই চিত্র। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফ্লোরের ওয়ার্ক স্টেশনে রাত ৩টে নাগাদ চিকিৎসক নার্স কর্মীদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন মন্ত্রী। খোঁজ নিচ্ছেন কোন রোগী কী অবস্থায় আছেন। নিজে করোনা আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও নিজের দায়িত্ব থেকে একটুও পিছপা হননি নির্মলবাবু। তাঁর এই মনোভাবকে নজিরবিহীন বলে মানছেন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।
এই মুহূর্তে মেডিকেল কলেজের সুপার স্পেশালিটি ব্লকে আইসিইউ-তে প্রায় ১৬ জন অধ্যাপক-জুনিয়র চিকিৎসক চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এরা প্রত্যেকেই করোনা যোদ্ধা। এই বিষয়ে নির্মল মাজি স্পষ্ট ভাষায় জানান, “যে চিকিৎসকেরা নিজের জীবন বাজি রেখে মানুষের প্রাণ বাঁচান, তারা অসুস্থ হলে মাথার পাশে বসে থাকাটা আমার কর্তব্য। মুখ্যমন্ত্রীর থেকে এই আদর্শই পেয়েছি। এটুকু পাশে না দাঁড়ালে আর কখন দাঁড়াবো?”