ডিএ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু না করলে ফের আদালতের যাওয়ার হুঁশিয়ারি সরকারি কর্মীদের

কেন্দ্রীয় হারে রাজ্য সরকারকে দিতে হবে ডিএ। ডিএ মামলার রায়ে এমনটাই জানিয়ে দেয় স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনাল। বড়সড় ধাক্কা মমতা সরকারের। কেন্দ্রীয় হারে ডিএ না দেওয়া বৈষম্যমূলক হবে বলে জানিয়ে দেয় আদালত। ২০১০-এর পর থেকে একবার মাত্র ডিএ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের ডিএ বা মহার্ঘভাতার ফারাক রয়েছে ২৯ শতাংশ। দীর্ঘদিন ধরেই সরকারি কর্মীরা এই বিষয়ে আন্দোলন করেও কোনও লাভ হয়নি। চলছিল মামলা। কিন্তু ঐতিহাসিক রায় দিয়ে স্যাট জানিয়ে দিয়েছে যে, রাজ্য সরকারি কর্মীদের কেন্দ্রের হারেই ডিএ দিতে হবে।

তবে আদালত এহেন রায় দিলেও কেন্দ্রের হারে ডিএ পাওয়া নিয়ে আশঙ্কাটা থেকেই গিয়েছে রাজ্য সরকারি কর্মীদের। অর্থের সংস্থান থাকলে কর্মচারীদের পাওনাগন্ডা মেটাতে কোনও কার্পণ্য করতেন না, রায়ের পরেই এহেন মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, চাইলেই তো হবে না, এত টাকা পাব কোথা থেকে! তাঁর এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই আশঙ্কার মেঘ তৈরি হয়েছে রাজ্য সরকারি কর্মীদের মধ্যে। সরকারি কর্মীদের একাংশ বলছে, আদালতের রায় থাকলেও সরকার দেবে কিনা তা মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যেই ধোঁয়াশা। যদিও হাল ছাড়তে নারাজ রাজ্য সরকারি কর্মী সংগঠন। মামলাকারী সরকারি কর্মীদের কার্যত পালটা হুঁশিয়ারি, মহার্ঘ আমাদের প্রাপ্য। এজন্যে যতদূর যেতে হয় ততদুর যাওয়ারও হুঁশিয়ারি।

কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ়ের এক সদস্যের কথায়, রাজ্য সরকারের উচিৎ স্যাটের রায় মেনে নেওয়া। নবান্নে সূত্রে জানা গিয়েছে, স্যাটের এহেন রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টের যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে রাজ্য সরকার। সেই পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারি কর্মীদের মন্তব্য, প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টেও যাব। মামলা লড়তে ফেডারেশন প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন মামলাকারীরা। আগামী একমাসের মধ্যে স্যাটের নির্দেশ মোতাবেক ডিএ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে দিতে হবে রাজ্য সরকারকে। আর তা যদি মানা না হয় তাহলে সংগঠনের তরফে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি মামলাকারী সরকারি কর্মীদের। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনে ফের আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।

প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় হারে রাজ্য সরকারকে দিতে হবে ডিএ। সম্প্রতি এমনটাই নির্দেশ দিয়েছে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনাল। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তীব্র আর্থিক সঙ্কট চলছে। তিনি আরও বলেন, এই বছরও ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঋণের সুদ বাবদ শোধ করতে হবে। ইতিমধ্যেই ১২৩ শতাংশ ডিএ দিয়েছি। তার মধ্যেই পে-কমিশন আসছে। আগের সরকার (বামফ্রন্ট) তিন হাজার, চার হাজার টাকার বিনিময়ে বসিয়ে দিয়ে গিয়েছে। তারা এখন এটা দাও, ওটা দাও করছে। বুঝে তো খরচ করতে হবে। স্বাস্থ্য হোক কিংবা শিক্ষা দফতর বা অন্য যে কোনও দফতর, খরচ তো হবে একটা ট্রেজারি (কোষাগার) থেকেই।

এরপরই মমতা বলেন, দিতে কোনও আপত্তি নেই। টাকা থাকলে তো দিতামই। চাইলেই সরকার খরচ করতে পারবে, এরকমটা কিন্তু নয়। ভালো নয় রাজ্যের আর্থিক অবস্থা। তাঁর এই মন্তব্যে একদিকে যেমন অশনি সঙ্কেত দেখছেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা অন্যদিকে তেমন তা না দেওয়া হলে পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে তা নিয়েও নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরু করে দিয়েছে সরকারি কর্মী সংগঠনগুলি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.