ট্রেনচালক, গার্ড, টিকিট পরীক্ষক— সামনের সারিতে থেকে যাঁরা রেল পরিষেবা দেন, তাঁদের একটা বড় অংশের টিকাকরণ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তার পরেও অনেকে করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। আর সেটাই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে রেলের। পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত সে ভাবে প্রভাব না পড়লেও, কত দিন স্বাভাবিক পরিষেবা দেওয়া যাবে তা নিয়ে চিন্তিত রেল কর্তৃপক্ষ। সতর্কতামূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
পূর্ব রেলের শিয়ালদহ এবং হাওড়া ডিভিশনে একাধিক চালক, গার্ড এবং টিকিট পরীক্ষক নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। দু’একটা ট্রেন পরিস্থিতি বুঝে বাতিলও করা হয়েছে। তবে পরিস্থিতি এখনও আয়ত্তের বাইরে নয় বলেই জানাচ্ছেন পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘‘সামনের সারিতে থেকে কাজ করা রেলকর্মীদের একটা বড় অংশ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। চালক, গার্ড-সহ অনেকেই রয়েছেন ওই তালিকায়। তবে এখনও পর্যন্ত রেল পরিষেবায় এর তেমন কোনও প্রভাব পড়েনি। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার।’’
দক্ষিণ-পূর্ব রেলেও সামনের সারিতে থেকে কাজ করা কর্মীদের বেশির ভাগেরই টিকাকরণ হয়ে গিয়েছে। তার পরেও বেশ কয়েক জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তবে পরিস্থিতি তেমন উদ্বেগজনক নয় বলেই জানিয়েছেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘সামনের সারিতে থেকে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের প্রত্যেকের টিকাকরণ হয়ে গিয়েছে। তার পরেও কয়েক জন আক্রান্ত হয়েছেন বটে, কিন্তু তার প্রভাব রেল পরিষেবায় পড়েনি। পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক নয়।’’
এমনিতেই করোনাকাল বলে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ ট্রেন কম চলছে বলে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের তরফে জানানো হয়েছে। সঞ্জয়ের কথায়, ‘‘নতুন করে ট্রেন চালু হওয়ার পর এমনিতেই কয়েক শতাংশ ট্রেন কম চলছে। বাকি পরিষেবা যেমন চলছিল, তেননই আছে। যাত্রীদের সতর্ক করা হচ্ছে। কর্মীদেরও যথেষ্ট সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।’’
প্রথম দফায় করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করলে গত বছরের মার্চের শেষে ট্রেন পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। ভিন্রাজ্য থেকে পরিযায়ী শ্রমিক আনার জন্য বিশেষ কিছু ট্রেন চালানো ছাড়া গোটা লকডাউনের মধ্যে একটা দীর্ঘ সময় রেল পরিষেবা বন্ধ ছিল। প্রায় সাত মাস বন্ধ থাকার পর দেশ জুড়ে চালু হয় পরিষেবা। একই সঙ্গে শিয়ালদহ, হাওড়া ও খড়্গপুর ডিভিশনে রেল পরিষেবা শুরু হয়। তার পর থেকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয় পরিষেবা। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এসে পড়ার পরে ফের রেল পরিষেবা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যাত্রীদের মধ্যে।
সরকারি অফিসে ৫০ শতাংশ কর্মী যাওয়ার নিয়ম নতুন করে চালু হলেও এখনও রাজ্যে স্বাভাবিক ভাবেই চলছে বেশির ভাগ অফিস-কাছারি। ট্রেনেও ভাল ভিড় হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে যদি রেলকর্মীরাই করোনা-আক্রান্ত হয়ে পড়েন, তা হলে পরিষেবা কত দিন স্বাভাবিক থাকবে, এ প্রশ্ন ভাবাচ্ছে নিত্যযাত্রীদের। রেল যদিও বলছে, এখনই চিন্তার কোনও কারণ নেই। একলব্য এবং সঞ্জয়ের যৌথ দাবি, ‘‘আমরা সতর্ক রয়েছি। আপ্রাণ চেষ্টা চলবে পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার।’’