জনমানসে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) সরকার করোনা সংক্রামিত রোগী এবং তদজনিত মৃত্যুর পরিসংখ্যান নিয়ে কিছু কি গোপন করছে ? এই সংশয়কে আরো দৃঢ় করছে স্বাস্থ পরিষেবার সাথে যুক্ত ব্যক্তি এবং রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের তোলা এই সংক্রান্ত অভিযোগ। প্রসঙ্গত সরকারিভাবে ৯১ জন করোনা আক্রান্ত রোগী নিয়ে এখন পশ্চিমবঙ্গ জাতীয় ভাবে ১৩ নং স্থানে আছে।
লালফিতেয় কি আটকে আছে পশ্চিমবঙ্গে করোন (Corona) সংক্সরমণ নিয়ে সঠিক পরিসংখ্যান ?
এই কি সঠিক চিত্র না কি NO NEWS IS GOOD NEWS এই চৈনিক কৌশলকেই এখানেও অনুসরণ করা হচ্ছে ? সচেতন নাগরিকদের মধ্যে এই আশংকা ঘণীভূত হচ্ছে। কিছু তথ্য কিন্তু এই আশংকাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। যেমন – করোনা নিয়ে যখন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তৈরি করা বিশেষজ্ঞ কমিটি বলেছে সংক্রামিত ব্যাক্তির সংখ্যা ৫৩, ঠিক তখনি চিফ সেক্রেটারি বলছেন সংখ্যাটি ৩৪, আবার ঐ একই সময়ে জাতীয় স্বাস্থ মন্ত্রক এর হিসেবে সংখ্যাটি ৮৩, তবে প্রত্যাশিত ভাবেই এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঐ সরকারি পরিসংখ্যান অস্বীকার করে বলেছেন যে ঐ রোগীদের অন্যান্য উপসর্গজনিত লক্ষণও আছে এবং এখনি নিশ্চিত করে করোনা বলা যাচ্ছে না। যদিও বিশেষজ্ঞ দের মত হলো সন্দেহের অবকাশ নেই, টেস্টের রেজাল্ট সরকারিভাবে ঘোষণা করলেই সব সংশয় দূর হবে। এখানেও এক প্রশাসনিক গেঁরোয় সব জটিল হয়ে যাচ্ছে। রাজ্য সরকার ঠিক করেছে এখন থেকে কোনো রোগী করোনা সংক্রমিত কি না তা নিয়ে ঘোষণা করবে একমাত্র সরকার নির্ধারিত বিশেষজ্ঞ কমিটি। যদিও এই বিশেষজ্ঞ কমিটি রাজ্য সরকার কতৃক তৈরি করা ডাক্তারদের কমিটি কিন্তু কাকতালীয় ভাবে এই কমিটির যিনি চেয়ারম্যান তিনি পূর্ব রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা এবং শাসকদল ঘনিষ্ঠ বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
এবার লক্ষ্যণীয় হলো রোগীর রোগ সংক্রান্ত ঘোষণা সারা দেশ এবং সারা পৃথিবী জুড়েই সংশ্লিষ্ট ডাক্তারেরাই করে থাকেন কিন্তু এক্ষেত্রে বিষয়টিকে তাদের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির ওপর ন্যস্ত করা হলো। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেলো যে বাস্তবে উত্তরবঙ্গে কোনো রোগী করোনা সন্দেহে ভর্তি হলো, তার করোনা টেস্ট রিপোর্ট পজিটিভ হলেও যতক্ষণ কলকাতাস্থিত বিশেষজ্ঞ কমিটির বিবেচনায় সেটি করোনা বলে চিহ্নিত না হবে, ততক্ষন তাকে করোনা রোগী বলা হবে না !! তারপর এ রাজ্যের প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রতাও যেখানে সর্বজনবিদিত সেখানে রাখঢাক কিসের জন্য ? এর উদ্দেশ্য কি ? পরিসংখ্যান রাশ টেনে পশ্চিমবঙ্গ করোনাকে আটকে দিয়েছে এই বার্তা দিতেই কি এতো আয়োজন যাতে সামনের পুরসভা ভোটে একে প্রচার করা যায়, এই অভিযোগও কিন্তু উঠতে শুরু করেছে এই রাজ্যের মানুষের মধ্যে।
এই কৌশল বা এই প্রশাসনিক জটিলতার প্রয়োগে সত্যের অস্বচ্ছতার অভিযোগ কিন্তু এর আগে রাজ্যজুড়ে ডেঙ্গু সংক্রমনের সময়েও উঠেছিল। সেবারে বহুসংখ্যক রোগীর মৃত্যুর কারণ হিসেবে ডেথ সার্টিফিকেট এ লেখা হয়েছিলো অজানা রোগ। বলাই বাহুল্য সেই অজানা রোগ আজো জানার পর্যায়ে পৌঁছতে পারে নি।
এই অস্বচ্ছতার অভিযোগ সবক্ষেত্রেই। অতিসম্প্রতি নিজামুদ্দিন নিয়ে যখন দেশ তোলপাড়, তখনো এই গতকাল অবধিও সরকারিভাবে রাজ্যের কোথায় কোথায় নিজামুদ্দিন ফেরত ব্যাক্তিরা লুকিয়ে আছে, তাদের চিহ্নিত করতে সরকারি উদ্যোগই বা কি নেওয়া হয়েছে, তারও কোনো সরকারি ভাষ্য নেই। তাহলে যা দাঁড়াচ্ছে যে সরকারি মতে এখনো এরাজ্যে কোনো নিজামুদ্দিন ফেরত নেই।
এক্ষেত্রেও অভিযোগ উঠেছে ভোটব্যাংক এর স্বার্থরক্ষার । রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি (BJP) একে কটাক্ষ করে বলেছে মুখ্যমন্ত্রী তার সংখ্যালঘু তোষণের নীতির সাথে আপোষ না করে রাজ্যবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার সাথে আপোষ করছেন।
https://swarajyamag.com/videos/coronavirus-cases-in-west-bengal-are-we-getting-