ওবি ভ্যানের উপর বসে বিক্ষোভকারীদের ‘সুরে’ গান গাইতে বললেন ‘কুল’ বাবুল

তখন তাঁকে ঘিরে চলছে তুমুল বিক্ষোভ। ঝড় উঠেছে স্লোগানের। বিক্ষোভকারিদের মধ্যে কেউ কেউ আবার তাঁকে উত্যক্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু তিনি ‘কুল’। বরং উল্টে বিক্ষোভকারিদের সঠিক সুরে বাংলা গান গাওয়ার কথা বললেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। সেইসঙ্গে সিঙাড়াও খাওয়াতে চাইলেন।

বৃহস্পতিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সঙ্ঘ পরিবারের ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি) নবীন বরণের আয়োজন করেছিল। সেই উপলক্ষে একটি আলোচনাসভার আয়োজনও করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় সেখানে আমন্ত্রিত ছিলেন। এ দিন দুপুরে বাবুল সুপ্রিয় বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পৌঁছতেই বিক্ষোভ শুরু করে একদল অতি বামপন্থী পড়ুয়া। ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দিয়ে বাবুলের পথ আটকানো হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পিছু হঠেননি, তিনি অনুষ্ঠানস্থলের দিকে এগোতে থাকেন। তার পরেই শুরু হয় শারীরিক ভাবে বাবুলকে হেনস্থা করা। তাঁকে ঘিরে ধরে কিল, চড়, ঘুসি, লাথি চলতে থাকে। তাঁর চুলের মুঠি ধরে টানার দৃশ্যও সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় ধরা পড়ে।

দীর্ঘক্ষণ আটক থাকার পর সন্ধ্যে ছ’টা নাগাদ কোনওরকমে ডাক্তার কে পি বসু মেমোরিয়াল হল থেকে বেরিয়ে আসেন বাবুল। কিন্তু সঙ্গে তাকে ধাওয়া করে বিক্ষোভরত ছাত্র-ছাত্রীরা। পাশেই ছিল মিডিয়ার একটি ওবি ভ্যান। প্রায় দৌড়েই গাড়ির কাছে চলে যান বাবুল। কিছুক্ষণ দাঁড়ানোর পর ওই ওবি ভ্যানের উপর উঠে বসে পড়েন।

সমস্ত বিক্ষোভরত ছাত্র-ছাত্রীরা তখন ঝেঁটিয়ে চলে আসে সেখানে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে ঘিরে স্লোগান দিতে থাকেন তারা। তারমাঝেই গান শুরু করে তারা। ওই সময় বাবুল সুপ্রিয়ও তালি দিয়ে দিয়ে গান করেন এবং বিক্ষোভরত পড়ুয়াদেরও বলেন, “তোমরা সুরে গাও। বাংলা গান গাও। আমিও তোমাদের সঙ্গে গাইবো”

শুধু তাই নয়, এদিন বিক্ষোভকারিদের সিঙাড়াও খাওয়াতে চান বাবুল। তিনি বলেন, “তোমরা চাইলে আমার গান গাওয়ার পয়সায় আমি তোমাদের সিঙাড়া খাওয়াতে পারি।” যদিও কটাক্ষের সঙ্গে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভকারিরা।

এদিন তুমুল বিক্ষোভের মুখে দীর্ঘক্ষন আটকে থেকেও এতোটুক ক্লান্ত হননি বাবুল সুপ্রিয়। কখনও তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের শান্ত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কখনও বলেছেন, “আমার বিরুদ্ধে তোমাদের যা অভিযোগ সব দিদিকে বলো।” তাঁর একটাই বক্তব্য ছিল, এই বিক্ষোভের মধ্যে থেকে বেরোনোর জন্য তিনি নিজের নিরাপত্তা বাহিনীর সাহায্য নেবেন না। কারণ এটা রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার ব্যাপার। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে বেরোতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশকেই তাঁকে সাহায্য করতে হবে।

এদিন বাবুল সুপ্রিয়কে দেখে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রাজ্য বিজেপির অনেক নেতাই যদি যাদবপুরে এমন বিক্ষোভের মুখে পড়তেন তাহলে নির্ঘাত তাঁরা মাথা গরম করে ফেলতেন। আর তাতে আরও বড়সড় একটা বিপত্তি ঘটতো। বিক্ষোভ আরও কিছুদিন চলতো। কিন্ত বাবুল এরাজ্যে নিজের দলের অনেক নেতাদের থেকে বেশি ও তাড়াতাড়ি রাজনৈতিক কৌশলটা রপ্ত করে নিয়েছেন। মাথা ঠান্ডা রেখে এদিন যেভাবে বাউন্সার সামলালেন তিনি তাতে বাবুল সুপ্রিয়র উপর মোদী-শাহর ভরসার জায়গাটা আরও পোক্ত হল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.