মাস খানেক আগে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। রাহুলকে তিনি বলেছিলেন, একটা কথা শুনে রাখুন গোটা দেশের বিজেপি-র আসন যদি কমেও যায়, বাংলায় বাড়বেই। আপনার-আমার ইচ্ছে-অনিচ্ছে দিয়ে আটকাতে পারবেন না।
সোমবার বাংলায় যখন চতুর্থ দফার ভোট গ্রহণ পর্ব চলছে, তখন রাজ্য বিধানসভায় বসে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডকে সেই একই মর্মে রিপোর্ট দিলেন বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান। এ দিন সর্বভারতীয় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তথা ওয়ার্কিং কমিটির বর্ষীয়ান নেতা গুলাম নবি আজাদ ফোন করেছিলেন মান্নানকে। বাংলায় ভোট কেমন হচ্ছে জানতে চান তিনি। সূত্রের খবর, সেই সঙ্গে গুলাম নবি এও জানতে চান যে, বাংলা থেকে কটি আসন পেতে পারে বিজেপি?
কংগ্রেস সূত্রের খবর, মান্নান সাহেব গুলাম নবিকে খোলাখুলিই বলেন, উনিশের ভোটে বাংলায় বিজেপি কম বেশি দশটি আসন পেতে পারে। এখনও পর্যন্ত ভোটের যা গতিবিধি তাতে সেই ধারনাই তৈরি হয়েছে তাঁর। তবে এখানেও থামেননি বিরোধী দলনেতা। গুলাম নবিকে তিনি বলেন, পরিস্থিতি অনেকটাই ৭৭ সালের মতো। লোকজন খুবই চুপচাপ। তৃণমূলের বিরুদ্ধে সব স্তরে মানুষের প্রবল অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। ভিতরে ভিতরে মনোভাব যদি ৪২ বছর আগের মতই হয়ে থাকে, তা হলে বিজেপি-র আসন সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বলা যাচ্ছে না। প্রসঙ্গত, ৭৭ সালে বিধানসভা ভোটে ২৩১ টি আসন পেয়েছিলেন বামেরা।
গুলামের সঙ্গে কথোপকথন বা তাঁকে রিপোর্ট দেওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করা বলে মান্নান সাহবে বাইরে কিছু বলতে চাননি। তিনি বলেন, দলের অভ্যন্তরীণ আলোচনা কী হয়েছে তা বাইরে বলার জন্য নয়।
তবে বাস্তব হল, বাংলার রাজনীতিতে পোড় খাওয়া এই নেতার মত কংগ্রেসের মধ্যে কিন্তু সংখ্যালঘু নয়। খোদ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রও ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, লোকসভা ভোটে বাংলায় পুরোদস্তুর মেরুকরণ হয়েছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে এ পরিস্থিতির জন্য তিনি তৃণমূলকেই দায়ী করেছেন। ঘরোয়া আলোচনায় প্রদেশ সভাপতি স্পষ্টতই বলছেন, বাংলায় হাতে ধরে বিজেপি-র আসন বাড়িয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
একই সঙ্গে প্রদেশ নেতৃত্বের ক্ষোভ রয়েছে বাম তথা সিপিএমের উপরেও। কারণ তাঁদের মতে, ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটের পর থেকে যদি কংগ্রেস-বাম জোটকে টিকিয়ে রাখা যেত, যদি নিয়মিত ও ধারাবাহিক ভাবে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন কর্মসূচি গ্রহণ করা হতো, তা হলে বিজেপি-র বাড়বাড়ন্ত আটকানো যেত। বরং তৃণমূল বিরোধী ভোটের সিংহভাগ বাম-কংগ্রেস জোট পেতে পারত। জোট না হওয়ায় বাংলার রাজনীতির দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হল।
সোমেনবাবুরাও মনে করছেন, বাংলায় ভোটাররা এ বার খুবই চুপচাপ। এমনিতে গ্রামে শহরে যে ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করেছে তৃণমূল তাতে কে কাকে ভোট দিচ্ছে তা বলা পরের কথা, কোনও আলোচনাতেই যেতে চাইছে না। তা ছাড়া তাঁদের এও মত হল, অতীতে ২০০৯ সালে ঠিক যেমন বামেদের উপর অসন্তুষ্ট হয়ে বহু বামপন্থী মানুষ তৃণমূল ও কংগ্রেসের জোটকে ভোট দিয়েছিলেন, এ বার তৃণমূলের প্রতি একদা সহানুভূতিশীল বহু মানুষ এ বার বিজেপি-কে ভোট দিতে পারেন। কারণ, স্থানীয় স্তরে তৃণমূল নেতাদের আচরণ, ব্যবহারে তাঁরা ঘোর অসন্তুষ্ট।
তৃণমূল অবশ্য এ ব্যাপারে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে দলের এক মুখপাত্র বলেন, দিদি তো প্রচারে বলছেন, বাংলায় বিজেপি-সিপিএম-কংগ্রেস সবাই এক, জগাই-মাধাই। ফলে ওঁরা এমন সম্ভাবনার কথা বলবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। বরং এ বার গত বারের থেকে বেশি আসন পাবে তৃণমূল।