তৃতীয় দফায় মালদা জেলার দুই আসনেই ভোটগ্রহণ। এদিন দুই কেন্দ্রের প্রচারে তিনটি সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর মধ্যে মালদহ উত্তর কেন্দ্রের সামসিতে একটি জনসভায় মমতার মঞ্চে উপস্থিত এক তৃণমূল নেতাকে নিয়ে মারাত্মক অভিযোগ তুলল বিরোধীরা। বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম সকলেই ওই সমাবেশ মঞ্চের ছবি নিয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছে। সব বিরোধীদেরই দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর মঞ্চে হাজির থাকা মহম্মদ ইয়াসিন কুখ্যাত মাফিয়া। খুন, ডাকাতি-র একাধিক অভিযোগে জেলাখাটা ইয়াসিনকে পাশে নিয়ে ভোটের প্রচার নির্বাচনে সন্ত্রাসের সম্ভাবনা বাড়াচ্ছে বলে দাবি বিরোধীদের।
মালদার রতুয়া ২ নং ব্লকের বাহারাল অঞ্চলের সাহাপুর গ্রামের বাসিন্দা মহম্মদ ইয়াসিন। খুন, ডাকাতি-সহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে বহুবার জেল খাটা আসামি ইয়াসিন। কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী তাকে মঞ্চে রেখেছেন যাতে, সে ভোটের দিন বুথ দখল করতে পারে। এখন থেকেই বিরোধীদের হুমকি দেওয়া শুরু হয়েছে। পুলিশ আমাদের কোনও কথাই শুনছে না। নির্বাচন কমিশনকে আমরা জানিয়েছি।”
একই অভিযোগ বিজেপিরও। জেলা বিজেপির দাবি, ইয়াসিন এক সময়ে আরএসপি করত। মোয়াজ্জেম হোসেন জেলা সভাপতি হওয়ার পরে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেয়। কয়েক বছর আগে কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরি মন্ত্রী থাকার সময়ে রতুয়ায় তৃণমূলের সভায় মহিলা নেত্রীর উপরে হামলা চালায় ইয়াসিন। সেই সময়ে জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ প্রতিভা সিং বক্তৃতায় তার নাম না নেওয়ায় মঞ্চের উপরেই মারধর করে ইয়াসিন। মঞ্চের উপরে ফেলে মারা হয় প্রতিভা সিংকে। এর পরে বন্দুক উঁচিয়ে গুলি করে মারার হুমকিও দেয়। এক পুলিশ অফিসার কোনও ভাবে প্রতিভা সিংকে রক্ষা করেন। পরে মালদা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি ছিলেন প্রতিভা সিং।
এর পরে গ্রেফতারও হয় ইয়াসিন। খুন, ডাকাতির নানা মামলায় জেল খাটে বছর দু’য়েক। জেল থেকে বের হওয়ার পরে ফের তৃণমূলের সক্রিয় নেতা হয়ে ওঠে। স্ত্রী এখন জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ।
জেলা বিজেপি সভাপতি সঞ্জিত মিশ্র-র বক্তব্য, “পঞ্চায়েত ভোটে রতুয়ায় বাহারালে বন্দুক উঁচিয়ে ভোট করায় ইয়াসিন। ওকে বাইরে রেখে লোকসভা নির্বাচনও অবাধ হওয়া সম্ভব নয়। আমরা অনেক আগেই পুলিসের কাছে ইয়াসিনকে গ্রেফতার করার আবেদন জানিয়েছি। পুলিশ কোনও উদ্যোগ নেয়নি। এখন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এক মঞ্চে ইয়াসিন। এই ছবিই রতুয়া এলাকায় ভয়ের পরিবেশ তৈরি করবে।”
ইতিমধ্যেই বামেরাও ওই ছবি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে। এনিয়ে মালদহ জেলার তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরি বলে, “আমি বামনগোলায় দলীয় কর্মসূচিতে ছিলাম। সামসির সভায় কে মুখ্যমন্ত্রীর মঞ্চে উঠেছে তা আমি বলতে পারব না। আমি কোনও ছবিও দেখিনি।”