একথা সবাই জানেন দেশভাগের সবচেয়ে বড় শিকার দুই জাতি – বাঙালি ও পাঞ্জাবী। পুরো অবিভক্ত বাংলা রাজ্যকে পূর্ব পাকিস্তানে পরিণত করার ভয়াবহ অশুভ পরিকল্পনা মুখ্যতঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্যই সফল হয় নি। এছাড়া ১৯৪৬ সালে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চলার সময়ে মুসলিম লিগ সরকারের নিঃস্পৃহ ভূমিকাও বাঙালি হিন্দুদের মনে এই আশঙ্কা এনেছিল যে, তারা পূর্ব পাকিস্তানে ভালভাবে থাকতে পারবে না। যারা পূর্ব পাকিস্তান ও পরবর্তীকালে বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় সংখ্যালঘু হবার কারণে শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতিত হবার কারণে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই ভারতে সত্তর বছর ধরে বসবাস করলেও অদ্যাবধি নাগরিকত্ব পান নি। তাদের এই অসহায় অবস্থার জন্য ভারত সরকার ও রাজ্য সরকারের উদাসীন মানসিকতা দায়ী ছিল। এতকাল ধরে যেসব রাজনৈতিক দল কেন্দ্রে ও রাজ্যে সরকার গড়েছিল, তারা সেকুলারিজমের নামে ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করতে গিয়ে হিন্দু স্বার্থ পুরোপুরি উপেক্ষা করেই গেছে। বাংলায় বিশেষ করে মতুয়াদের (এক নমঃশূদ্র সম্প্রদায়) করুণ ও অসহায় অবস্থা দেখলে চোখে জল চলে আসে, যারা বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে এলেও এতদিনেও নাগরিকত্ব পান নি।

১৯৬০ দশক থেকে পূর্ব পাকিস্তান থেকে একদল নমঃশূদ্র (এদেরই মতুয়া বলা হয়) ভয়াবহ অত্যাচারের শিকার হয়ে পশ্চিমবঙ্গে চলে আসতে বাধ্য হয়। হিন্দু হবার জন্যই এদের এরূপ অত্যাচারের শিকার হতে হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের কোনও শাসক দল কোনওদিনই এদের স্বার্থ দেখেন নি, শুধু রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করে ছুঁড়ে ফেলেছেন। ধর্মকে আফিম মনে করা সিপিএম সরকার থেকে আজকের তৃণমূল সরকার – কেউই এদের নাগরিকত্ব পাইয়ে দিতে তেমন আগ্রহ দেখান নি। কিন্তু এদের ব্যবহার করে ক্ষমতায় আসতে বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছেন। এদেরই ভোটে কংগ্রেসকে হারিয়ে কমিউনিস্টরা ক্ষমতায় আসে, একইভাবে তৃণমূল দলও সিপিএম সরকারকে হঠিয়ে এদেরই ভোটে ক্ষমতায় এলে কি হবে, এদের নাগরিকত্ব পাইয়ে দেবার ব্যাপারে লজ্জাজনক অবস্থান দেখিয়েছেন। এখনও এরাঁ যাতে নাগরিকত্ব না পায়, সেজন্য কি কংগ্রেস, কি সিপিএম, কি তৃণমূল – সব দলই একের পর এক মিছিল বের করে চলেছে এই আইনের বিরোধিতা করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.