তিনি তো তাঁর ছায়াকেও বিশ্বাস করেন না!
এখানে তিনি মানে আর কেউ নন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর বক্তা? তিনিও অন্য কেউ নন তাঁরই একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সহকর্মী।
মমতা সম্পর্কে এই ধরনের ধারণা রাজনৈতিক মহলে নতুন নয়। তাঁর সৌরমণ্ডলে আজ যিনি তাঁর নিকটতম গ্রহ বুধ, পান থেকে চুন খসলেই তিনিই হয়ে যেতে পারেন বিলুপ্ত প্লুটো! মমতার স্বভাবের এই বিশেষ দিকটিকে কেউ দোষ বলতে পারেন আবার কেউ যদি বলেন, কড়া শাসনের লাগাম বেঁধে দল পরিচালনার জন্য এটাই তাঁর বিশেষ গুণ, সম্ভবত তাহলেও খুব একটা ভুল হয় না।
সে যাই হোক, গোল বাঁধে যখন এই অবিশ্বাস প্রবণতা, সোজা কথায় সন্দেহ বাতিক, দলের গণ্ডি পেরিয়ে দেশের মধ্যে ঢুকে পড়ে।
পুলওয়ামা কাণ্ডের পরে পাকিস্তানকে ভারতের প্রত্যাঘাত, বলা ভাল পাক-আশ্রিত জঙ্গীর ওপর ভারতের আঘাত হানার খবরও অবিশ্বাসের চোখেই দেখলেন মমতা। অবশ্য এবার অবিশ্বাসের এমন আতিশয্যে তিনি শুধু একা নন। সামগ্রিক ভাবে বিজেপি নয়, শুধুমাত্র ব্যক্তি মোদির যেন তেন প্রকারেণ বিদায় চেয়ে যাঁরা বকচ্ছপ জোট তৈরি করেছেন তাঁরা সকলেই সন্দেহের চোখে দেখেছেন ভারতীয় সেনার বীরত্বকে। তবে তাঁরা অতটা বেড়ে খেলেননি যতটা খেলেছেন বঙ্গনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সোচ্চারে নিজের অবিশ্বাসের কথা শুধু বলেনইনি, এক ধাপ এগিয়ে প্রমানও চেয়েছেন। প্রমাণ চাওয়ার মধ্যে কি কোনও অপরাধ আছে? অবশ্যই নেই। ফেসবুকে, টুইটারে কত মানুষই তো প্রমাণ চাইছেন। অপরাধ না থাকলেও সাধারণ মানুষের প্রমাণ চাওয়া আর একজন মুখ্যমন্ত্রী তথা দেশের একজন নামী রাজনীতিকের প্রমাণ চাওয়ার মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে। মমতার প্রমাণ চাওয়ার খবর পাক সংবাদ মাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে।
প্রমাণের জন্য একটু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে মমতা কি পারতেন না? সেনা যখন বলছে তারা প্রমাণ দেবে। সঠিক সময় দেবে। ড্রোন থেকে তোলা ছবি তারা দেখাবে। আর একটু ধৈর্য্য কি দেখানো যেত না? এই প্রশ্নের সোজা উত্তর যেত না। ধৈর্য দেখালে দলীয় রাজনীতি হত কী করে! প্রত্যাঘাতের ফলে জনমানসে মোদির ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হচ্ছে, পাবলিকের পালস বোঝা মমতার সে বুঝতে বাকি নেই। রাজ্যে কিছু ফেসবুকার আছেন যাঁরা সঙ্ঘ, বিজেপি ও মোদির বিরোধিতা করে একপ্রকার বৌদ্ধিক শ্লাঘা অনুভব করেন। তাঁদের বাদ দিলে এই রাজ্যেরও সিংহভাগ মানুষ যে জঙ্গিহানার পর মোদির সাহসী ও সদর্থক ভূমিকায় আরও বেশি করে মোদির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন তা অনুধাবন করতে সময় লাগেনি রাজনীতিতে পোড় খাওয়া মমতার। তিনি তাই প্রশ্ন করেছেন, নিজের সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
মমতা এবং মমতারই মতো যাঁরা প্রমাণ প্রত্যাশী তাঁরা যদি আপাতত নিজেদের অনুমান শক্তি কিঞ্চিৎ কাজে লাগাতেন তাহলে বোধায় শান্তি (!) পেতেন।
ইমরান তাঁর ভাষণে স্পষ্ট বলেছেন, পুলওয়ামা কাণ্ডের পর ভারত যে আক্রমণ করেছে তাতে সত্যিই পাকিস্তানের কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কিনা দেখে তবেই তিনি প্রতি-আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পাক বুজিরেআলম ইমরান খানের সাম্প্রতিক বক্তব্য মন দিয়ে শুনলেই একথা জলের মতো পরিস্কার হয়ে যায়। হলে কী হবে! জলে মতো পরিস্কার হয়ে গেলে তো আর ঘোলা জলে মাছ ধরা যায় না! তবে শেষ পর্যন্ত মমতার মাছ ধরায় কী বাধ সাধলেন মাসুদ আজাহারের ভাই স্বয়ং! সম্প্রতি তাঁর যে বক্তব্য প্রকাশ পেয়েছে তা থেকে আপাতত এমনটাই ধরে নেওয়া যেতে পারে।
মাসুদ আজহারের ভাই মৌলানা আম্মারের ভয়েস মেসেজ মমতার প্রশ্নের উত্তর নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বিশ্বে। তিনি তো শাহ মাহমুদ কুরেশির মতোই ভেবেছিলেন বিমান হামলায় গুটিকয় কাক মারা গিয়েছে!
তবে এই ভয়েস মেসেজে মৌলানা আম্মারকে বলতে শোনা যায়, “শত্রু নিজেদের সীমা লঙ্ঘন করে একটি ইসলামিক দেশে ঢুকে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তারা ইসলামী স্কুলগুলিতে বোমাবর্ষন করেছে।” মৌলানা আম্মার বলেন, ” তারা সংস্থার ( জৈশ-এ-মহম্মদের) কোনও হেডকোয়ার্টার্স বা গুদামঘরে বোমা ফেলেনি, তারা বোমা ফেলেছে ‘মকরজ’ বা ইসলামী স্কুলে যেখানে শ/য়ে শ’য়ে ছাত্রছাত্রী জিহাদের প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল।” এরপরই ক্ষুব্ধ মৌলানা আম্মার সকলকে জিহাদের জন্য আহ্বান করেন, ঘোষণা করেন “তাই নিজেদের অস্ত্র হাতে তোলো আর শত্রুদের বুঝিয়ে দাও, জিহাদ আমাদের কর্তব্য। আমাদের সীমায় প্রবেশ করে ভারত জিহাদের সূচনা করেছে।”
এই অডিও মেসেজ ছড়িয়ে পড়ার পর তৃণমমূল সুপ্রিমোর তরফে আর কোনও মন্তব্য আসেনি। মনে পড়ে, সার্জিকাল স্ট্রাইকের পরেও বিরোধীরা তার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। সেবারও ক্লোজড ডোরে বিরোধীদের ভিডিও দেখিয়ে তাদের মুখ বন্ধ করেছিল সেনা ও সরকার পক্ষ।
তবু লজ্জা বোধ থাকলে কী আর রাজনীতি হয়! ভোট বড় বালাই! দেশের নিরাপত্তা, সেনার নিরাপত্তা নেহাতই তুচ্ছ বিষয়!
2019-03-07