মতুয়া, বাগদী, বাউরিদের জন্য কল্পতরু মুখ্যমন্ত্রী! নবান্নে ঘোষণা একাধিক প্রকল্পের

বাংলা সফরে এসেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আগামী পরশু তিনি মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষদের সঙ্গে দেখা করবেন এবং তাঁদের ঘরেই খাওয়াদাওয়া করবেন বলে ঘোষণা করেছেন। তার ৪৮ ঘণ্টা আগে, আজ, মঙ্গলবার নবান্নের সভাঘরে মতুয়া-সহ রাজ্যের একাধিক প্রান্তিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের জন্য একগুচ্ছ উপহারের ডালা সাজিয়ে দিলেন।

এদিন মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি ছৌ নাচের শিল্পীদের প্রতিনিধি, বাগদী, বাউড়ি, কীর্তনীয়া সম্প্রদায়েক প্রতিনিধিদের সঙ্গে নবান্নের সভাঘরে বিশেষ বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। তিনি বৈঠকের শুরুতে জানান, “আজ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষকে ডেকেছি। তফসিলি ভাইবোনেরা সমাজের জরুরি সদস্য। বিশেষ করে যাদের আজ ডেকেছি, মতুয়া, বাগদী, নমঃশূদ্র, বাউড়ি, দুলে, মাঝি প্রমুখ।”

এদিন উদবাস্তু মানুষদের বিশেষ পাট্টা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী, জানান আজ ২৫ হাজার জনকে পাট্টা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর আগেও কয়েকলক্ষ পাট্টা দেওয়া হয়েছে। প্রায় প্রত্যেকটি কলোনিকে রেকগনাইজ করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “এই পাট্টাগুলো কিন্তু নিঃশর্ত জমির দলিল। আমি কিন্তু এটা নিয়ে প্রথম আন্দোলন করেছিলাম। এটা একটা বড় কাজ। আমরা দীর্ঘদিন ধরে দেখেছি উদবাস্তু মানুষেরা কী প্রচণ্ড সমস্যায় থাকেন। এমন কোনও উদবাস্তু কলোনি থাকবে না, যাতে কেউ বলে বেআইনি। আমরা সব আইনি করে দিচ্ছি। আপনাদের আর কোনও প্রবলেম হবে না।”

মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, সরকার একটা বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যে আদিবাসীদের জমি কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।

সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষমা করেন, এসসি, এসটি, ওবিসি পরিবারের সমস্ত সদস্য পাবেন সার্টিফিকেট। সেন্ট্রাল গর্ভমেন্ট এর অনেক নিয়ম আছে, এই কাগজ আনো ওই কাগজ আনো। অনেক সমস্যা হয় তাতে। সেন্ট্রাল গর্ভমেন্ট এর নিয়ম তাই রাজ্য গুলোকেও করতে হত।

আমরা এবার নতুন নিয়ম এনেছি এসসি, এসটি, ওবিসি ফ্যামিলিতে একজন কেউ থাকলে সেই ফ্যামিলির সবাই পাবে সার্টিফিকেট। পাশাপাশি তিনি জানান, বেশ কিছু কমিউনিটিকে স্বাস্থ্যসাথী আওতায় আনা হবে।

এর পরে মতুয়াদের নিয়ে আলাদা করে কথা বলেন, “বড়মা যতদিন বেঁচে ছিলেন একরকম ছিল, এখন তো অনেকে উড়ে এসে জুড়ে বসছে। মতুয়াদের বাড়ি আমি প্রথম যাই। মতুয়া ডেভলপমেন্ট বোর্ড করি, সব কিন্তু আমি আসার পরে করা। ওই বোর্ডের জন্য টাকার বাজেট আমরা রাখলাম। মতুয়া ডেভলপমেন্ট বোর্ডের জন্য ১০ কোটি টাকা আপাতত দিচ্ছি।”

মুখ্যমন্ত্রী বাউড়িদের নিয়েও আলাদা করে বলেন, এঁদের কথা কেউ চিন্তা করেনি। ভোটের সময় সবাই বড় বড় কথা বলে বলে দাবি করেন তিনি। জানান, বাউড়ি বা বাগদী– প্রত্যেকটা প্রান্তিক সমাজের জন্য কালচারাল বোর্ড তৈরি করে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, “আমার বাড়িতে যাঁরা কাজ করেন তাঁরাও কিন্তু কেউ বাউড়ি কেউ অন্য সমাজের। তাতে কী। আমি সমাজের অনেককে নিয়ে আসি, মানুষ করি, বড় করি, তাঁদের বিয়েও দিয়ে দিই।”

পাশাপাশি তিনি জানিয়ে দেন, তফসিলি পরিবারগুলো কিন্তু ১ হাজার টাকা করে পেনশন পাচ্ছে। বাংলার আবাস যোজনার আওতায় নিয়ে আসার ভাবনাও রয়েছে তাঁদের নিয়ে। জানালেন, বাংলায় তৈরি হবে কীর্তন অ্যাকাডেমি। ছৌনাচের শিল্পীদের মহড়ার জন্য বিশেষ কমিউনিটি হলের কথাও বলেন তিনি। সেই সঙ্গে জানান ২ লক্ষ যুবক স্বনির্ভর হওয়ার জন্য মোটরবাইক কেনার জন্য বিশেষ সফ্ট লোন পাবেন।

এছাড়াও আরও একাধিক সম্প্রদায়ের কথা ও অভাব-অভিযোগ তাঁদের প্রতিনিধিদের মুখ থেকেই শোনেন মুখ্যমন্ত্রী, আশ্বাস দেন সেসব পূরণ করার। একাধিক পরিকল্পনা নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন তিনি। স্পষ্ট বুঝিয়ে দেন, সাধারণ ও প্রান্তিক মানুষের পাশে তিনি ও তাঁর দল রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.