হিংসা, লাঠালাঠি, খুনোখুনি, মারামারি, অপহরণ, গুলি এখন রাজনৈতিক অলংকার। এই অলংকারকে জড়িয়ে দলগুলি হিংসায় মেতে উঠেছে। এই নির্মম ও জঘন্য অপরাধ থেকে রাজনৈতিক ক্যাডাররা বের হয়ে আসতে পারছে না, এটাই আশ্চর্যের বিষয় ! এই কবে শুধরোবেন নেতারা? প্রতিটি নির্বাচনে বাঙ্গলায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি চরম আকার নেয় কেন? এই প্রশ্ন এখন সকলের। দেশের অন্যান্য রাজ্যে ভোট শান্তিপূর্ণ হলেও একমাত্র ব্যতিক্রম পশ্চিমবঙ্গ। পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি বিগত দিনের বিহারের জঙ্গলরাজকেও হার মানিয়েছে। তাই ঘরে ঘরে মমতা ব্যানার্জি এখন বহুল চর্চিত মুখ্যমন্ত্রী। লজ্জার বিষয় হলো, মমতা ব্যানার্জির দল জঙ্গলরাজের জন্য একশো শতাংশ দায়ী। একথা উনি স্বীকার করতে চান না। ওকে বাঙ্গলার মানুষ সবজান্তা বলেই জানে। অথচ ওর দলের নেতারা কর্মীদের দিয়ে ছাপ্পা ভোট ও ভোটলুট করাচ্ছে, সন্ত্রাস চালাচ্ছে, গাড়ি ভাঙচুর করাচ্ছে, এই নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য নেই। তিনি জেনেও চুপচাপআছেন আর দোষ দিচ্ছেন বিজেপির। তৃণমূল এতো সন্ত্রাসের পরেও যদি ২৩ মে ভোট গণনায় বাঙ্গলার রায় ওর বিপক্ষে যায় তাহলে তিনি অবশ্যই ধরনায় বসবেন এতে কোনো ভুল নেই। উনি বুঝে গেছেন পায়ের নীচে মাটি সরে গেছে। তাই সন্ত্রাস চালিয়ে শেষ কামড়ের চেষ্টা করছেন। এই জন্যই তিনি এখন বেপরোয়া। তিনি । ক্ষমতার লোভে সাধারণ থেকে বিরোধী সকলকেই পায়ে পিষে মারার চেষ্টা করছেন। এ ব্যাপারে অনুব্রত মণ্ডল তাঁর মুখ্য দোসর। এই অনুব্রত তার দলের কর্মীদের মধ্যে পাচনবাড়ি বিলি, নকুলদানা বিলি, গুড় বাতাসা বিলি, খোল করতাল বিলি এবং প্রয়োজনে মাথায় বাড়ি দেবার নিদান দেন। তার এই উস্কানিমূলক কথাগুলি নিয়ে বহুবার মিডিয়ায় আলোকপাত করা হয়েছে কিন্তু অনুব্রতর কোনো হেলদোল নেই বা অনুব্রত শুধরোননি। বরং উল্টে মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ওঁর। মাথায় নাকি অক্সিজেন প্রবেশ করে না। লজ্জার বিষয় হলো, উল্টোপাল্টা বক্তব্যের জন্য এবার তাকে কেন্দ্রীয় বাহিনী নজরবন্দি করেছিল। তা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন ও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পার্টি অফিসে বসেই অন্যের মোবাইল বিন্দাস ব্যবহার করে ভোট প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করেছেন। এই ভাবে কেউ মার দেবে, কেউ সহ্য করবে এই নীতি চলতে পারে না, তাই সব দল কমবেশি পাল্টা আক্রমণ শুরু ররেছে। ভোট এলেই রক্তবন্যা! এই ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে রাজনৈতিক বন্ধুত্বে ভাটা পড়ে। পক্ষপাতিত্ব করে কিছু সংখ্যক কবি-সাহিত্যিক, লেখক-লেখিকা, কলাকুশলী এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন, এমনকী তা হাতাহাতির পর্যায়ে চলে যায়। এটা কখনোই সুস্থ রাজনীতির লক্ষণ। নয়। মানুষ এগুলি কখনোই আশা করেনি। প্রকাশ্য জনসভায় নেতাদের বক্তব্যে শালীনতা থাকা উচিত। প্রতিপক্ষকে গালিগালাজ করলে কর্মীদের মধ্যে হিংসার মনোভাব সৃষ্টি হয়। এতে ভয়ানক আক্রমণের শিকার হচ্ছেন প্রতিবেশী, বন্ধু, ভাই, দাদা, কাকা, মা, বোন সকলেই। সম্প্রতি, চতুর্থদফা নির্বাচনে রাজ্যবাসী দেখেছে কীভাবে সন্ত্রাস চালালো তৃণমূল। প্রতিটি বৈদ্যুতিন চ্যানেলে তৃণমূলের সন্ত্রাসের কথা বারবার প্রচারিত হচ্ছিল। আসলে সত্য কখনো চাপা থাকে না। এতদিন আমরা কিছু মিডিয়াকে তৃণমূলের পক্ষপাতিত্ব করতে দেখেছি এখন তারা তৃণমূলের নিন্দায় সরব হয়েছে। কেন? আসলে ভাওতাবাজের রাজনীতি ও মিথ্যার বেসাতি বেশিদিন চলে না। বাঙ্গলার জনতাজনার্দন এবারে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। আগে মমতা ব্যানার্জির বক্তব্য শোনার জন্য মানুষ মুখিয়ে থাকত, এখন তাঁর বক্তব্য কেউ পছন্দ করেন না, কিন্তু মোদীজীর বক্তব্য মিডিয়া প্রচার করলে সবাই মনযোগ সহকারে শোনেন। কারণ বক্তব্যেই ধরা পড়ে কার পেটে কত বিদ্যা। শিষ্ঠাচার, শালীনতা, ভাষাজ্ঞান, মার্জিত বক্তব্য সবই সুশিক্ষার অঙ্গ। একসময় মমতা ব্যানার্জি বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, রামকৃষ্ণের বাণী বলতেন কিন্তু এখন শুধু মোদীর নামে গালিগালাজ করেন। তিনি বাঙ্গলায় মোদীজীর জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে ছাড়লেন। কথায় বলে, কোনো ভক্ত যদি ভক্তি দিয়ে বা অভক্তিতেও ভগবানকে ডাকেন, তার ডাকে ভগবান অবশ্যই সাড়া দেন। মমতা ব্যানার্জির আকুল আহ্বানে সাড়া দিয়ে মোদীজী বাঙ্গলায় সতেরো বারের মতো এলেন। তিনি চুপিচুপি কুর্তা-পাজামা মোদীজীকে পাঠান, আবার রসগোল্লাও পাঠাবেন বলেছেন। শুধু আমরাই অকারণে ভাই-ভাই, বন্ধু-বন্ধু, প্রতিবেশীরা রাজনীতির রঙ গায়ে মেখে হিংস্র হয়ে একে অপরকে খুন করি, গালাগালি দিই, ভোট দিতে দিই না।
রাজনৈতিক ক্যাডারদের বোধবুদ্ধির উদয় হোক এবং সুস্থ রাজনীতি ফিরে আসুক। পাশাপাশি ভোট দানের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা অত্যন্ত জরুরি।
রাজু সরখেল
2019-05-09